সম্পাদক সমীপেষু ...
‘মেধাবী’ হওয়ার তাগিদ
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রথম একশো স্থানাধিকারীর মেধা তালিকা প্রকাশের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। এমনিতেই ‘পড়াশোনার জন্য’ কিশোর-কিশোরীদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা প্রায় বন্ধ। এ বার ‘মেধাবী’ হওয়ার তাগিদে তা আরও স্তিমিত হবে। সীমিত পাঠ্যের মধ্যে সহস্র বার আবর্তনের মাধ্যমে খাতায়-কলমে মেধাবী হওয়া যেতে পারে আবার না-ও যেতে পারে। তবে এতে যে বিপুল সময়ের অপচয় হয় সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। যে সময়ে যতটা আত্মস্থ করা যেত তার কিয়দংশ কণ্ঠস্থ করে ধীশক্তির যাচাই কী প্রকারে সম্ভব!
মাধ্যমিক স্তরে যে ক’জন ছাত্রছাত্রী সেরার তালিকায় স্থান পাবে পরবর্তী দু’বছরে তাদের প্রধান চিন্তা হবে কী করে সেই স্থান ধরে রাখা যায় ও আরও এগনো যায়। অভিভাবকরাও হয়তো এ কথা স্মরণ করিয়ে অবস্থা আরও সঙ্গিন করে তুলবেন। অ্যাকোরিয়ামের মৎস্য যেমন ক্ষুদ্র হতে বাধ্য, ওই মেধাবীদের মেধাও তেমনই। তবে হ্যাঁ, কোনও বক্তব্যই সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
শিক্ষাসংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুমনস্তত্ত্ববিদদের মতামত নেওয়া আবশ্যক বলে মনে হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রযোজন।
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যবই পড়তে কী অকারণ হয়রান হতে হয় তা কেবল একজন শিক্ষার্থীই বুঝবে। অগণিত ভুল তথ্যে ভরা সুদৃশ্য বই বাজার ছেয়ে আছে। সাধারণ পরিসংখ্যানও অনেক সময় এক বইয়ের সঙ্গে অন্য বইয়ের মেলে না। পড়া তৈরির সময় বিভ্রান্তির শেষ থাকে না এ সব দিকে কারও নজর নেই। এন সি ই আর টি-র এত ভাল হৃদয়গ্রাহী পাঠ্যপুস্তকের উদাহারণ থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন তার থেকে শিখব না। সিলেবাসের হেরফের, মেধা তালিকার প্রকাশের থেকে অনেক বেশি জরুরি নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক। নিয়ম প্রণেতারা এ কথা যত শীঘ্র বুঝবেন, ততই মঙ্গল।
মা নিষাদ...
রঘুমণি ভট্টাচার্যের ‘মা নিষাদ’ (১৯-৪) পত্রটি পড়লাম। তিনি বাল্মীকি রামায়ণের ‘মা নিষাদ...’ ইত্যাদি শ্লোক প্রসঙ্গে ‘ভ্রান্তি’র উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি এই প্রসিদ্ধ সংস্কৃত শ্লোকটির যে পাঠ লিখেছেন, তাতেই ‘ভ্রান্তি’ আছে। তিনি লিখেছেন ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।/ যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধঃ কামনোহিতম্¶’ এর শুদ্ধ পাঠ বাল্মীকি রামায়ণের বালকাণ্ডের দ্বিতীয় সর্গ এই রকম‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ/ যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্¶’ (শ্লোকসংখ্যা-১৫)।
শ্রীভট্টাচার্য শ্লোকটির বঙ্গানুবাদ না দিয়ে ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ থেকে যে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তাও যথোচিত নয়। যথার্থ পয়ার শ্লোক দুটি হল‘ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চী বসিয়া আছিল বৃক্ষডালে।/ এক ব্যাধ ঐ পক্ষী বিন্ধিলেক নলে¶ (‘বিন্ধিলেক ব্যাধ পক্ষী শৃঙ্গারের কালে’ নয়)। পক্ষীরে বিন্ধিল ব্যাধ শৃঙ্গারের কালে।/ব্যাকুল হইয়া পড়ে বাল্মীকির কোলে।’ (ড. হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘রামায়ণ-কৃত্তিবাস রচিত’ গ্রন্থের তৃতীয় মুদ্রণ, পৃ ৫ দ্রষ্টব্য)। শ্রীরঘুমণি বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘বাল্মীকির কবিত্বলাভ’ নামক কবিতার উল্লেখ করে সেখান থেকেও একটি স্তবক উদ্ধৃত করেছেন। বিহারীলালের ‘বাল্মীকির কবিত্বলাভ’ নামে কোনও স্বতন্ত্র কবিতা নেই। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘সারদামঙ্গল’-এর প্রথম সর্গের নবম স্তবক। উদ্ধৃতি এবং চরণবিন্যাসে ও শব্দলিখনে ভুল আছে। যথার্থ স্তবকটি হল ‘শাখি (‘শাখী’ নয়) শাখে রসসুখে। ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চী মুখে মুখে (‘মুখেমুখে’ নয়)/ কতই সোহাগ করে বসি দুজনায় (দু’জনায়’ নয়),/ হানিল শবরে বাণ/ নাশিল (‘নাশিলে’ নয়) ক্রৌঞ্চের প্রাণ/ রুধিরে আপ্লুত পাখা ধরণী লুটায়।’ (ড. ভবানীগোপাল সম্পাদিত বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গল’, ১৩৭৫ সাল সংস্করণ, পৃ. ১৩৩ দ্রষ্টব্য)। শ্রীভট্টাচার্য মূল ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য না দেখে সম্ভবত ভ্রমে পড়েছেন। ‘বাল্মীকি রামায়ণ’-এর মূল সংস্কৃত শ্লোকটির অনুবাদ এই রূপ‘নিষাদ, তুই চিরকাল প্রতিষ্ঠা লাভ করবি না (অর্থাৎ, চিরকাল পতিত থাকবি)। কারণ, তুই ক্রৌঞ্চমিথুনের একটিকে কামমোহিত অবস্থায় বধ করেছিস।’ (‘বাল্মীকি রামায়ণ’ ‘সারানুবাদ’ রাজশেখর বসু, ষষ্ঠ মুদ্রণ, পৃ ৫)।
কেন এই তুলনা
শিক্ষায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সম্পাদকীয় নিবন্ধে (‘রাজধর্ম’, ১৬-৫) ‘রবীন দেব গিয়াছেন, আরাবুল ইসলাম আসিয়াছেন’ বাক্যটি কেন লেখা হল, বোঝা গেল না। সাম্প্রতিক পরিপ্রেক্ষিতে এই তুলনা কি বিসদৃশ এবং অপমানজনক নয়?
উল্লিখিত নিবন্ধটিতে যে দুই রাজনীতিকের নাম করা হয়েছে, তাঁদের নামগুলি নিতান্তই প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁদের কারও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য এ ক্ষেত্রে অভিপ্রেত ছিল না, কারও প্রতি অসম্মান তো নয়ই। তবু যদি এই তুলনায় কেউ অসম্মানিত বোধ করেন, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.