রাজ্যে নতুন নীতি শীঘ্রই
বস্ত্রশিল্পে বিদ্যুৎ মাসুল ছাড়ের ইঙ্গিত
তুন বস্ত্রনীতিতে বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড়কেই লগ্নি টানার জন্য তুরুপের তাস হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য।
‘প্রতিযোগী’ রাজ্যের বস্ত্রনীতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে রাজ্য সরকার দেখেছে, বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড় দিয়েই এই শিল্পে লগ্নি টেনেছে তারা। আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ও আমলাতান্ত্রিক ফাঁস এড়িয়ে শিল্প গড়ার সুবিধাও মিলছে। এ রাজ্যের নতুন নীতিতে সে সব না-থাকলে প্রতিযোগিতার বাজারে লগ্নিকারীদের যে আকর্ষণ করা যাবে না, তা বুঝেছে রাজ্যের ছোট-মাঝারি শিল্প দফতর। তাই একই পথে হাঁটার কথা ভাবছে তারাও।
রাজ্যে পালাবদলের পর ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া নতুন বস্ত্রনীতি তৈরির উপর জোর দেন। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, আগের সরকারের বস্ত্রনীতিটি কার্যত ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আর্থিক বা প্রশাসনিক সুবিধার কথা সেখানে না-থাকায় রাজ্যের রুগ্ণ বস্ত্রশিল্প সেই তিমিরেই থেকেছে। তবে নতুন নীতির প্রসঙ্গে এখনই বিশদে মুখ খুলতে নারাজ মানসবাবু শুধু বলেন, “নীতি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। শীঘ্রই তা প্রকাশ পাবে।”
কিন্তু বস্ত্রশিল্পে লগ্নি টানতে বিদ্যুতে কেন ছাড় প্রয়োজন?
চেম্বার অফ টেক্সটাইল ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র (কোটি) যুগ্ম সচিব সঞ্জয় তোদি-র দাবি, চড়া বিদ্যুৎ মাসুলের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশে অগ্রগণ্য। সংগঠনের অন্যতম কর্তা ব্রিজমোহন মোহতা-র বক্তব্য, এই শিল্পে বিশেষ করে যন্ত্রচালিত তাঁতের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে মোট উৎপাদন খরচের ৯০ শতাংশই কাঁচামাল ও প্রাথমিক উৎপাদনের খাতে ব্যয় হয়। বাকি খরচের মধ্যে ২-৪% হল বিদ্যুৎ মাসুল। তাঁর দাবি, “প্রবল প্রতিযোগিতার জন্য এই শিল্পে মুনাফার হার মাত্র ৩-৪%। ফলে যেখানে বিদ্যুৎ মাসুল চড়া, সেখানে লভ্যাংশ অনেক কম। সে রাজ্যে তাই কেউ লগ্নি করতে চান না।’ পশ্চিমবঙ্গও এ কারণেই লগ্নিকারীদের আস্থা হারিয়েছে, মত সংগঠনের। মোহতা জানান, এ রাজ্যের চেয়ে মহারাষ্ট্রে বিদ্যুৎ মাসুল অর্ধেকেরও বেশি কম। তামিলনাড়ুতে সম্প্রতি মাসুল বাড়লেও এ রাজ্যের চেয়ে কম। কিন্তু আর্থিক অনটনে ভোগা পশ্চিমবঙ্গে এখন আর্থিক সুবিধা দেওয়া কতটা সম্ভব? সরকারি সূত্রের দাবি, বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড় দেওয়া আর ভর্তুকি এক নয়। মূলত গৃহস্থকে রেহাই দিতে উৎপাদন ও বণ্টনের মোট খরচের চেয়ে সাধারণ ভাবে শিল্পে বিদ্যুৎ মাসুল বেশ চড়া থাকে। ফলে তাতে কিছুটা ছাড় দিয়েও বিদ্যুৎ সংস্থার লাভ রাখা সম্ভব। তা হলে বস্ত্রশিল্পও উপকৃত হবে, বিদ্যুৎ সংস্থাও সমস্যায় পড়বে না। নীতি চূড়ান্ত হলে তাই অর্থ দফতর আপত্তি করবে না বলেই আশা।
জঙ্গি আন্দোলন-সহ বিভিন্ন কারণে এ রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছিল বস্ত্রশিল্প। একের পর এক ‘স্পিনিং মিল’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রচালিত তাঁত শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। মূলত হোসিয়ারি পণ্য তৈরি হলেও রাজ্যে সার্বিক ভাবে বস্ত্রশিল্প ধুঁকছে। সেখানে আর্থিক সুবিধা ও লগ্নির সহজ পরিবেশ তৈরি করে লগ্নি টেনেছে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য। মোহতার দাবি, যন্ত্রচালিত তাঁত-সহ বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে রাজ্যের সহায়তা একান্ত জরুরি। তিনি বলেন, “কারখানা ও আধুনিক যন্ত্রের জন্য মূলধনী খাতে কেন্দ্রের আথির্র্ক সহায়তা নিলে রাজ্য স্তরে কোনও বাড়তি সাহায্য মেলে না। অথচ মহারাষ্ট্র সরকার আলাদা ভাবে আর্থিক সুবিধা দেয়।” যথাযথ নীতি থাকলে এ রাজ্যেও বস্ত্রশিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, দাবি তাঁদের। তাঁদের হিসেবে, এ রাজ্যে যন্ত্রচালিত তাঁতশিল্প বছরে ৫০-১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। অথচ অন্য রাজ্য থেকে একই কাপড় আসে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকার। আর্থিক সুবিধা পেলে সেই বাজার সহজেই ধরতে পারে এ রাজ্যও। অন্য দিকে, হস্ত-তাঁতের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধার চেয়েও আধুনিক প্রযুক্তির (রাসায়নিকের বদলে জৈব প্রযুক্তিতে রং করা) ব্যবহার, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাজারমুখী পণ্য ও বিপণন ব্যবস্থা তৈরি আগে জরুরি বলে মনে করছে রাজ্য। হোসিয়ারি ও তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নেও উদ্যোগী হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতর। বস্ত্রশিল্পের আরও দাবি, অন্য রাজ্যের মতো এখানেও উৎপাদন ভিত্তিক মজুরি চালু করা দরকার। তা না-হলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা অসম্ভব। এ রাজ্যেও বস্ত্র পার্ক গড়া জরুরি। সে জন্য আনুষঙ্গিক সহায়তার দাবিও শিল্পমহল তুলেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.