হাবরায় চালককে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রহৃত পুলিশ
ট্রাকের রেষারেষিতে প্রাণ গেল বালকের
দু’টি ট্রাকের রেষারেষির জেরে প্রাণ গেল চতুর্থ শ্রেণির এক বালকের। উত্তেজিত জনতা দু’টি ট্রাকে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। মারধর করা হয় ঘাতক-ট্রাকের চালককে। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রহৃত হন এক পুলিশ কর্মীও। বুধবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাবরার ফুলতলা এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে রাস্তার ধারের গাছে আম পাড়তে উঠেছিল স্থানীয় দুই বালক। নীচে দাঁড়িয়ে আম কুড়োচ্ছিল আরও দু’জন। তাদেরই এক জন উত্তম ঢালি (১০)। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিমেন্ট-বোঝাই একটি ট্রাক পিষে দেয় তাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাবরা-শিমুলপুর সড়ক ধরে রেষারেষি করতে করতে তীব্র গতিতে শিমুলপুরের দিকে যাচ্ছিল ট্রাক দু’টি। ফুলতলার কাছে এক পথচারীকে ধাক্কা মারার উপক্রম করে একটি ট্রাক। রাস্তার পাশে সরে গিয়ে কোনও ক্রমে বেঁচে যান ওই ব্যক্তি। এরপরেও গতি কমায়নি ট্রাক দু’টি। সিমেন্ট-ভর্তি ট্রাকটি ধাক্কা মারে উত্তমকে। পিছনেই ছিল অন্য খালি ট্রাকটি। সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে বিদ্যুতের খুঁটিতে। তার ছিঁড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরে পিছনের ট্রাকের চালক-খালাসি গাড়ি থেকে নেমে পালায়। ঘাতক-ট্রাকের চালক সিরাজ মণ্ডলকে ধরে ফেলে জনতা। এ দিকে, উত্তমের দেহ তখনও চাকার তলায় পড়ে। সিরাজকে দিয়ে গাড়ি চালু করিয়ে কিছুটা পিছনে আনা হয়। উদ্ধার করা হয় উত্তমকে। কিন্তু তত ক্ষণে প্রাণ হারিয়েছে ওই বালক। চালককে বেঁধে মারধর শুরু করে জনতা। ট্রাক দু’টিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেন বাসিন্দারাই।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। কিন্তু খালাসিকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। মারধর করা হয় এক জনকে। জখম ওই চালক ও পুলিশকর্মীকে পরে ভর্তি করা হয়েছে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গেলেও স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধের সামনে পড়ে বেশ খানিক ক্ষণ কাজ শুরু করতে পারেননি তাঁরা। পরে ‘বুঝিয়ে-সুঝিয়ে’ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন দমকল-পুলিশ আধিকারিকেরা। পরে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির লোকজন এসে লাইন মেরামতি করেন। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “একটি ট্রাক অন্য একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘাতক-ট্রাকের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” পুলিশ জানায়, ধৃত সিরাজ মণ্ডলে বাড়ি বারাসতে।
আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা।
এ দিকে, দুর্ঘটনার পরেই অবরোধ শুরু করেছিল জনতা। ঘণ্টা দু’য়েক অবরোধের জেরে তীব্র যানজট হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর মণ্ডল, অনুপ রায়ের বক্তব্য, “এই রাস্তা দিয়ে পণ্য-বোঝাই ভারি ট্রাক বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে। মাঝে মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই আছে। আমাদের দাবি, এই রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন এলাকার মানুষ।
এলাকাটি মছলন্দপুর ২ পঞ্চায়েতের অধীন। প্রধান পার্থ বসুও এ দিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “রাস্তাটি ভাল হওয়ার পর থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে। ট্রাকগুলি সব সময়েই রেষারেষি করে। যার জেরে প্রাণ গেল ছেলেটির। পূর্ত দফতরের কাছে জানানো হবে, যাতে রাস্তায় ডিভাইডার তৈরি করা হয়।” রাস্তাটি ১২ ফুট চওড়া। পাশে আরও তিন ফুট করে মাটির ফুটপাথ। প্রধান বলেন, “দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই একটি কাঠের মিল আছে। রাস্তার পাশে কাঠ রাখায় রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে রাস্তার পাশে কাছে রাখতে দেওয়া হবে না।”
উত্তম পড়ত ফুলতলা নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে। তার বাবা উজ্জ্বলবাবু ঠিকাদারের শ্রমিক। বাইরে বাইরে থাকেন। উত্তমের ঠাকুমা সুলতাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “কত বার বারণ করেছিলাম, আম পাড়তে যাস না। শুনল না। কখন বেরিয়ে গিয়েছে, দেখতেও পাইনি।”
সদ্য সন্তানহারা মা ইতিদেবী মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। বহু কষ্টে বলেন, “মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর জন্যই এই দুর্ঘটনা। ভগবান যেন ওদের শাস্তি দেন।”

ছবি: শান্তনু হালদার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.