রাজনীতি বন্ধে কলেজ পরিচালন
সমিতিও ঢেলে সাজার পরিকল্পনা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির দাপটের মধ্যেই কলেজ পরিচালন সমিতিগুলিকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর দাবি, সরকারের লক্ষ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে যথাসম্ভব রাজনীতি-মুক্ত রাখা। বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের পরে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কিছু কথা হয়েছে।
ক্ষমতায় এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দলতন্ত্র-মুক্ত করতে উদ্যোগী হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার ঠিক পরেই এ ব্যাপারে একটি কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। কমিটির সুপারিশে বাম আমলের ব্যবস্থা ভেঙে সেনেট-সিন্ডিকেট, কোর্ট-কাউন্সিল থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ গিয়েছেন ছাত্রপ্রতিনিধি ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা। শিক্ষাজগতের অনেকেরই ধারণা, ওই ধরনের ব্যক্তিদের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়ন্ত্রিত হত আলিমুদ্দিন থেকে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিচালন সংস্থাগুলিতে মূলত বিভিন্ন পদাধিকারী বা তাঁদের মনোনীত শিক্ষকদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও এটুকুকেও যথেষ্ট সদর্থক পদক্ষেপ বলে শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।
কিন্তু রাজ্যের কলেজগুলির ক্ষেত্রে এখনও এই ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়নি। যদিও গত এক বছরে কোথাও ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, কোথাও বা পরিচালন সমিতির দখল নিতে বেশ কিছু কলেজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ভাঙড় কলেজে শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বহু ক্ষেত্রে আবার ঝগড়া-মারামারি তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করে বলেছেন, রাজনীতির লড়াইয়ে কলেজগুলিকে যেন জড়ানো না হয়। এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর ওই হুঁশিয়ারির প্রভাব রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
কলেজ পরিচালন সমিতিতে রাজনীতির ‘বেনো জল’ ঢোকে কোন পথে? সাধারণ ভাবে রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো প্রতিনিধিদের মারফত। কোথাও কোথাও এঁদের বাইরেও পঞ্চায়েত বা পুরসভার প্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ কিংবা দলীয় নেতাদের পরিচালন সমিতির প্রধান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইনে কলেজ পরিচালন সমিতির গঠন সংক্রান্ত যে বিধি রয়েছে, তাতে ব্যতিক্রমী কোনও সংশোধন হয়নি। ভাঙড় কলেজে আরাবুল শিক্ষিকা-নিগ্রহ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক যা-ই থাক, তাঁর মতো রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা আদৌ কেন পরিচালন সমিতিতে থাকবেন, সেটাই সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে বড় প্রশ্ন।
কলেজগুলি রাজনীতি-মুক্ত হবে কী ভাবে?
ব্রাত্যবাবু এ দিন শুধু বলেছেন, “কলেজ পরিচালন সমিতিগুলিকে ঢেলে সাজার কথা ভাবা হচ্ছে। যে কোনও দলের কায়েমি স্বার্থকে দূরে সরিয়ে যাতে এটা করা যায়, তার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।” এ দিনই বেসু-তে একটি অনুষ্ঠানেও তিনি বলেন, “আমাদের সরকার শিক্ষাকে রাজনীতির উপরে রাখার চেষ্টা করছে।”
বিশিষ্ট শিক্ষকদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, শুধু পরিচালন সমিতি ঢেলে সাজাই কলেজকে রাজনীতি-মুক্ত রাখার দাওয়াই নয়। তাঁদের একাংশের প্রশ্ন, সরকার যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি-মুক্ত করতেই চায়, তবে কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় দলের নেতাদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? শিক্ষামন্ত্রী এই ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। শুধু বলেছেন, “সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে।”
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী এ দিন বলেন, “কলেজে কোনও ভাবেই রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে পারবে না, এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব বলে মনে হয় না। তবে দেখতে হবে ব্যবস্থাটা কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগের আমলের মতো এখনও তো দেখছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির সব লোকজনের অনুপ্রবেশ ঘটছে।” সেই সঙ্গে তাঁর মত ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই মূলত গোলমাল বাধছে যখন, তখন কিছু দিন ওই নির্বাচন স্থগিত রাখা ভাল।
আবার শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যালের বক্তব্য, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি আমাদের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী। সরকার যদি সেটা দূর করতে চায়, তা হলে কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে আগে তাদের দলীয় প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে নিতে হবে। অতীতের দোহাই দেওয়া চলবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.