|
|
|
|
|
|
|
মূল্যবান সংকলন ও প্রদর্শনী |
প্রসঙ্গ শ্রীরামকৃষ্ণ |
অপরাহ্ণ ছয়টা। শ্রীম দোতালার ঘরে বসিয়াছেন মাদুরে, পূর্বাস্য। অনেকগুলি ভক্তও বসিয়া আছেন। সতীশবাবু প্রবেশ করিলেন। শ্রীম আহ্লাদে তাঁহাকে কাছে বসাইলেন। ইনি ‘বসুমতী’ প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রীরামকৃষ্ণের পরম ভক্ত উপেন্দ্রবাবুর ছেলে। সতীশ আজ এসেছি একটা প্রার্থনা নিয়ে। মাসিক বসুমতীতে ঠাকুরের কথা বের হলে লোকের খুব উপকার হয়।...শ্রীম সে তাঁর ইচ্ছা। আমাদের ইচ্ছায় তো কাজ হবে না, তিনি ইচ্ছা না করলে। আমরা তো কতদিন থেকে ভাবছি আর একটা পার্ট বের করলে হয়। কিন্তু হয়ে উঠছে কই?’ শ্রীম-দর্শন-এর চতুর্থ ভাগে আছে এই ছবি। ১৯২৪-এর ঘটনা। ‘সচিত্র মাসিক বসুমতী’র বয়স তখন দুই। তার পরে এ পত্রিকায় শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পরমহংসকে কাছে থেকে দেখার কথা দিয়ে আঁকা ছবি সেখানে ছড়ানো ছিল এত কাল। শ্রীরামকৃষ্ণের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সচিত্র মাসিক বসুমতী থেকে লেখাগুলি একত্র করল রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, শ্রীরামকৃষ্ণ প্রসঙ্গ নামে প্রায় বারোশো পাতার এক সংকলনে। স্বামী চন্দ্রকান্তানন্দ ও পূর্বা সেনগুপ্তের সম্পাদনায় এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১৩২৯-১৩৭৮ পর্বে বসুমতীতে প্রকাশিত শ্রীরামকৃষ্ণ প্রসঙ্গ-- জীবনী, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, কবিতা। জীবনীর মধ্যে যেমন আছে দেবেন্দ্রনাথ বসু, বিনোদবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপদ মিত্রের লেখা (শেষোক্ত দু’জনের পরিচয় বিশেষ জানা যায় না), স্মৃতিকথায় তেমনই কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীম-র পৌত্র অনিল গুপ্ত। |
|
সঙ্গে চেক শিল্পী ফ্রাঙ্ক ডোরাকের আঁকা সেই চিরচেনা শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রতিকৃতি এবং পত্রিকায় প্রকাশিত নানা দুর্লভ ছবি (সঙ্গে সেখান থেকেই অন্নদা মুন্সীর আঁকা প্রচ্ছদ)। ইতিমধ্যে ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটেই চলছে শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে নানা শিল্পীর ৮১টি পেন্টিং ও ভাস্কর্যের একটি প্রদর্শনী। শুধু প্রতিকৃতি নয়, শ্রীরামকৃষ্ণের প্রেরণা ও দর্শনকে ছবির মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা সেখানে। শিল্পী ও ভাস্করেরা যে ভাবে দেখেছেন শ্রীরামকৃষ্ণকে, তারই প্রকাশ এই প্রদর্শনীতে। রামকিঙ্কর বেজ, যোগেন চৌধুরী, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, পরিতোষ সেন, শুভাপ্রসন্ন, সনাতন দিন্দা, শানু লাহিড়ী, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, নভেন্দু সেন, নিরঞ্জন প্রধান, বিমল কুণ্ডু প্রমুখের কাজ নিয়ে এটি চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। উপরের ছবিটি প্রদর্শনী থেকে, মৃণালকান্তি দাসের আঁকা।
|
সম্মান |
ইতিহাসবিদ সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কলকাতায়, ১৯৪২-এ। সাম্মানিক কলাবিভাগে ১৯৬১-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার পর প্রেসিডেন্সি থেকে এম এ করেন। পরে আইন ও প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশুনো এবং স্বর্ণপদক প্রাপ্তি। শুরু হয় রিসার্চ ফেলোশিপের কাজ। পড়াতে শুরু করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস বিভাগে। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধান হন। কর্মসূত্রে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় জাদুঘর, মহীশূরের এপিগ্রাফিক্যাল সোসাইটি এবং কেমব্রিজ ও আমেরিকার কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে। লিখেছেন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে শতাধিক প্রবন্ধ। সম্প্রতি আশুতোষ শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে ‘ইম্পর্ট্যান্স অব আর্লি ইন্ডিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ইন দি মেকিং অব আ বেটার ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে কৃতী এই মানুষটিকে সংবর্ধনা জানানো হল। ভারতীয় জাদুঘরের সঙ্গে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল নর্থ আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড ক্ল্যাসিকাল স্টাডিজ।
|
|
শতবর্ষে |
|
‘বসু পরিবার’-এ বড় ভাইয়ের চরিত্র ছেড়ে বম্বে চলে গিয়েছিলেন অভি ভট্টাচার্য, বিভূতি লাহা তখন সস্নেহে উত্তমকে ডেকে বললেন ‘শিগগিরি গিয়ে নির্মলদার হাতেপায়ে ধরে বড় ভাইয়ের রোলটা আদায় করো, আমিও বলে রাখছি।’ রাজি হলেন পরিচালক নির্মল দে, কিন্তু শর্ত: তাঁর বাড়ি গিয়ে রোজ সকালে রিহার্সাল দিতে হবে উত্তমকে, দুপুর থেকে আবার স্টুডিয়োয়। ’৫২-য় নির্মল দে’র এই প্রথম ছবিটিই কিন্তু সাফল্য এনে দিল উত্তমকে। প্রথম দিকে ফিল্ম-অভিনয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁকে স্বীকারও করলেন উত্তম। ’৫৩-য় নির্মল দে’র দ্বিতীয় ও উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (সঙ্গের ছবি) আজও অমলিন কমেডি, অভিনয়-গানে জমজমাট বাঙালির মনে। ’৫৪-য় তৃতীয় ছবি ‘চাঁপাডাঙার বৌ’। এই তিনটি ছবি সম্পর্কে সত্যজিতের মত: ‘সবাক যুগের প্রথম দুই দশকের ছবির মধ্যে চিত্রোপযোগী গুণে সবচেয়ে সমৃদ্ধ।’ তিরিশের দশকের গল্পকার এ-মানুষটি সিনেমায় হাত পাকিয়েছিলেন বিমল রায়ের সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে। এ-বছর একশোয় পা দিলেন তিনি, ১৯১৩-য় তাঁর জন্ম ময়মনসিংহে। ২৯ মে নন্দনে দেখানো হবে তাঁর প্রথম দু’টি ছবি, বলবেন সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য’, জানালেন নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল
|
স্মরণসন্ধ্যা |
কেরলের আলেপ্পি জেলার আরকুট্টি গ্রামে ১৯৩৬-এ জন্ম গোপালন বিক্রমন নায়ারের। ‘টেগোর’-এর টানে পড়তে এলেন শান্তিনিকেতনে। ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’, ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ এবং ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় কাজের সূত্রে কলকাতায় বসবাস। জীবনের শেষ আট বছর ছিলেন আনন্দবাজারের চেন্নাই অফিসের বিশেষ সংবাদদাতা। পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি আর ঝোলা ব্যাগ। দেশ-বিদেশের সাহিত্যের তন্নিষ্ঠ পাঠক, ভালবাসতেন ঘুরে বেড়াতে। বাংলার ইতিহাস-ভূগোল ছিল তাঁর নখদর্পণে। বাংলাতেই লিখেছেন দুই ইউরোপের দিনলিপি ও পশ্চিম দিগন্তে, প্রদোষকালে নামে দু’টি বইও। মৃৃত্যু ৩১ মে ২০০৪-এ। নান্দীমুখ সংসদের আয়োজনে ১ জুন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় ম্যাক্সমুলার ভবনে তাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিক স্মরণসন্ধ্যা। এই উপলক্ষে প্রদর্শিত হবে সত্যজিৎ রায়ের একটি তথ্যচিত্র এবং তার উপরে বলবেন এস ভি রামন।
|
গান্ধার |
১৯৮০ এবং ১৯৮১। ‘গান্ধার’ নাট্যগোষ্ঠীর অনুরোধে প্রথমে কন্যা শাঁওলীর সঙ্গে কবিতা পাঠ এবং পরের বার একক গল্পপাঠের অনুষ্ঠান করেন শম্ভু মিত্র। এত দিনে বেরোচ্ছে ওই দু’টি অনুষ্ঠানের অডিয়ো সিডি। ৩ জুন সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমিতে নিজেদের ৫০ বছরের জন্মদিনে দর্শক-শ্রোতাদের জন্য ‘গান্ধার’-এর উপহার। তারারা শোনে না, ভম্মা, নীলাম নীলাম, তখন বিকেল, যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল, কাছের মানুষ-এর মতো একের পর এক মঞ্চসফল নাটক উপহার দিয়ে আসা দলটির কর্ণধার গোরা মিত্র জানালেন, ওই দিন শম্ভু মিত্রের উপরে একটি স্মারক গ্রন্থও উদ্বোধন করবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। অডিয়ো সিডি-র বিক্রয়লব্ধ অর্থ দান করা হবে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে। এ দিকে ২৬ মে শহরে দুটি অভিনব নাটক নিয়ে হাজির হয়েছিল দিল্লির গ্রিন রুম থিয়েটার। দিল্লিতে বহু দিন ধরে বাংলা নাট্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে এই দলটি। রাজধানীতে কিঞ্চিৎ আলোড়ন তোলা ‘বিসমিল্লা’ ও ‘অসুখ’ দেখা গেল তাদের সৌজন্যে ।
|
স্থাপত্য-চিত্র |
রাজনৈতিক কারণে প্রাচীন ‘বঙ্গ’ আজ বহুবিভক্ত। তারই একটি অংশ আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্র। কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অব সোশাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ’-এর সম্পাদক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশের মন্দির, বৌদ্ধ-মঠ, মসজিদ, নানা তীর্থস্থান, শক্তিপীঠ, রবীন্দ্রনাথ ও অন্য মনীষীদের স্মৃতি-বিজড়িত ভবন-সহ বহু স্থাপত্যের ছবি তুলে চলেছেন পাঁচ বছর ধরে। দশ হাজার থেকে বেছে তিনশো ছবি নিয়ে ‘গ্লিম্পসেস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীর (২৮-৩১ মে, ১১-৭টা) আয়োজন করা হয়েছে আইসিসিআর-এ। সহযোগিতায় আইসিসিআর ও মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ। ২৮ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন গণেশ হালুই। আছে ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। প্রদর্শনীটি পরে দুই দেশের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হবে। সঙ্গের ছবিতে রাজশাহির দিঘাপতিয়ার জমিদারবাড়ি, বর্তমানে উত্তরা গণভবন।
|
সত্তা বদল |
সত্তা বদলের নাটক। যেখানে নারী হয়ে যাচ্ছে পুরুষ বা পুরুষ নারী। না, কোনও গিমিক নয়। এ হল ভাব পরিবর্তন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট আটটি নারী ও পুরুষ চরিত্রের এই সত্তা পরিবর্তন নিয়ে ‘উষ্ণিক’-এর নতুন নাটক ‘খেলা ভাঙার খেলা’। যেখানে লাবণ্য বদলে যাবে অমিতে, অমিত লাবণ্যে। ‘বিসর্জন’-এর রঘুপতিকে দেখা যাবে ভৈরবী চরিত্রে। পরিচালক ঈশিতা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিতে সমদৃষ্টি ছিল। যা নারী-পুরুষ বিভেদের ঊর্ধ্বে। এই চরিত্ররা এক জন মানুষের মতাদর্শ, আবেগ বা মূল্যবোধের কথা বলে। যা কখনওই পুরুষগত বা নারীগত নয়। যেমন এলা ও অতীন। একই বিপ্লবের দুটো মুখ। ডাকঘরের অমল কোনও বালক নয়। সে কল্পনাপ্রবণ এক মানুষ। এ ভাবেই সন্দীপ হয়ে ওঠে ক্ষমতালিপ্সু এক মহিলা রাজনীতিক। চেনা ছকের বাইরে রবীন্দ্রনাথের কিছু চরিত্রের এই মনস্তত্ত্ব বদল, চরিত্র পরিবর্তনের নাটকটি দেখা যাবে ২ জুন স্টার থিয়েটারে। সহায়তায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক।
|
কে কোথায় দাঁড়িয়ে |
কী রকম কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র-স্কুলগুলির শিক্ষানবিশরা এক কথায় দেশের ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে বিদেশের শিক্ষানবিশদের কাজের পরিচয় ঘটানো। এই উদ্দেশ্যেই সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই) তাদের ক্যাম্পাসেই আয়োজন করেছে ‘ক্ল্যাপস্টিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর। ১-৩ জুন দেখানো হবে ফ্রান্স, রাশিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, জাপান, তুরস্ক, কিউবা, চিন, আমেরিকা, স্পেন-সহ বিভিন্ন দেশের ২১টি বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের তৈরি ছবি। সঙ্গে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকারদের বেশ কিছু ছবিও। নবীন-প্রবীণ পরিচালকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জমজমাট থাকবে এই তিন দিন। প্রথম দিনেই সংবর্ধিত করা হবে বিশিষ্ট কন্নড় চলচ্চিত্রকার গিরিশ কাসারাভল্লিকে। অন্য দিকে নন্দনে রবীন্দ্র-চলচ্চিত্রোৎসব ৩০ মে-১ জুন, ইন্ডিয়া গ্রিন রিয়েলিটি ও তপন সিংহ ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে। সঙ্গে ছবিগুলির প্রচার-নথিপত্রের প্রদর্শনী। আবার ম্যাক্সমুলারে ২৮, ২৯ ও ৩১ মে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে গ্রিসের থিয়ো অ্যাঞ্জেলোপউলস ও ব্রাজিলের রাউল রুইজ-এর ছবির উৎসব। আয়োজনে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।
|
অমল নেই |
‘যখন ডাকঘর আছে অমল নেই’। রবীন্দ্রনাথের জন্মসার্ধশতবর্ষে যখন পূর্বানুবৃত্তির ঢেউই বেশি তখনই একটু অন্য ভাবে ছোটদের নিয়ে ‘ডাকঘর’-এর শতবর্ষ উদ্যাপনে নামল ‘বিডন স্ট্রিট শুভম’। ছোটদের নিয়ে নাটক করতে করতে সিকি শতক কাটিয়ে দিল এই সংগঠন, তাদের একাদশ নাট্যমেলা এ বার ‘ডাকঘর’-এ নিবেদিত। পঙ্কজ মুন্সীর নির্দেশনায় ছোটদের অভিনয়ে মূল ডাকঘর যেমন থাকছে তেমনই থাকছে শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির এই সময়ের নববিনির্মাণ ‘যখন ডাকঘর আছে অমল নেই’। এ নাটকে মাধব দত্ত আর সুধা, অমল নেই। এ ছাড়াও থাকছে ‘কসবা অর্ঘ্য’, ‘ঋত্বিক’, ‘ষড়ভুজ’-এর প্রযোজনায় শতবর্ষ-ছোঁয়া নাটকটি। রবিবার এই উদ্যাপনের সূচনায় চৈতন্য লাইব্রেরিতে শুভমের ওয়েবসাইটের উদ্বোধন হল, প্রকাশিত হল ‘শুভম বর্ণমালা’-র ডাকঘর সংখ্যা। শুরু হল একটি পেন্টিং প্রদর্শনীরও। উদ্যাপন চলবে ২ জুন পর্যন্ত, চৈতন্য লাইব্রেরি ও মিনার্ভা থিয়েটারে। জুল ভেলানির চলচ্চিত্র ‘ডাকঘর’, আন্দ্রে ওয়াইদার ‘ডঃ কোরজেক’ও থাকছে। থাকছে শাঁওলী মিত্রের একক পাঠ-অভিনয়ে নাটকটি। এ দিকে ‘ডাকঘর’ নিয়ে অনেক দুর্লভ ছবির সমাহারে একটি দেওয়ালপঞ্জি প্রকাশ করেছে সংস্কার ভারতী, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায়। সঙ্গে তারই একটি, ১৯২৫-এ ইতালির মিলান-এ অভিনয়-দৃশ্য। থেকে।
|
চৌরঙ্গী ৫০ |
প্রকাশকের লক্ষ্মী তিনি। আর সেই লক্ষ্মীর সেরা ঝাঁপি সম্ভবত চৌরঙ্গী। এর পরে আর ব্যক্তিটির নাম করা বাহুল্য, তবু তথ্যের খাতিরে উল্লেখ থাক, লেখকের নাম শংকর, বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম বেস্টসেলার লেখক। আশি বছর ছুঁতে চললেন তিনি, এ বার তাঁর চৌরঙ্গী ছুঁল পঞ্চাশ। বাক্ সাহিত্য থেকে ১৯৬২-র জুনে প্রথম প্রকাশিত হয় লেখকের আত্মস্মৃতি-মেশানো উপন্যাসটি। ’৬২-তেই আরও তিনটি সংস্করণ। তার পরে জয়যাত্রা অব্যাহত, এখন চলছে ১১১তম সংস্করণ। অর্থাৎ গড়ে বছরে দুটির বেশি সংস্করণ, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা সাহিত্যে উদ্যাপন করার মতো ঘটনা বই কী! ইতিমধ্যেই সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলা সাহিত্যের পক্ষে সুখবর, জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা উপন্যাসটি বিবিসি রেডিয়োয় স্থান পেয়েছে। সিনেমা তো হয়েছে ঢের আগেই। এ বার উপন্যাসটি ও তার লেখককে নিয়ে ১০ জুন উদ্যাপনের আয়োজন করেছে চৌরঙ্গী-র প্রকাশক দে’জ। পাশাপাশি কলকাতার বাইরে সংস্থার প্রথম বিপণিটি বর্ধমানে উদ্বোধন করে এলেন শংকর, প্রকাশকের লক্ষ্মীই। |
|
|
|
স্মৃতিপটে |
আমার লেখক জীবনের এই দুর্ভাগ্য যে, আমি যাহাদের লইয়া সারা জীবন সাহিত্য করিলাম তাহারা একজনও আমার লেখা পড়িল না।’ লিখেছিলেন জসীমউদ্দিন। নক্সী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট-এর মতো প্রায় কিংবদন্তির স্রষ্টা জসীমউদ্দিনের গায়ে দীর্ঘকাল পল্লিকবি-র তকমা এঁটে আছে। কিন্তু কবিতায় তকমা যাই থাক তাঁর গদ্যে তিনি ধরে রেখেছেন এ শহরের একটা যুগের ইতিহাস। তাঁর সেই সুবিখ্যাত স্মৃতিকথা ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ প্রমুখকে কাছে থেকে দেখার স্মৃতি। পঞ্চাশের দোরগোড়ায় পৌঁছে স্মৃতিকথা লেখার তাগিদ প্রথম অনুভব করতে থাকেন জসীমউদ্দীন। ওই নামে তাঁর একটি ছোট লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫২-র ‘মাসিক বসুমতী’তে। তার পরে জীবনকথা, যাঁদের দেখেছি, স্মৃতির পট, স্মরণের সরণী বাহি স্মৃতিকথায় বাংলা সাহিত্যে একটি অধ্যায় হয়ে আছে জসীমউদ্দীনের নাম। পাণ্ডুলিপিতে যা ছিল ‘একটি গ্রাম্য বালকের আত্মজীবনী’ তা-ই গ্রন্থাকারে হয়ে উঠল জীবনকথা। যাঁদের দেখেছি-র ‘শরৎচন্দ্র’, ‘দীনেশচন্দ্র সেন’-এর মতো স্মৃতিমেদুর শোকভাষ্যের পাশাপাশি নিজের জীবনের স্মৃতিতে জসীমউদ্দীন জানালেন নিজের লেখক জীবনের সূচনাপর্ব, অসহযোগ আন্দোলনের টানে ইংরেজের ‘গোলামখানা’ স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসে কলকাতার সঙ্গে পরিচয়ের কাহিনি, রুজিরোজগারের কঠিন লড়াইয়ের জীবন। তাঁরই স্মৃতিকথাসমগ্র (দে’জ, ৭৫০.০০) প্রকাশিত হল এ বার। পাঁচটি বই-এর সঙ্গে এই সমগ্রে জসীমউদ্দীনের অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত লেখা, সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গের টীকা-ভাষ্য। আছে বেশ কয়েকটি দুর্লভ, অদেখা ছবিও। বইটির সম্পাদনা করেছেন পুলক চন্দ। লেখকের মৃত্যুর সিকি শতক পরে একটি স্মরণীয় প্রকাশনা এই সমগ্র। সঙ্গে দেবব্রত ঘোষের আঁকা কবির প্রতিকৃতি, বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে।। |
|
|
|
|
|
|
|