উত্তর কলকাতা
কলকাতা স্টেশন
যাত্রা-যন্ত্রণা
টালিগঞ্জ রানিকুঠি এলাকার বাসিন্দা সপ্তর্ষি বসু। আত্মীয়দের কলকাতা স্টেশনে ছাড়তে এসেছিলেন রাত ৯টা নাগাদ। কিন্তু আত্মীয়দের ছাড়ার পরে স্টেশনের বাইরে এসে বুঝে উঠতে পারলেন না, কী করে বাড়ি ফিরবেন। কারণ, কোনও বাস নেই। আর ট্যাক্সির সঙ্গে কথা বলে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। মিটার ছাড়া ট্যাক্সি যেতে রাজি আছে। কিন্তু ভাড়া দিতে হবে আপ-ডাউন মিলিয়ে ৫০০ টাকা। শেষে শ্যামবাজার পর্যন্ত হেঁটে এসে ট্যাক্সি ধরলেন তিনি। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হল না। সেখানে ট্যাক্সিচালক ভাড়া ছাড়াও ১০০ টাকা বেশি দেওয়ার শর্তে যেতে রাজি হলেন।
সপ্তর্ষিবাবুর মতো একই রকম অভিজ্ঞতা কলকাতা স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করা বহু যাত্রীরই। কলকাতা স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে প্রায় ছ’বছর হতে চলল। প্রথম প্রথম কয়েকটি ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে এক্সপ্রেস, লোকাল মিলিয়ে অনেক ট্রেনই যাতায়াত করে। কিন্তু আজও কলকাতা স্টেশন থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার কোনও উন্নতি ঘটল না।
কলকাতা স্টেশন দিয়ে ২০০৬ নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ক্যানাল ইস্ট রোডের পাশে তৈরি হয় এই কলকাতা বা চিৎপুর স্টেশন। মূলত হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনের চাপ কমাতেই এটি তৈরি হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই এখানে পরিবহণের কার্যত কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে যাত্রীদের মূল ভরসা বলতে ট্যাক্সি। এ ছাড়া দু-তিনটি রুটে কয়েকটি বাস চললেও যত্রীদের অভিযোগ, একটু রাত হয়ে গেলে আর কোনও বাস পাওয়া যায় না।
এ রকমই নিউ টাউন থেকে কলকাতা স্টেশনগামী একটি বাসের চালক জানালেন, কলকাতা স্টেশন থেকে শেষ বাস ছাড়ে রাত সওয়া ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে। পরিবহণ ব্যবস্থার বিশেষ কোনও ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হয় ট্যাক্সির উপর। পরিবহণের এই বেহাল দশায় এক শ্রেণির ট্যাক্সিচালক নিজেদের মর্জিমতো ভাড়া চান বলে যাত্রীদের অভিযোগ। বেশ কিছু যাত্রী জানালেন, এখান থেকে ট্যাক্সি ধরলে সাধারণত মিটারের তুলনায় বেশি টাকা চান চালকেরা। আর একটু রাত বাড়লেই আপ-ডাউন মিলিয়ে ভাড়া হাঁকেন ট্যাক্সিচালকেরা।
এখানকার ট্যাক্সি ইউনিয়নটি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত। ইউনিয়নের সম্পাদক সরওয়ার খান দিনের বেলা বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও বলেন, “সাধারণত রাতেই বেশি দূরত্বের কোনও জায়গায় যেতে হলে আপ ও ডাউন মিলিয়ে ভাড়া চাওয়া হয়। কারণ অত রাতে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর পর খালি ট্যাক্সি নিয়ে আবার স্টেশনে ফিরতে হয়।” যদিও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “কোনও ট্যাক্সি এ ভাবে আপ-ডাউনের ভাড়া নিতে পারে না সে যে ইউনিয়নেরই ট্যাক্সি হোক না কেন। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে খুব শীঘ্রই কলকাতা স্টেশন থেকে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ খোলা হবে।”
বাসের সংখ্যা বা রুটও বেশ কম। নিউ টাউন-কলকাতা স্টেশন, সোনারপুর-কলকাতা স্টেশন, সুভাষগ্রাম-কলকাতা স্টেশন ছাড়া সোনারপুরের জন্যই একটি বাস রয়েছে। রয়েছে হাওড়া এবং সাঁতরাগাছি থেকে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত কয়েকটি ভলভো বাস। আগে কলকাতা স্টেশন থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জুলপিয়া পর্যন্ত ২৫৭ রুটের একটি বাস চলত, কিন্তু সেটি বেশ কয়েক মাস হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, যে ক’টি বাস চলে সেগুলি সংখ্যায় যথেষ্ট কম। তা ছাড়া, অন্যান্য জায়গার বাস একেবারেই নেই। এ ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যে ক’টি বাস রয়েছে, সেগুলি ছাড়াও হাওড়া এবং সাঁতরাগাছি থেকে বেশ কয়েকটি ভলভো বাসের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। রাজারহাট থেকেও বাসের ব্যবস্থা আমরা করব। একই সঙ্গে চেষ্টা করব শহরের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে কলকাতা স্টেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.