মাসে সাশ্রয় ৫৭ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারে
ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত পুরুলিয়ার
রাজকোষের হাল খারাপ। গণবণ্টন ব্যবস্থা সচল রাখতে গিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
এই যেখানে অবস্থা, সেখানে প্রতি মাসে পুরুলিয়া জেলা খাদ্য দফতর ৫৭ লক্ষ টাকা বাঁচাচ্ছে। ভুয়ো রেশন কার্ডের ভূত ঘাড় থেকে নামিয়ে এই অসাধ্য সাধন করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকেই পুরুলিয়ায় এই ‘উলটপুরাণ’ হয়ে চলেছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “প্রতি মাসে দফতরকে গণবন্টন ব্যবস্থা সচল রাখতে ৫৫ কোটি টাকা ও পরিবহণ খরচ বাবদ ১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।” সেখানে কী ভাবে পুরুলিয়া সাশ্রয় করছে? পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ জানান, খাদ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে বারবার ভুয়ো রেশন কার্ড খুঁজে বের করতে বলেছিলেন। সেই কাজটাই ‘কোমর বেঁধে’ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ঠিক করি, গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করে মৃত অথবা অন্যত্র চলে যাওয়া এবং ভুয়ো ব্যক্তিদের রেশন কার্ড বাতিল করা হবে। গত দুর্গাপুজোর আগে থেকে গণশুনানি শুরু হয়। গ্রামবাসীই ভুয়ো কার্ড ধরিয়ে দেন।”
জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠক জানান, প্রথমে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা গ্রামে গিয়ে শুনানি করেন। পরে রেশন দোকানগুলির ‘শপ-লেভেল মনিটরিং’ কমিটিও একই ভাবে ভুয়ো কার্ডের তালিকা তৈরি করে। পাশাপাশি, রেশন ডিলারেরাও খাদ্য দফতরে ভুয়ো নামের তালিকা জমা দেন। সাধনবাবু বলেন, “এ ভাবে জেলার ২০টি ব্লক এবং তিনটি পুরসভা এলাকা থেকে মোট ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ভুয়ো কার্ড বাতিল করা সম্ভব হয়। জেলার ১,০৮২টি রেশন দোকানের যেখান থেকে যত নাম বাদ পড়েছে, সেখান থেকে বাদ যাওয়া নামের তালিকা অনুসারে রেশনদ্রব্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
আর এতেই হয়েছে অসাধ্যসাধন। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, গণবন্টন ব্যবস্থা সচল রাখতে ওই ২ লক্ষ ৮৩ হাজার রেশন কার্ড পিছু এত দিন দফতরকে মাসে ৫৭ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হত। ভুয়ো কার্ড বাতিলের সৌজন্যে গত নভেম্বর থেকে সেই টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
কোথা থেকে হচ্ছে সাশ্রয়? বর্তমানে রেশন পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটর) এফসিআইয়ের কাছ থেকে কেজি প্রতি চাল ১ টাকা ৪৫ পয়সা দরে কেনেন। আবার এক জন রেশন ডিলার পরিবেশকের কাছ থেকে প্রতি কেজি চাল ১ টাকা ৫৫ পয়সা দরে কেনেন। তিনি বিপিএল গ্রাহক বা অন্নপূর্ণা কিংবা অন্ত্যোদয় যোজনা প্রকল্পের গ্রাহককে ২ টাকা কেজি দরে এই চাল বিক্রি করেন। এফসিআই আবার খাদ্য দফতরের কাছে কেজি প্রতি চালের দাম নেয় ৪ টাকা ৬৫ পয়সা। সে ক্ষেত্রে দফতরকে কেজি প্রতি বাকি তিন টাকা ২০ পয়সা ভর্তুকি দিতে হয়।
জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “এই ভাবে বাজারমূল্যের অনুপাতে হিসেব করে দেখা গিয়েছে, প্রতি মাসে আমাদের ৫৭ লক্ষ টাকা বেঁচে যাচ্ছে।”
খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, “এটা হয়ে থাকলে পুরুলিয়া জেলা অবশ্যই ব্যতিক্রমী কাজ করেছে। দফতর এই জেলাকে বিশেষ ভাবে স্বীকৃতি দেবে। কী ভাবে এটা সম্ভব হল, তা দেখতে আমি সেখানে যাব।”
কার্ড বাতিলে প্রতিরোধ কি আসেনি? ভুয়ো রেশন কার্ড বাদ দেওয়ায়, ওই কার্ড দেখিয়ে এত দিন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা লোকজন ডিলারদের উপরে হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় ধর্মঘটে গিয়েছিল পুরুলিয়ার ‘এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’।
প্রশাসন ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করে ফের রেশন চালু করে। পাশাপাশি, ভুয়ো কার্ড বাদ দেওয়ার কাজও চলে। রেশন ডিলারদের জেলা সংগঠনের সম্পাদক নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, “ভুয়ো কার্ড বাতিলে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছি। আমাদের দাবি, রেশন ব্যবস্থা ঢেলে সেজে সবাইকে নতুন রেশন কার্ড দেওয়া হোক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.