ফিলিপের শূন্য আসন ‘শূন্য’ নয়, বোঝাল জনতা
তিনি নেই। রয়েছে তাঁর চেয়ারটা। হীরক-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এক মুহূর্তের জন্য কেউ ভোলেনি তাঁকে। কনসার্টে অগুনতি মানুষ যে ভাবে যুবরাজ চার্লসের কথায় ‘ফিলিপ ফিলিপ’ বলে চিৎকার করলেন, তাতেই বোঝা গেল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে ‘মিস’ করছেন সবাই। কারণ এ কয়েক দিন সব অনুষ্ঠানেই রানির পাশে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
আগামী রবিবার ৯১-এ পা দেবেন ফিলিপ। এই মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে লন্ডনের ‘কিং এডওয়ার্ড সিক্সথ’ হাসপাতালে ভর্তি। যুবরাজ চার্লস সেই খবর দিয়ে বললেন, “অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাবা এই আনন্দে থাকতে পারল না। এটাই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আমরা ভরপুর উদ্যমে আনন্দ করলে বাবা নিশ্চয়ই হাসপাতাল থেকে আমাদের গলা শুনতে পাবে।” ছেলের কথায় আর মানুষের উল্লাসে এ বার হাসি ফোটে মায়ের মুখেও।
বাকিংহাম প্যালেসের বাগানে উৎসাহীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
এর পরেই মায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছেলে। বক্তৃতার শুরুতেই চার্লস বলেন, “ইওর ম্যাজেস্টি... মামি...।” সঙ্গে সঙ্গে তুমুল হাততালি। বিমুগ্ধ যুবরাজ এর পর মাকে উদ্দেশ করে বলে চলেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বপ্ন দেখে রানির সঙ্গে বসে যদি চা খেতে পারতাম। বাকিংহাম প্যালেসে তোমার পিকনিকে এসে অনেকের সেই সাধ পূরণ হয়েছে। হীরক জয়ন্তী একটা বিশেষ অনুষ্ঠান। তোমার সঙ্গে আমি রৌপ্য জয়ন্তী, স্বর্ণ জয়ন্তীও কাটিয়েছি। অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার দাদু ষষ্ঠ জর্জ যখন মারা যান, তখন আমার বয়স মাত্র তিন। আর তুমি ২৬-এর তরুণী। তোমার আর বাবার জীবনটা হঠাৎ একেবারে পাল্টে গেল। সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমার স্বার্থত্যাগ আর নিষ্ঠায় ব্রিটিশ হিসেবে আমরা গর্বিত।”
দেশের নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটেও রানির সিংহাসনে অভিষেকের হীরক-জয়ন্তীতে এমন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনা হয়েছে যথেষ্ট। তার জবাবে চার্লস বলেন, “জানি দেশের মানুষ অসম্ভব কষ্ট-প্রতিকূলতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা রানিকে ভোলেনি। তাদের দমাতে পারেনি ঠান্ডা, বৃষ্টিও। পাঁচ দিনের এই অনুষ্ঠানে তাদের প্রাণশক্তি নিঃসন্দেহে অনেক বেড়ে গিয়েছে। ইউরো-সঙ্কট থেকে কয়েক দিনের মুক্তি তো পাওয়া গেল।”
এ বার আসা যাক বাকিংহাম প্যালেসের পিকনিকের কথায়। কাল যেখানে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল এই প্রতিবেদকেরও। আগে সেখানে দেখেছি শুধু আনুষ্ঠানিকতার ঘটা। কিন্তু পিকনিকের আমেজ পুরো আলাদা। পোশাক-বিধি নেই। ছাপোষা চাকুরের পাশেই বসলেন উচ্চপদস্থ ব্যাঙ্ক-কর্তা, শেয়ার-কারবারি।
ঝকঝকে রোদ্দুরভরা সকালে রানির দেওয়া ‘স্পেশ্যাল বাস্কেট’ পেয়ে ভীষণ খুশি ওয়েলস থেকে আসা বয়স্ক দম্পতি জন আর অ্যালেক্স। জন বললেন, “আমার জীবনের সেরা দিন। কোনও দিন ভাবিনি বৌকে এখানে আনার সুযোগ পাব।” আর এক মহিলা উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে জানালেন, রাজপ্রাসাদের বাগানে হঠাৎ রাজকুমার এডওয়ার্ড এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগছে সব কিছু!
এর মধ্যেই হঠাৎ এক বার প্রাসাদের কোনও জানলার পর্দা সামান্য সরে গেল। রানির বাগানে হাজির দশ হাজারের এক জন বলে উঠলেন, “রাজপরিবারের কেউ বোধহয় দেখলেন।” অন্য এক জন বললেন, “নিজেদের বাগানে এত লোক দেখে ওঁদের নিশ্চয়ই দারুণ লাগছে।” এর পর দেখার বিষয় ছিল, বাস্কেট নেওয়ার জন্য স্কুলের বাচ্চাদের মতো উৎসাহীদের হুড়োহুড়ি। বাস্কেটের খাবার নানা ভাবে মনে করাচ্ছিল ভারতকেও। ডায়মন্ড জুবিলি চিকেনে ভারতীয় মশলার অপূর্ব মিশ্রণ ধনে আর ভাজা জিরের গন্ধ। সঙ্গে ভারতীয় বিয়ার তো ছিলই। আর আজ নির্ধারিত সব অনুষ্ঠানের শেষে রাজপ্রাসাদের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ান রানি। তাঁর এক পাশে যুবরাজ চার্লস আর ডাচেস অফ কর্নওয়াল ক্যামিলা এবং আর এক পাশে স্ত্রী ডাচেস অফ কেম্ব্রিজ কেটের সঙ্গে রাজকুমার উইলিয়াম এবং রাজকুমার হ্যারি। টানা পাঁচ দিনের উৎসব শেষে এতটুকু ক্লান্ত মনে হল না ৮৬ বছরের দ্বিতীয় এলিজাবেথকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.