সম্পাদকীয়...
মানব সম্পদ
নিদারুণ দুঃখরাতে, মৃত্যুঘাতে, মানুষ চূর্ণিল যবে নিজ মর্ত্যসীমা, তখন কী হয়, বা হইতে পারে, সে সকলই অনুমানের বিষয়। অনুমানের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ইহার ভিতর দিয়া মানবিক শক্তির যে গভীর একটি বিজয় সূচিত হয়, তাহা নিশ্চিত। সম্প্রতি, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হইয়াছে। দেখা গিয়াছে, বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসহনীয় কষ্টের ভিতর পাঠাভ্যাস করিয়া অজস্র শিক্ষার্থী ভাল ফল করিয়াছেন। তাহার কিছু কিছু সংবাদ-শিরোনামে আসিয়াছে। এমন আরও অনেক ঘটনা আসে নাই। সেই সকল প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সংগ্রামের কাহিনি একটি আলোকের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে। পরিভাষায়, তাহার নাম মানবসম্পদ। সমাজের যে অংশে এই সকল আলোকগামী শিক্ষার্থীর বাস, যে পরিবেশে তাঁহাদের জীবনযাপন, সেই অংশটির উপর এমন সব পোশাকি পরিভাষার ছাপ কত দূর আসিয়া পড়ে, বলা মুশকিল। অথচ, মানব যে সেই বিপুল প্রতিকূলতার ভিতরেও সম্পদ হইয়া দেখা দিতে পারে, কৃতীদের ফলেই তাহার পরিচয়।
এই ‘মানবসম্পদ’-এর উন্নয়নটি কী ভাবে ঘটিল? অনুসন্ধানে দেখা যাইবে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর পিছনে বিদ্যমান একটি গভীর মূলধন। সামাজিক মূলধন। কখনও সেই মূলধনের নাম সহমর্মিতা। কখনও সেই মূলধনের নাম বিশ্বাস। কখনও সেই মূলধনের নাম প্রত্যয়। সেই মূলধন নিছক অর্থ দিয়া পরিমাপ করিবার নহে। কী ভরসায় কোনও শিক্ষাব্রতী তাঁহার কষ্টার্জিত সঞ্চয় ভাঙাইয়া দরিদ্র পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষার বন্দোবস্ত করেন, সাধারণ জমাখরচের হিসাব তাহার খোঁজ রাখে না। কী বিশ্বাসে কোনও দরিদ্র পিতামাতা সন্তানের পঠনপাঠনের জন্য সাধ্যের অতিরিক্ত বন্দোবস্ত করেন, তাহা সর্বদা জনতার করতালির বিষয় হয় না। কী প্রত্যয়ে কোনও শিক্ষার্থী নিত্যনৈমিত্তিক ক্ষুধার সহিত লড়াই করিয়া পাঠে মন দেন, তাহাও সচরাচর গণমাধ্যমের উজ্জ্বল চক্ষু এড়াইয়া যায়। অথচ, এই কর্মকাণ্ডগুলি চলিতে থাকে। এবং, চলিতে থাকে বলিয়াই শত বিপর্যয় সত্ত্বেও মানুষের চৈতন্য, তাহার আলোকগামী গতিটি রুদ্ধ হয় না।
ইহাই, প্রকৃত অর্থে, সামাজিক মূলধন যাহা যাবতীয় প্রতিকূলতার ভিতরেও মানবকে ‘সম্পদ’ করিয়া তুলিবার প্রয়াস করিয়া চলে। সেই প্রয়াসে সর্বদা কত দূর ফল হয়, তাহার খতিয়ান এই বিষয়টির একটি পরিচয় মাত্র, শেষ কথা নহে। এই কর্মকাণ্ডটি সমাজে চালু থাকা জরুরি। কারণ, মানবসম্পদের উন্নয়ন কেবল সরকারি প্রকল্পের বিষয় নহে। যে কোনও সরকারি প্রকল্পই কিছু দূর পর্যন্ত বিষয়টিকে আগাইয়া দিতে পারে, ইহার প্রকৃত চালিকাশক্তি হইল ভিতরের তাগিদ। সেই তাগিদ নির্মিত হয় সমাজের ভিতরে। মানবমনের ভিতরে। সেই তাগিদের বশেই অসাধ্য সাধিত হইয়া থাকে। ক্ষুধা, অভাব, বঞ্চনার ন্যায় অন্ধকার, যথারীতি, থাকিয়া যায়। অথচ, লম্ফের আলোকে মনোযোগী শিক্ষার্থী পাঠাভ্যাস করিয়া চলে। অতঃপর এক সময় চক্ষু মেলিয়া দেখে, পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল...


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.