ফের ই-নিলাম, লেনদেন শুরু
৩৯ মাস বন্ধ থাকার পরে খুলল চা নিলাম কেন্দ্র
টানা ৩৯ মাস বন্ধ থাকার পরে বুধবার ফের খুলল জলপাইগুড়ির চা নিলাম কেন্দ্র। এবং শুরুতেই প্রথাগত পদ্ধতির বদলে বৈদ্যুতিন পদ্ধতির (ইলেকট্রনিক অকশন) নিলামে চায়ের সর্বোচ্চ দর উঠল ১৬৮ টাকা প্রতি কেজি। যা এই নিলাম কেন্দ্রের গত সাত বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। শুধু রেকর্ড গড়াই নয়, এই নিলাম কেন্দ্রটি ফের চালু হওয়া এবং বৈদুতিন নিলাম হওয়ার ঘটনা উত্তরবঙ্গ তথা সার্বিক ভাবে চা শিল্পের কাছে বৃহত্তর বার্তা দেবে বলেই মনে করছেন টি বোর্ডের (চা পর্ষদ) কর্তারা। প্রশাসন ও চা পর্ষদ সূত্রের খবর, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে চাপানউতোরের জেরে জন্মলগ্ন থেকেই জলপাইগুড়ি নিলাম কেন্দ্রটি চা পাতার জোগানের অভাবে ভুগছে। ক্রেতাদের একটা অংশের অভিযোগ ছিল, বিক্রেতারা এই কেন্দ্রে নিলামের জন্য চা পাঠাতে চান না। জেলায় চা বাগানের অভাব না থাকলেও বিক্রেতাদের অনেকেরই মূল আগ্রহ শিলিগুড়ি কিংবা কলকাতা নিলাম কেন্দ্র। তাই ক্রমশ কমছিল ক্রেতার সংখ্যাও। আবার বিক্রেতাদের পাল্টা অভিযোগ, ক্রেতারা সে ভাবে নিলামে আগ্রহী না হওয়ায় দর ভালো ওঠে না। নিয়মিত ব্যবসাও হয় না। এই পরিস্থিতিতে নিলাম কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে নিলাম বন্ধ হওয়ার আগে ক্রেতার সংখ্যা দশেরও নিচে নেমে যায়। একটি নিলামে মাত্র চার জন ক্রেতা উপস্থিত হয়েছিলেন। এ দিন ই-নিলামে সারা দেশের ৯০ জন ক্রেতা অংশ নেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে নিলাম চালু হওয়ার পরে এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ দর ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ বার দর উঠল তার চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের নিলাম শুরুর প্রথম দিন জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। নিলাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র এ দিন নিলামের প্রতীকী সূচনা করেন। প্রথম দিনের লেনদেন দেখে আশাবাদী জলপাইগুড়ির জেলাশাসকও।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তিনি বলেন, “সব মহলের থেকে সহযোগিতা পেয়েই দ্বিতীয় বার নিলাম শুরু করা সম্ভব হয়েছে। প্রথম দিনের কাজকর্ম দেখে মনেই হচ্ছে এই কেন্দ্রের জন্য সুদিন অপেক্ষা করে রয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতেও ক্রেতা, বিক্রেতা, ব্রোকার-সহ সব মহলের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।” ৩৯ মাস পরে বুধবার জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে নিলাম শুরু হওয়াকে কেন্দ্র করে সব মহলেরই আগ্রহ ছিল। এ দিনের নিলামে চা পর্ষদের উপ অধিকর্তা কল্যাণ ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা-সহ ক্রেতা বিক্রেতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চা পাতার অভাবে দীর্ঘদিন নিলাম বন্ধ থাকায় বটলিফ কারখানার মালিকদের সংগঠনের তরফে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে তাঁদের উৎপাদিত চা পাতা নিলাম করার অনুমতি চাওয়া হয়। চা পর্ষদের পরামর্শদাতা ডঃ এইচ কে দ্বিবেদী জানান, দেশের অন্য পাঁচটি নিলাম কেন্দ্রের মতো জলপাইগুড়িতেও বৈদুতিন-নিলাম ব্যবস্থা চালুর জন্য গত বছর থেকেই সেখানে পরিকাঠামো ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। ফলে বটলিফ কারখানাগুলি যখন ওই কেন্দ্রে নিলাম চালু করার আর্জি জানায়, পরিকাঠামো তৈরি থাকায় তাদের বৈদ্যুতিন নিলাম ব্যবস্থায় অংশ নিতে বলা হয়। তারা রাজি থাকায় পর্ষদের তরফেও সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। দ্বিবেদী আরও জানান, চা পাতা বিক্রি ও পাওনা নিয়ে সমস্যার জন্যই বটলিফ কারখানাগুলি এই কেন্দ্রে ‘ইনস্ট্যান্ট’ বা ‘দ্রুত’-নিলাম ব্যবস্থস্তা চালুর দাবি জানিয়েছিল। উল্লেখ্য, প্রথাগত নিলাম ব্যবস্থার চেয়ে এই দ্রুত-নিলাম ব্যবস্থায় চা বিক্রি ও পাওনা মেটানোর সময় প্রায় অর্ধেক কমে যায়। সে ক্ষেত্রে চা বিক্রেতারা ক্রেতাদের চায়ের দামের উপরে নগদে একটা ছাড় দেয়। জলপাইগুড়ির নিলাম কেন্দ্রেও সেই দ্রুত-নিলাম ব্যবস্থা চালুর আর্জি জানিয়েছিলেন বিক্রেতারা। বৈদুত্যিন নিলামেও ক্রেতাদের সেই ছাড় দিতে তাঁরা রাজি হওয়ায় ক্রেতারাও আগ্রহী হন। দু’পক্ষের সেই আগ্রহই দ্রত নিলাম কেন্দ্রের দরজা খুলতে সাহায্য করে। এই ঘটনা সার্বিক ভাবে দেশের চা শিল্পের কাছেও একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরবে বলে মনে করছে পর্ষদ। উত্তরবঙ্গে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতিতেও তা গতি জোগাবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের। নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন নিলামের জন্য প্রায় ১৩ হাজার কেজি চা পাতা আনা হয়েছিল। তবে বটলিফ কারখানা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত বাগান থেকেও চা আনা হয়েছিল। সকাল সাড়ে এগারোটার সময় নিলাম শুরু হওয়ার মিনিট পঁয়তাল্লিশের মধ্যেই যে পরিমাণ চা এসেছিল তার সবটাই বিক্রি হয়ে যায়। নিলাম কেন্দ্রের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক কমল ভট্টাচার্য বলেন, “এ দিন খুব ভাল সাড়া মিলেছে। নিলাম কেন্দ্রের পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগী হওয়ার জন্য জেলাশাসককে ধন্যবাদ। এখনও চা মরসুম পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়নি। মরসুম শুরু হয়ে গেলে আরও বেশি পরিমাণে চা আসবে কেন্দ্রে।” সেদিকেই তাকিয়ে পর্ষদ ও চা শিল্পমহলও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.