একশো দিনের কাজ
এলডিএমকে চিঠি বিডি’ওর, অ্যাকাউন্ট বন্ধে মজুরিও বন্ধ
০০৯ সালে ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু, তারপর গ্রামে ‘সন্ত্রস্ত’ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। ফলে, ‘একশো দিনের প্রকল্পে’র কাজ তেমন হয়নি। স্বাভাবিক ভাবে ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি পাল্টায়। ফের গ্রামে একশো দিনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু, বছর দু’য়েক লেনদেন না-হওয়ায় ওই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে কাজ করেও মজুরি পাচ্ছেন না কয়েকশো গরিব মানুষ (ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই একমাত্র মজুরি জমা পড়ার কথা)। এ ঘটনা এক সময়ের ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ শালবনির গড়মালের। পরিস্থিতি দেখে জেলার লিড-ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার অরবিন্দ মহাপাত্রকে চিঠি লিখেছেন শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস। জানা গিয়েছে, ইউবিআইয়ের সাতপাটি শাখায় যাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদেরই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুরুতে সাতপাটি শাখার ম্যানেজার অমলেন্দুবিকাশ সামন্তের কাছে চিঠি লিখেও সমস্যা সমাধানের আর্জি জানাতে চেয়েছিলেন বিডিও। কিন্তু, ওই শাখা চিঠি নেয়নি বলেও অভিযোগ।
কেন? অমলেন্দুবাবুর বক্তব্য, “শুনেছি বিডিও-অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে আমি ওই চিঠি পাইনি।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন লেনদেন না-হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। যাঁদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের অনেকেরই অ্যাকাউন্ট ফের খোলাও হয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, মূলত গড়মাল পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দহ, নোনাশোল, ভাতমোড় ও তার আশাপাশের এলাকার মানুষই একশো দিনের কাজের মজুরি পাওয়ার জন্য সাতপাটি শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। দহতে ২৯১ জনের জবকার্ড রয়েছে। নোনাশোলে ২৩৮ ও ভাতমোড়ে ৩৩৬ জনের জবকার্ড রয়েছে। শালবনির এই সব এলাকা মেদিনীপুর বিধানসভার অন্তর্গত। কাজ করেও মজুরি না-মেলায় স্থানীয় মানুষের সমস্যার কথা মেনে মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করারও ব্যবস্থা করতে হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, একশো দিনের প্রকল্পে গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন ২১টি প্রকল্পের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২ হাজার ৯৪৪ জন এই প্রকল্পে কাজ করতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককেই জবকার্ড দেওয়া হয়েছে।
এক সময় গড়মাল এলাকাতেও মাওবাদীদের প্রভাব ছিল। ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর গোদামৌলিতে খুন হন পশুপতি সিংহ ও রহিম পাতর নামে দুই সিপিএম নেতা-কর্মী। দলীয় এক বৈঠকে যোগ দিতে মোটকবাইকে ভাদুতলায় আসার পথে তাঁদের গুলি করে খুন করা হয়। পশুপতিবাবু ছিলেন গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতেরই প্রধান। তাঁর মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন প্রধান পদটি শূন্য ছিল। পরে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নিরঞ্জন সিংহই প্রধানের দায়িত্ব নেন। অশান্তির জেরে বছর দু’য়েক ধরে শালবনির বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নয়নের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টায়। ফের এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে শুরু করে। সেই সঙ্গে উন্নয়নের কাজকর্মও শুরু হয়। এখন ৬ মাস লেনদেন বন্ধ থাকলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু, পুনরায় অ্যাকাউন্ট চালু করতে গিয়েই গ্রাহকেরা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ।
একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও যাঁরা মজুরি পাননি, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অলোক নন্দী, শম্ভু সাউ প্রমুখ। তাঁদের বাড়ি দহ-য়। অলোক বলেন, “অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখনও চালু হয়নি।” শম্ভু বলেন, “ব্যাঙ্কে গিয়ে যোগাযোগ করি। অ্যাকাউন্টটি পুনরায় চালু হয়েছে। তবে এখনও মজুরি পাইনি।” স্থানীয়দের সমস্যার কথা মেনে শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, “পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ করার কথা বলেছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” ইউবিআই পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড-ব্যাঙ্ক। জানা গিয়েছে, বিডিও লিড-ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার অরবিন্দবাবুকে চিঠি লেখার পরই এ ক্ষেত্রে ‘তৎপর’ হন কর্তৃপক্ষ। চিঠি পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাতপাটি শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেন অরবিন্দবাবু। তিনি বলেন, “স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ওই শাখায় গ্রাহকদের নামের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে।” জানা গিয়েছে, দু’বছরের বেশি সময় ধরে কোনও অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট ব্যাঙ্কের মূল কার্যালয়ে স্থানান্তর হয়ে যায়। তাই ওই অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.