সোনার দুলের লোভে খুন বালিকাকে
সোনার দুলের লোভে এক বালিকাকে গলা টিপে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবেশী এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই বালিকার নাম রিনা খাতুন (৫)। বাড়ি হরিহরপাড়া থানার মহিষমারা গ্রামে। অভিযুক্ত যুবকের নাম নাসিম শেখ। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “বিস্কুটের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি ইট ভাটায় নিয়ে গিয়ে ওই বালিকার কান থেকে দুল খুলে নেয় ওই যুবক। ওই বালিকা তারপরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় ওই যুবক তখন গলা টিপে তাকে খুন করে।” তিনি বলেন, “তারপরে ইটভাটার মধ্যেই মৃতদেহ ঢুকিয়ে ইট চাপা দিয়ে দেয় এভিযুক্ত যুবক। ইটের ফাঁকেই ওই দুল সে লুকিয়ে রেখেছিল।” এএসপি-র কথায়, “ওই মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই গ্রামবাসীরা এক জোট হয়ে ওই যুবকের বাড়িতে চড়াও হয়। তখন ওই যুবক সোনার দুল গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেয়। পরে গ্রামবাসীরা তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির বন্দোবস্ত করে।” পরে অভিযোগ পেয়ে ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে।
শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মহিষমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী নাসিমা এদিন স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির সামনে খেলা করছিল। সেই সময়ে প্রতিবেশি ‘কাকা’ নাসিম তাকে বিস্কুট দেওয়ার নামে ইটভাটায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই তার কান থেকে দুল খুলে নিতে গেলে নাসিমা কাঁদতে শুরু করে। তখন দু-হাত দিয়ে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে তাকে। অভিযুক্ত যুবককে পরে সেখানেই ঘুরতে দেখে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা কিছু জিজ্ঞাসা করতেই নাসিম ভাটা চত্বর থেকে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীরা ভাটার চুল্লির ভেতরের ইট সরিয়ে নাসিমাকে দেখতে পায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে তারা তাকে দ্রুত স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। পরে হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান নাসিমা মারা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, বহরমপুরে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। নাসিমার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী মেহের আলি শেখ বলেন, “মেয়ের কানে দু’আনা ওজনের সোনার দুল ছিল। ওই দুলের লোভে নাসিম তাকে গলা টিপে খুন করে।”
ভাটা থেকে পালিয়ে এসে নাসিম বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। তার মা কালোবুড়ি বিবি বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এর পরে গ্রামবাসীরা বাড়ির ছাদের টালি সরিয়ে ভিতরে নাসিমকে দেখতে পান। দরজা ভেঙে ঘর থেকে তাঁকে বের করে বেধড়ক মারধর করা হয়। হরিহরপাড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মির আলমগীর বলেন, “ওই মারের চোটে নাসিম খুনের কথা স্বীকার করে। সেই সঙ্গে ভাটায় যেখানে দুল লুকিয়ে রেখেছিল, তাও বের করে দেয়। তবে এর আগেও ওই যুবক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।” এএসপি বলেন, “রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গ্রামবাসীরা ওই যুবককে মারধর করেছে। কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে নেওয়া উচিত হয়নি। ওই যুবক গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের মধুসূদন ঘোষ বলেন, “গ্রামের এক শ্রেণির যুবকদের মধ্যে নেশা করার প্রবণতা রয়েছে। নেশা করার জন্য তারা অসামাজিক যে কোনও কাজ করছে। সচেতনতার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং ও চিকিৎসার প্রয়োজন। স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহায়তায় জেলার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের নিয়ে পাড়া ঘুরে সচেতনতার কাজ করে থাকে। তার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করা যায়, তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।” মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাসের কথায়, “পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে প্রশাসন ওই সচেতনতার কাজ করে থাকে। কিন্তু সচেতনতার পাশাপাশি ওই নেশাগ্রস্ত যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নেশার দ্রব্য যেখানে বিক্রি হচ্ছে, সেই সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য আবগারি দফতর ও পুলিশকেও বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.