মোট পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতি দিন সেগুলি দিয়ে যাতায়াত করেন কয়েক লক্ষ যাত্রী। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন রেলপুলিশ-কর্মী। অভিযোগ, সেই সুযোগেই দমদম স্টেশন হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। মোবাইল চুরি, পকেটমারি তো আছেই, এখন দিনের বেলাতেও বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। অভিযোগ, অধিকাংশ সময়েই ছিনতাইয়ের ঘটনার পরেও পুলিশের দেখা মেলে না। যখন পুলিশ আসে, ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা চলে যায় নাগালের বাইরে।
সম্প্রতি দমদম স্টেশনে পরপর পাঁচটি হার ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে স্টেশনে নিরাপত্তার ছবিটা অবশ্য কিছুটা বদলেছে। ডাউন বনগাঁ লোকাল তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল কয়েক জন কনস্টেবল ট্রেনের দরজার কাছে চলে এলেন। সাদা পোশাকের কয়েক জন পুলিশকর্মীকেও ঘুরতে দেখা গেল প্ল্যাটফর্ম চত্বরে।
তবে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই তৎপরতা মাত্র দিন কয়েকের জন্য। তার পরে আবার সেই আগের ছবিটাই ফিরে আসবে।
যাত্রী নিরাপত্তার এই হাল যে এখনই খুব একটা বদলাবে না, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন দমদম জিআরপি-র পদস্থ আধিকারিকেরাও। তার কারণ, যথেষ্ট রেলপুলিশ-কর্মীর অভাব। জিআরপি সূত্রে খবর, দমদম জিআরপি-তে কনস্টেবলের সংখ্যা ২৫-এর মতো। এঁদের মধ্যে প্ল্যাটফর্মে যাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন ৬-৭ জন। আর ৬ জন সাব ইনস্পেক্টরের মধ্যে স্টেশন চত্বরে থাকেন ৪ জন। অথচ দমদমের মতো গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশনে লোকাল ও মেল ট্রেন ছাড়া চক্ররেলও যাতায়াত করে।
নিত্যযাত্রীরা জানান, চুরি বা ছিনতাই হলে পুলিশের দেখা মেলার আগেই সাহায্যের হাত বাড়ান স্থানীয় হকারেরা। সম্প্রতি পরপর পাঁচটি হার ছিনতাইয়ের পরে হকাররাই দু’জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের এক হকার শিব সাহা বলেন, “রোজকার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অফিসটাইমে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম্য কম থাকে। কারণ, অফিসযাত্রীরা সাধারণত দামি জিনিস সঙ্গে রাখেন না। তাই হার ছিনতাই বা ব্যাগ চুরির ঘটনা বেশি ঘটে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে।” স্থানীয় হকারদের মতে, ওই সময়ে প্ল্যাটফর্মে বেশি পুলিশ থাকলে ছিনতাইয়ের ঘটনা কম ঘটবে।
দমদম স্টেশনের হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে শিয়ালদহ ডিভিশন হকার্স ইউনিয়ন’। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি প্রবীর পাল বলেন, “আমাদের হকার ইউনিয়নের বেশ কিছু সদস্য টিম তৈরি করে স্টেশন চত্বরে টহল দেন। বেশ কয়েক বার তাঁরা মোবাইল চোর বা পকেটমারদের ধরেও দিয়েছেন। তবে নিজেদের কাজ ছেড়ে হকারদের পক্ষে সব সময়ে টহল দেওয়াও সম্ভব নয়।” প্রবীর পালের দাবি, দমদম স্টেশন লাগোয়া বেশ কয়েকটি চোলাইয়ের ঠেক তাঁরা পুলিশের সঙ্গে অভিযান করে তুলে দিয়েছেন। যাত্রী নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য জিআরপি এবং আরপিএফ-এর সঙ্গে একাধিক বার কথাও বলেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার তাপসরঞ্জন ঘোষ বলেন, “দমদমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীর তুলনায় পুলিশের সংখ্যা সত্যিই যথেষ্ট কম। ভবিষ্যতে কর্মী নিয়োগ হলেই দমদম স্টেশনে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে সাদা পোশাকের পুলিশের সংখ্যাও।” |