নিজের দুসরাকে ‘নাকল’ বল নাম দিয়েছেন নারিন
‘সচিনের কীর্তির কথা ভেবে ইডেনে বল করব না’
বারের আইপিএলে সফলতম তিন বোলারের তিনি এক জন। গড়ে দ্বিতীয়। আর কেকেআর বোলিংয়ের কোহিনুর। সেই সুনীল নারিন একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন বুধবার দুপুরে।

প্রশ্ন: ন’টা ম্যাচ খেলার পরেও আপনার রহস্য কাটছে না। প্রথম দিন যা বলছিল লোকে, এখনও তাই বলছে। মিস্ট্রি বোলার!
নারিন: ওটায় মন দিচ্ছি না। আমি জানি কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এখন আমার দায়িত্ব হল কী করে কেকেআরকে জেতানো যায়।

প্র: ব্যাটসম্যানরা বুঝতেই পারছে না আপনার কোন বলটা ভেতরে যাবে, কোনটা বাইরে। এমনকী সৌরভের মতো স্পিন এত ভাল খেলা ব্যাটসম্যানেরও আপনাকে সামলাতে বিস্তর সমস্যা হয়েছিল।
নারিন: আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটা চেষ্টা বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র যোগ করার। আর একটা ঠিক জায়গায় বল করা।

প্র: এটা বেশ মজার নয় কি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসা এক জন স্পিনার যে আইপিএলে এমন ত্রাহি-ত্রাহি ফেলে দিয়েছে? একটা সময় বলা হত ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে স্পিনার তুলতে হলে বোলারদের ঠাকুরদা থেকে ট্রেনিং শুরু করো। কারণ সবাই ফাস্ট বোলার হতে চায়।
নারিন: মজার তো বটেই। স্পিন বোলিং যারা এত ভাল খেলে তাদের দেশে এসে তাদের জন্য সমস্যা করছি, এটা আমার নিজের কাছেও একটা অ্যাচিভমেন্ট। শুধু প্রবলেমটা হল, আধুনিক ক্রিকেটে নিজের কীর্তি নিয়ে বসে থাকলে চলে না। নিয়মিত নিজেকে বদলাতে হয়। নইলে ব্যাটসম্যান দ্রুতই আপনাকে ঠেঙিয়ে আবার হুঁশ ফিরিয়ে দেবে।

প্র: আবার উন্নতি বলতে কোথায়?
নারিন: কেকেআর প্র্যাক্টিসে বড় বড় প্লেয়ারদের কাছ থেকে দেখছি। কালিস, ব্রেট লি, ম্যাকালাম, গম্ভীর। দেখছি এরা কী ভাবে ট্রেনিংয়ে নিজেদের তৈরি করেন। একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান রেখে ক্রমে পরের দিন হয়ে যান ম্যাচ-রেডি। ধরনটা নিতে চেষ্টা করছি।

প্র: আইপিএলে আসার আগে ভেবেছিলেন ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট, গড় মাত্র ১২.৭৩ হতে পারে?
নারিন: স্বপ্নেও ভাবিনি এ রকম সাফল্য পাব। নিজেকে শুধু বলছি পা-টা জমি থেকে তুললে চলবে না। দ্রুতই ছবিটা বদলে যেতে পারে। তাই প্রচণ্ড খেটে উন্নতি করে যেতে হবে।

প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ল্যান্স গিবসের পর গত চল্লিশ বছরে ভয় পাওয়াতে পারে এমন স্পিনার আপনিই প্রথম। স্পিন করাবার ক্ষমতাটা আপনার জিন-এ কী ভাবে এল কে জানে!
নারিন: ত্রিনিদাদে কিন্তু বেশ কিছু ভাল স্পিনার আছে। জগন্নাথ আছে। বদ্রি আছে। গঙ্গা আছে। এদের সঙ্গে লড়াই করে ত্রিনিদাদ টিমে আসাটা সহজ কথা না।

প্র: ত্রিনিদাদে থাকেন। ব্রায়ান লারাকে বল করেছেন?
নারিন: (মুখ উদ্ভাসিত) এক বার লারাকে নেটে বল করেছিলাম। সুযোগ পেয়েছিলাম বলে নিজেকে ধন্য মনে করি। তবে আজও ওকে ম্যাচে বল করার সুযোগ হয়নি।

প্র: শনিবার আপনার সুযোগ হচ্ছে লারার বন্ধুকে বল করার। শ্রী সচিন তেন্ডুলকর।
নারিন: সেটা তো যে কোনও বোলারের স্বপ্ন। শনিবারের চ্যালেঞ্জটার দিকে তাকিয়ে থাকব। আশা করি এগারোয় আমাকে রাখা হবে।

প্র: সচিনকে বল করার মানসিকতাটা কী?
নারিন: মনের জোর হারালে হবে না। টাইট জায়গায় রাখতে হবে। সচিনের কীর্তির কথা যদি মাথায় রেখে বল করি তা হলে চ্যালেঞ্জটা নেব কী করে?

প্র: কয়েকজন ব্যাটসম্যানের নাম বলছি। এদের বল করার কৌশলটা বলুন।
নারিন: হু।

প্র: সহবাগ।
নারিন: সহবাগ খুব কঠিন চরিত্র। ওর সঙ্গে সমীকরণটা খুব সহজ। হয় আপনি মাঠের বাইরে পড়বেন। অথবা সহবাগ প্যাভিলিয়নে ফিরে যাবে। কৌশল হল, টাইট রেখে কয়েকটা ডট বল করে ফেলা। ধরে নেওয়া যায় তখন ধৈর্য হারিয়ে সহবাগ মারতে যাবে। আর তখনই সুযোগটা নিতে হবে।
দ্য টেলিগ্রাফ আয়োজিত ‘আনপুটডাউনেবল ক্রেজি নাইটস’ অনুষ্ঠানে কেকেআরের
পাঁচ তারকা। বাঁ দিক থেকে মনোজ তিওয়ারি, ইউসুফ পাঠান, জাক কালিস, সুনীল
নারিন ও দেবব্রত দাস। অনুষ্ঠানে কালিস বলেন, “টিম যদি এই ধারাবাহিকতা
ধরে রাখতে পারে, মনে হয় প্লে অফ নিশ্চিত।” ছবি: উৎপল সরকার।

প্র: ক্রিস গেইল।
নারিন: ওরে বাবা সাঙ্ঘাতিক প্লেয়ার! মিস-হিটেও বল মাঠের বাইরে ফেলে দেয়। ওকে ক্লোজে রাখতেই হবে। একটু আলগা দিয়েছ কী শেষ।

প্র: সৌরভকে সবাই স্পিনের বিরুদ্ধে এত ভাল বলে। অথচ ইডেনে আপনাকে খেলতে পারছিলেন না।
নারিন: আমার মনে হয় এই প্রথম আমায় খেলছিলেন বলে সমস্যায় পড়ছিলেন। আমি ওঁর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলাম। এত সব ওয়ার্ল্ড ক্লাস ব্যাটসম্যানকে আইপিএলে বল করার সুযোগ পাচ্ছি এটাই ভাগ্যের কথা।

প্র: ৫ মে যখন ১৯তম ওভারে আপনি বল হাতে নেন, পুণের জেতার জন্য চাই ১২ বলে ২১ রান। হাতে চার উইকেট। এই অবস্থায় আপনি মাত্র চার রান দেন। আপনি কি জানতেন যে ওই ওভারটার ওপর শুধু ম্যাচ নয়, শহরের জনজীবনের অনেক কিছু নির্ভর করে ছিল?
নারিন: আইডিয়া ছিল যে উনি (সৌরভ) কলকাতার বলে সমর্থন পাবেন। তবে সেটা এত সমর্থন হতে পারে বুঝতে পারিনি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ যখন মারমার করছিল তখন আমি ওকে একটু ফুলার বল করতে শুরু করি। গতিরও তারতম্য করছিলাম। সে জন্যই বোধহয় অ্যাঞ্জেলোর অসুবিধে হচ্ছিল।

প্র: আপনার যে বলটা উল্টো ঘোরে তার কী নাম রাখা উচিত? দুসরা?
নারিন: আমি বলি ‘নাকল’ বল।

প্র: সেটা কী?
নারিন: ক্যারম বলের মতোই।

প্র: ক্যারম বল আর ‘নাকল’ বলে তফাতটা কী?
নারিন: কাছাকাছি। তবে এই বলটা নিয়ে আমি বিস্তৃত আলোচনায় যেতে চাই না।

প্র: ইডেনে সে দিন আপনার হাতে বল তুলে দিয়ে গম্ভীর কী বলেছিলেন?
নারিন: কিছুই না। গম্ভীর এমন এক জন ক্যাপ্টেন যিনি বোলারকে চাপে ফেলা দূরে থাক, আরামে রেখে দেন। উনি শুধু আস্তে করে জিজ্ঞেস করেন কী ফিল্ড চাই? মাঠের বাইরেও কখনও চাপ দেন না।

প্র: ক্যাপ্টেন আর তার প্রধান স্পিনারের মধ্যে মাঠের বাইরের সম্পর্কটা খুব জরুরি। আপনাদেরটা তৈরি হতে কত দিন লাগল?
নারিন: খুব দ্রুতই তৈরি হয়ে যায়। প্রথম যে দিন কেকেআর শিবিরে ঢুকি, গম্ভীর সহ সবাই এত ভাল ভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন যে তখনই বাড়ি থেকে অনেক দূরে এটা একটা বাড়ি মনে হতে শুরু হয়েছিল। গম্ভীর এক জন দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেন।

প্র: এই যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ, খ্যাতি... বাড়ির লোক কী বলছে?
নারিন: সবাই খুব খুশি। ত্রিনিদাদে কিছু ম্যাচ লাইভ দেখাচ্ছে। কিছু ডিলেড। বাবা সে দিন ফোন করে বললেন, গোটা দেশ তোমার সঙ্গে আছে। তুমি শুধু পা-টা জমি থেকে তুলে ফেলো না।

প্র: শাহরুখের সঙ্গে কথা হল?
নারিন: হ্যা।ঁ উনি দারুণ খুশি। এত হাসিমুখে তাকালেন যে আমারই মনটা ভরে গেল।

প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসে শাহরুখের নাম জানতেন?
নারিন: আমার বান্ধবী জানত। আমার গার্লফ্রেন্ড শাহরুখের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। ওর প্রচুর ছবি দেখেছে।

প্র: বান্ধবীকে আলাপ করিয়ে দেবেন না এসআরকের সঙ্গে?
নারিন: নিশ্চয়ই দেব। সদ্য এসেছে ইন্ডিয়াতে। প্রথম সুযোগেই ওকে খুশি করে দিতে হবে।

প্র: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে মিস করবেন গম্ভীরকে?
নারিন: টিমের অনেককেই করব। আমার ক্যাপ্টেন ওকে তো করবই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.