প্রতিরক্ষা দফতরের তাগিদে নিউকোচবিহার রেল স্টেশনের সূচনা হয় ১৯৬৪-তে। ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধে চিনা সৈন্য অরুসচল সীমান্ত পেরিয়ে অসমের তেজপুর পর্যন্ত চলে এসেছিল। যোগাযোগের অপ্রতুলতা অনুভূত হয়েছিল সৈন্য চলাচল, রসদ যোগান ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তখন ঠিক হয়, মালদহ থেকে অসমের গৌহাটি পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপিত হবে। বিপর্যস্ত হয়ে এক অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে রেল লাইন, রেলসেতু ও অন্যান্য কাজ শুরু হয়ে ১৯৬৪-তে প্রাথমিক পর্যায়ে নিউ বঙ্গাইগাও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। |
কোচবিহার শহরের উত্তরপ্রান্তে কয়েকশো একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল নিউ কোচবিহার রেলস্টেশন। ধীরে ধীরে বিস্তৃতি ঘটেছে রেললাইনের। শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে কোচবিহার রেলস্টেশনটির। সম্প্রতি নিউ কোচবিহার রেল স্টেশনের সামনের উদ্যান কাটিহার রেল স্টেশনের উদ্যানকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে সারা ভারতে সবচেয়ে বড় রেল স্টেশন উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই স্বীকৃতির জন্য ৪,২৯৮ বর্গমিটারের এই ‘উদা্যান’ লিমকা বুক অব রেকর্ডস বইতে স্থান পেয়েছে। নানা রকম গাছপালার সঙ্গে ফোয়ারা, বসবার বেঞ্চ, রাত্রিতে আলোর ব্যবস্থা সহ স্থান পেয়েছে একটি কার্যকাল শেষ হয়ে যাওয়া স্টিম ইঞ্জিন (নং-৩৩৮২)। ভারত সেরা হওয়াতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুকুটে যোগ হল আরেকটি পালক।
|
১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ঘোর অসময়। ভারতবর্ষ স্বাধীন হতে তখনও পাঁচ বছর বাকি। নাৎসি বাহিনী অধিকৃত পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ট্রেব্লিংকা কনশেনট্রেশন ক্যাম্পে ১৫০ জন অনাথ শিশুকে মৃত্যু ভয় জয় করতে শেখালেন এক আশ্চর্য মানুষ। ডা জানুস কোরচখ। সামানে রাখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর। অমলের কাহিনি শুনিয়ে নিরস্ত্র শিশুদের শেখালেন মৃত্যুকে জয় করবার মন্ত্র।
আকাশে যুদ্ধ বিমানের টহলদারি। কখনও বা হিটলারের জয়ধ্বনি তবুও চমকে ওঠেনি কঁচিকাচারা। হিটলারের ইচ্ছায় এই সব কুঁড়িরা ফুল হয়ে ফুটতে পারেনি। কিন্তু বেঁচে থাকতেই তারা বুঝেছিল, মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়। একটা পর্যায় মাত্র। তাই নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শিশুদের মনে কোনও রকম ভয় ছিল না। ছিল না চোখে জল। ক্যাম্পের আদ্রাসা নামের এক কিশোরকে ডা কোরচখ দিয়েছিলেন অমলের ভূমিকা। আর রেবেকা রথ্সচাইল্ড হলেন সুধা। |
ডাক্তার নিজের খ্রিস্টান পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। তিনি বাঁচতে পারতেন। কিন্তু ১৫০টি অনাথ শিশুর সঙ্গে তিনি গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুকে বরণ করে নেন। সেই মৃত্যুপুরীতে কোনও ক্রমে বেঁচে যান রেবেকা। মৃত্যুকে জয় করার অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিল রবিঠাকুরের ডাকঘর। অদ্ভুত ভাবে বেঁচে ফেরা রেবেকা প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও ভোলেননি তাঁর ‘অমল’কে। পরে তিনি মুখোমুখি হন সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের। শোনান তাঁর বন্ধুদের মৃত্যুকে জয় করার সেই কাহিনি। সেই ঘটনাকে অবলম্বন করে নারায়ণবাবু লিখলেন ‘মৃত্যোর্মা অমৃতম’। এই নাটক অবলম্বনে সম্প্রতি এক রবিবার বালুরঘাটের নাট্যমন্দিরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল নাটক ‘পোস্ট অফিস ইন পোল্যান্ড, ১৯৪২’। মৃত্যু চেতনায় আচ্ছন্ন শিশুদের জবানবন্দিতে সৃষ্টি হল সংলাপ। তাদের মুখে শোনা গেল মৃত্যু জয়ের সংলাপমন্ত্র। নাট্যকর্মীদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের এক অনন্য সৃষ্টি দেখালো জলপাইগুড়ির কলাকুশলীরা। এ ভাবেই রবিপক্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হল বালুরঘাটে।
|
শুধুমাত্র একটি কবিতার অনুষ্ঠানেই যেন পাল্টে গেল আবহ। কবি সম্মেলন অনুষ্ঠানে নিজেদের জীবন-যন্ত্রণার অধ্যায়কে কবিতায় আর গানে গানে মেলে দিল চোপড়ার সুভাষনগরের ‘ডিবিএম অন্ধ আশ্রম’-এর পড়ুয়ারা। এক বুক যন্ত্রণার সঙ্গে নানা সমস্যা, জটিলতা আর প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই চলছিল দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের পড়াশুনো এবং অসহায় ও দুঃস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জীবনযাপন। সম্প্রতি ওই দৃষ্টিহীন ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আশ্রমে দিনভর অনুষ্ঠিত হল এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। আয়োজক ইসলামপুরের ইষ্টিকুটুম ও ইচ্ছেডানা সাহিত্য পত্রিকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল নানা আঙ্গিকে, নানা ভাবনায় এই অনুষ্ঠান। শুধু গানেই নয়, দৃষ্টিহীন শিল্পীরা কবিতায়, নৃত্যে এমনকী যন্ত্রসঙ্গীতেও যে কত ঋদ্ধ, অনুভব করলেন দর্শকরা।
|