বরখাস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার আরও দশ পাইলট
জনগণের টাকা ‘অপচয়’ বরদাস্ত করবে না কেন্দ্র
য়ার ইন্ডিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে কড়া অবস্থান নিল কেন্দ্রীয় সরকার। বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ আজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, জনগণের টাকায় সংস্থা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা না-দেওয়াটা বরদাস্ত করা হবে না। অচলাবস্থা তৈরির অভিযোগে আজ সংস্থার আরও দশ জন বিমানচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিমানচালকদের ধর্মঘটকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। তবে এত কিছু সত্ত্বেও এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি বুধবারেও।
সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানচালকদের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং পদোন্নতি নিয়ে কিছু মতবিরোধের জেরে গত কাল থেকে আচমকা কাজে আসা বন্ধ করেছেন ইন্ডিয়ান পাইলটস গিল্ডের সমর্থক বিমানচালকেরা। সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স সংযুক্তিকরণের আগে এঁরা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালক ছিলেন। সরকারি ভাবে অবশ্য ধর্মঘটে যাওয়ার কথা বলেননি এই বিমানচালকেরা। কারণ দেখিয়েছেন ‘অসুস্থতার’।
আচমকা এই বিক্ষোভের জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সংস্থার বিমান পরিষেবা। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। গত কালই দশ বিমানচালককে বরখাস্ত করে গিল্ডের অনুমোদন বাতিল করেছিলেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। তার পরেও আজ দিল্লি-সিঙ্গাপুর, দিল্লি-নিউ ইয়র্ক, দিল্লি-হংকং, মুম্বই-নিউ জার্সি, মুম্বই-জেড্ডা এই ৫টি আন্তর্জাতিক রুটের উড়ান বাতিল করতে হয় চালকের অভাবে। দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরে উড়ান ধরার জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য যাত্রীদের সঙ্গে সংস্থার কর্মীদের বচসা পর্যন্ত হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, উড়ান সম্পর্কে কোনও তথ্যই তাঁরা পাচ্ছেন না। ফলে হয়রানি বাড়ছে। অন্য সংস্থার উড়ানে তাঁদের জায়গা করে দিতেও বিমান সংস্থা উদ্যোগী নয়।
বহু উড়ানই বাতিল। মুম্বই বিমানবন্দরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। ছবি: পি টি আই
আর তার পরেই কড়া অবস্থান নেয় কেন্দ্র। জনগণের টাকায় সংস্থা চালিয়ে জনগণকেই হেনস্থা করা যে কোনও মতেই মেনে নেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট জানান বিমানমন্ত্রী। বলেন, “ধর্মঘটীদের উচিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া।” এয়ার ইন্ডিয়ার পুনরুজ্জীবনে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঢালার যে পরিকল্পনা কেন্দ্র নিয়েছে, তা-ও বাতিল হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইঙ্গিত দেন কর্মী বহর কমানোর। অজিতের কথায়, “এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা যদি না চান যে সংস্থার বিস্তার ঘটুক, তা হলে সরকারও টাকা ঢালবে না।”
ধর্মঘটীরা এখনও তাঁদের অবস্থান নরম না করলেও সরকারের এই কড়া অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের মতে, জনগণের টাকায় দানছত্র যে অনন্তকাল চলতে পারে না, তা দেরিতে হলেও সরকার বুঝেছে। যে কারণে গত কালই সংসদে দাঁড়িয়ে ক্রমশ বেড়ে চলা পেট্রোপণ্যের ভর্তুকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সব রাজনৈতিক দলকে এ ব্যাপারে ভাবতে অনুরোধ করেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে গত কালই হজযাত্রার উপরে ভর্তুকি ১০ বছরের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, এই ভর্তুকির একটা বড় অংশই বিমান ভাড়া, যা পায় রুগ্ণ এয়ার ইন্ডিয়া।
আলোচনা আর অচলাবস্থা
একসঙ্গে চলতে পারে না। পাইলটরা
এখনই ধর্মঘট তুলে যাত্রীদের কাছে
ক্ষমা চান। তিন মাস অন্তর ধর্মঘট
করলে সরকার সাধারণ মানুষের
টাকা এয়ার ইন্ডিয়ায় ঢালবে না।

অজিত সিংহ, বিমানমন্ত্রী

এ দিকে আজই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালকদের ধর্মঘটকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে তা অবিলম্বে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। বুধবার এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দায়ের করা একটি আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি রেবা ক্ষেত্রপাল তাঁর রায়ে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যাত্রী পরিষেবায় যুক্ত কোনও সংস্থার কর্মীরা আচমকা ধর্মঘট করতে পারেন না। সেটা বেআইনি। ‘ইন্ডিয়ান পাইলট্স গিল্ড’-এর সদস্য হিসেবে নথিভুক্ত বিমানচালকেরা তাই এ ভাবে নিজেদের ‘অসুস্থ’ ঘোষণা করতে, বিমান সংস্থার অফিসের মধ্যে বা বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে, অবরোধ করতে পারবেন না।
হাইকোর্টের এই রায়ের পরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলেই এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের আশা। এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্রের কথায়, “আমরা বিমানচালকদের জন্য অপেক্ষা করছি। ওঁরা কাজে ফিরলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব। অন্য কোনও ভাবে পরিষেবা চালু রাখতে গেলে সমস্যা এবং খরচ, দুটোই বাড়বে।” বিমানমন্ত্রী অবশ্য জানান, ধর্মঘটী বিমানচালকেরা কাজে যোগ না-দিলে অবস্থা সামাল দেওয়ার ‘বিকল্প’ ভাবনা তাঁদের রয়েছে। এই সূত্রেই কর্মী বহর কমানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন তিনি।
আজ সংসদেও এয়ার ইন্ডিয়ার অচলাবস্থার প্রসঙ্গ ওঠে। সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত দাবি জানান, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের সমস্যা মেটাতে আরও উদ্যোগী হোক কেন্দ্র। রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ রামচন্দ্র খুন্তিয়াও দাবি করেন, মোটা অঙ্কের সাহায্য পাওয়ার পরেও কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া।
গত কাল ও আজ একের পর এক উড়ান বাতিলের জেরে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়া। ক্ষতির পরিমাণ দৈনিক দশ কোটি টাকা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.