গ্রামেই কলেজ গড়তে কোমর বাঁধছে তেহাট্টা
লাকায় রয়েছে বেশ কিছু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। বছর বছর সেখান থেকে পাশ করে প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া। কিন্তু আশপাশে কোনও কলেজ নেই। ইচ্ছে থাকলেও তাই কলেজ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি গ্রামের অনেকেই। সেই পরিস্থিতি পাল্টাতে এ বার মাঠে নেমেছে গোটা গ্রাম। চড়া রোদের মধ্যে কেউ ছুটছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। কেউ যাচ্ছেন ব্যাঙ্কে। কেউ বা আবার নেমেছেন টাকা সংগ্রহে। এক কথায়, কলেজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর কালনা ২ ব্লকের তেহাট্টা গ্রামের বাসিন্দারা।
এলাকায় বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসেবেই পরিচিত এই তেহাট্টা। হঠাৎ কেন দল বেঁধে কলেজ গড়ার কাজে নামলেন সকলে? গ্রামবাসীরা জানালেন, গ্রামের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও কলেজ নেই। অথচ এই গ্রাম ও আশপাশের এলাকা মিলিয়ে রয়েছে ১৩টি হাইস্কুল। প্রায় ৫০টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করে। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কলেজে সুযোগ পেতে যেতে হয় কালনায়। কিন্তু সবার সেখানে ঠাঁই হয় না। অনেকে ভিন্ জেলাতেও যেতে বাধ্য হয়। বাসিন্দারা জানালেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ভর্তি হতে না পারা পড়ুয়ার সংখ্যা এলাকায় বাড়তে থাকায় শেষমেশ তাঁরা গ্রামেই কলেজ গড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই জমিতেই স্বপ্নের বীজ। — নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কলেজ গড়ার ব্যাপারে বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে দু’টি বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে কলজে তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে নতুন কলেজের জন্য জমি জোগাড়, এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখা-সহ যে ১১ দফা সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে, তা পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বৈঠকেই কলেজ তৈরির জন্য ১৫ জনের একটি কমিটি গড়া হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ দে-কে। এ ছাড়াও কমিটিতে রাখা হয় বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক এবং কয়েক জন সরকারি পদাধিকারীকে। কমিটির সম্পাদক শান্তিময় হালদারের প্রয়াত পিতা সদানন্দ হালদারের নামে প্রস্তাবিত কলেজটির নামকরণ হবে বলেও ঠিক করা হয়েছে।
গ্রামের মাঝেরপাড়ার হাসপুকুর পাড়ে কলেজ গড়ার জন্য সাড়ে পনেরো বিঘা মিলেছে। নিঃশর্তে এই জমি দান করেছেন গ্রামের ৯৫ জন বাসিন্দা। সম্প্রতি প্রস্তাবিত কলেজের নামে এই জমি রেজিস্ট্রিও হয়ে গিয়েছে। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মদনমোহন মুখোপাধ্যায় জানান, জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি নিজে। বাকি টাকা দিয়েছেন গ্রামের অন্য বাসিন্দারা। মদনমোহনবাবুর আশ্বাস, “কলেজ গড়তে আমি আরও সাহায্য করব।”
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্য, কলা বা বিজ্ঞান বিভাগের যে কোনও একটি শাখা খুলতে হলেই মোট ২০ লক্ষ টাকা জমা রাখতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও ব্যাঙ্কে। কমিটির তরফে জানানো হয়, ইতিমধ্যে পরিমাণ টাকা পাঁচ বছরের জন্য ব্যাঙ্কে জমা রাখা হয়েছে বলে। বুধবার উচ্চ শিক্ষা দফতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে। মদনমোহনবাবু জানান, সরকারি অনুমোদন মিললেই কলেজের নতুন বাড়ির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তরফে বরাদ্দ মিলবে। নিয়ম অনুযায়ী, দু’বছর পর্যন্ত ভাল পরিকাঠামো থাকা স্কুলে অস্থায়ী ভাবে কলেজ চালানো যাবে। গ্রামের হাইস্কুল এ ব্যাপারে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
কলেজ গড়ার জন্য নিজের দশ শতক জমি দান করেছেন গ্রামের বধূ পদ্মরানি ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে, এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। তাই আমি জমি দিয়েছি।” জমি দিয়েছেন বৃদ্ধ অমলেন্দু ভট্টাচার্য। তাঁর ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের কথায়, “বাবা ২২ কাঠা জমি দান করেছেন। গোটা পরিবার বাবার এই কাজে খুশি।”
তেহট্টা গ্রামের বাসিন্দাদের এই কলেজ গড়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “খুব ভাল প্রচেষ্টা। এমন একটি কাজে প্রশাসন গ্রামবাসীদের পাশে থাকবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.