পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ
বরাদ্দ কেন পড়ে, খতিয়ে দেখবেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব
রাদ্দ অর্থের অধিকাংশই পড়ে রয়েছে। অথচ কাজ এগোচ্ছে না। গত বছর মার্চ পর্যন্ত জেলায় পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ২ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৭৫ টাকা পড়েছিল। চলতি বছর মার্চের শেষেও ওই একই পরিমাণ টাকা পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ, গত আর্থিক বছরে পর্ষদের অর্থ খরচ করা যায়নি। কেন এই পরিস্থিতি, তা খতিয়ে দেখতে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসবেন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অসিতবরণ চক্রবর্তী। সঙ্গে থাকবেন রাজ্য প্রশাসনের আরও দুই কর্তা। চলতি মাসের ১০ তারিখ মেদিনীপুর আসার কথা ছিল অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের। সেই মতো পর্ষদের আওতায় থাকা এ জেলার ব্লকগুলিকে একটি রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই কর্মসূচি আপাতত স্থগিত থাকছে। সোমবার মহাকরণে এক বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) উত্তম পাত্র, জেলার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ। সেখানেই জানানো হয়, ১০ তারিখের বদলে মে মাসের অন্য কোনও দিন জেলায় আসতে পারেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “কী কারণে বরাদ্দ অর্থ খরচ হচ্ছে না, কোথায় সমস্যা, তা খতিয়ে দেখতেই বৈঠক হবে।”
গত এক বছরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের পড়ে থাকা অর্থ সে ভাবে খরচ হয়নি বলেই অভিযোগ। বরাদ্দ অর্থে যে সব প্রকল্পের কাজ হওয়ার কথা, সেগুলি শিকেয় উঠেছে। আবার যে ক’টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) জমা পড়েনি। ফলে সমস্যা বেড়েছে। জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতেই বেশি পরিমান অর্থ পড়ে রয়েছে। যেমন লালগড় (বিনপুর ১), বেলপাহাড়ি (বিনপুর ২), মেদিনীপুর সদর ব্লক। লালগড়ে পর্ষদের বরাদ্দ প্রায় ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। বেলপাহাড়িতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। মেদিনীপুর সদরে প্রায় ২০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে। কেন এই অবস্থা? জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, এ জন্য দায়ী মাওবাদী সমস্যা। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ অর্থে জঙ্গলমহলে মূলত সেচের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাওবাদী সমস্যার জন্য অধিকাংশ ঠিকাদার সংস্থা মাঝপথে কাজ ছেড়ে দেয়। জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে আর এই এলাকায় কাজ করা সম্ভব নয়। এখন মাওবাদী সমস্যা নেই। তা-ও কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি জেলা পরিষদের অর্থ, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। দেখা যায়, জঙ্গলমহলে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে যেমন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ডের (বিআরজিএফ) বরাদ্দ অর্থ রয়েছে, তেমনই রয়েছে সজলধারা প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ টাকা।
২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ২ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৭৫ টাকা পড়েছিল। চলতি বছরের মার্চের শেষেও ওই পরিমাণ টাকাই পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি, বিআরজিএফের ২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৮ টাকা, পশু পালন ও দুগ্ধ প্রকল্পের ১৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৫৯ টাকা, ইন্দিরা আবাস যোজনার ২২ লক্ষ ৪ হাজার ৪৭০ টাকা, সজলধারা প্রকল্পের ৫৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪২ টাকাও পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা অর্থ নিয়ে যে প্রশাসনের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের প্রস্তাবিত বৈঠক থেকেই স্পষ্ট। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এক সময় পঞ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ অর্থে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া, ধেড়ুয়া ও তার আশপাশ অঞ্চলে ২৩ টি নলকূপ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। তখন প্রতিটি নলকূপের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু, কাজ শুরু পরপরই মাওবাদী সমস্যা সামনে আসে। পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ হওয়ায় কাজ এগোনোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে, ১১টি নলকূপ তৈরি হলেও বাকি ১২ টি এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাও আর এই কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। কারন, বছর তিনেক আগে যে নলকূপ তৈরির জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এখন ৬০ হাজার টাকার কমে সেই নলকূপের কাজ করতে চাইছে না ঠিকাদার সংস্থা। সংস্থার যুক্তি, এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামেরই দাম বেড়েছে। কী ভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠে বরাদ্দ অর্থে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজ করা যায়, তা খতিয়ে দেখতেই মেদিনীপুরে আসবেন পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ইউসি কেন জমা পড়েনি, কাজ এগোতে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কী ভাবেই বা সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়, বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.