গত কয়েক বছরে মে মাসের গড়বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৩০-১৫০ মিলিমিটার। এ বছর মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১২-১৪ মিলিমিটার। সামান্য বৃষ্টির জেরে একবিন্দু জল নেই খাল, বিল, পুকুরে। জলাভাবে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাটের। মে মাসের শেষে পাট গাছের উচ্চতা আড়াই ফুটে পৌঁছে যায়। সেক্ষেত্রে এ বছর পাট গাছ বেড়েছে মাত্র এক ফুট বা তারও নিচে। বৃদ্ধি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি তাপপ্রবাহে ঝলসে যাচ্ছে পাট গাছের পাতা। মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়েই টানা খরার পাশাপাশি তাপপ্রবাহের জেরে মাথায় হাত পড়েছে পাট চাষিদের। কেবল চাষিরাই নন, যা পরিস্থিতি তাতে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত কৃষি দফতরও। এর পরে বৃষ্টি হলেও পাট গাছ পরিণত হতে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাবে। আর তাতে মার খাবে পরবর্তী আমন ও রবি চাষও। একই সঙ্গে কৃষি দফতরের কর্তাদের এটাও ভাবাচ্ছে যে অত্যধিক গরমের সঙ্গে অন্যান্য এলাকায় সামান্য হলেও বৃষ্টি হয়েছে। চাঁচলে কেন বৃষ্টি এ বার বিরূপ সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজতে শুরু করেছেন তাঁরা। চাঁচল মহকুমা কৃষি দফতরের আধিকারিক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ। মহকুমা জুড়েই টানা খরা চলছে। এখন পাট গাছের বৃদ্ধির সময়। জলাভাবে গাছ বাড়ছে না। তাপে পাতা জ্বলে যাচ্ছে। যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ফসলের মরসুমের হিসেব-নিকেশটাই ওলোটপালট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে মহকুমায়। সর্বত্রই এক-আধটু বৃষ্টি হলেও চাঁচলে এই পরিস্থিতি কেন সেই প্রশ্নটাই ভাবিয়ে তুলেছে। কৃষি দফতর সূত্রেই জানা যায়, এ বার পাট চাষ হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি। এপ্রিলে চাষের পরে প্রবল তাপে মাটির উপরিভাগ ফেটে চৌচির। পাশাপাশি তাপে জ্বলে যাচ্ছে পাট গাছের পাতা। একটি পরিণত পাট গাছের উচ্চতা হয় গড়ে ১০ ফুট। যা জুলাইয়ের শেষে হয়। জলাভাবে এখন পাট গাছ যতটা লম্বা হয়েছে তাতে হিসেবমতো ১০ ফুট লম্বা হতে জুলাই মাস পেরিয়ে যাবে। তাও বৃষ্টি হলে। ফলে বৃষ্টি না হলে পাট চাষে মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চাষিদের। আবার বৃষ্টি হয়ে পাতা সজীব হয়ে গাছ বেড়ে পাট চাষে ক্ষতি এড়ানো গেলেও সমস্যা মিটবে না। কেননা পাট গাছ পরিণত না হলে প্রয়োজনীয় ফাইবার ও সঠিক উৎপাদন মিলবে না। পরবর্তী আমন চাষের কথা ভেবে অপরিণত পাট গাছ কাটলে তো খরচের পুরোটাই জলে যাবে চাষিদের। তাই এবার পাট ওঠার পর পেরিয়ে যাবে আমনের মরসুম। যার প্রভাব পড়বে পরবর্তী রবি চাষেও। এই অবস্থায় রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা মহকুমার চাষিদের। হরিশ্চন্দ্রপুরের চাষি বাসুদেব মন্ডল এ বছর ১২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “বোরো চাষে এবার সেচের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। পাট চাষে প্রত্যেক চাষির ভরসা বৃষ্টির জল। কোনও চাষির পক্ষেই শ্যালো চালিয়ে জলসেচ করে পাট চাষ করা সম্ভব নয়। যা পরিস্থিতি তাতে অধিকাংশ চাষিরই পথে বসা ছাড়া পথ নেই।” চাঁচলের চাষি নজুরল ইসলাম বলেন, “এর আগে আমন ধানেরও দাম না মেলেনি। সরকারি দামে ক’জন চাষি আর ধান বেচার সুযোগ পেয়েছেন। আশা ছিল পাট চাষে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে। সেই আশাও শেষ হতে বসেছে।” |