জোট তো হলই না, উল্টে সোমবার পুরভোটের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে শিল্পশহর হলদিয়ায় কংগ্রেস-তৃণমূলের শরিকি টানাপোড়েন চরমে উঠল।
কংগ্রেস প্রার্থীদের ‘এজেন্ট’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক মনোজ পান্ডেকে পুলিশের সামনেই ‘অপহরণ’ থেকে শুরু করে তাঁদের দলীয় পাঁচ প্রার্থীকে মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এ দিন বেলা একটা নাগাদ মনোজ ও প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা মায়া ঘোষ হলদিয়া মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছন। তখনই জনা তিরিশেক যুবক এসে মনোজকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের তরফে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। মনোজের অভিযোগ, “মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে পৌঁছতেই কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক আমাকে ঘিরে ধরে আসন রফার জন্য চাপ দেয়। সকলের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না জানাতেই ওরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে মোটর সাইকেলে চাপায়। তারপর মিৎসুবিশি কারখানার পাশে আইএনটিটিইউসি’র একটি অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।” মনোজ জানিয়েছেন, দলীয় প্রতীক পাওয়ার নথিপত্র জমা না দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। তবে তাঁর কাছে ওই নথি না থাকায় শেষমেশ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বেলা আড়াইটে নাগাদ দুর্গাচকের সিপিটি মার্কেট এলাকা থেকে মনোজবাবুকে উদ্ধার করে পুলিশ। |
হলদিয়ার তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এই ঘটনায় দলের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
শুভেন্দুর বক্তব্য, “হলদিয়ায় তৃণমূলের এত খারাপ অবস্থা হয়নি যে মনোজের মতো নেতাকে অপহরণ করতে হবে! ও তো হোটেলে খেতে গিয়েছিল। আমাকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও ফোন করেছিলেন। তাঁকে আমরা সব কথা জানিয়ে দিয়েছি।”
প্রদীপবাবু অবশ্য স্পষ্ট অভিযোগ করেন, “তৃণমূলই মনোজকে অপহরণ করেছিল। মনোনয়ন পেশের শুরু থেকেই তৃণমূল গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করছিল। আমাদের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিল।” শুভেন্দু অবশ্য তাঁর দাবিতে অনড় থেকে বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যে। এই ধরনের ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেস ঘটায় না। হলদিয়া পুরভোটে আমরা সব আসনে প্রার্থী দিয়েছি। গত পঞ্চায়েত, লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় পুরভোটে প্রাপ্ত ভোট আরও বাড়বে।”
প্রদীপবাবু বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ, গণতান্ত্রিক ভাবে ভোটে দাঁড়ানোর ও লড়াইয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কর্মীদের এমন আচরণ থেকে বিরত রাখুন।” বাম আমলেও এ ভাবেই কংগ্রেসকে প্রার্থী দিতে বাধা দেওয়া হত বলে অভিযোগ জানিয়ে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “বাম আমলে যা হত, এখনও সেটাই হচ্ছে! এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুলিশের দিকেও। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে হলদিয়া মহকুমা অফিস চত্বরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। প্রধান ফটকের বাইরেও ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। পুলিশের সামনে থেকেই মনোজকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কংগ্রেস নেত্রী মায়াদেবী বলেন, “আমি নিজে পুলিশের সাহায্য চেয়ে পাইনি। থানায় গিয়েও পুলিশ অফিসারদের পাইনি।” হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতির বক্তব্য, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” যদিও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ দিনের গোলমালের জেরে কংগ্রেসের পাঁচ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি বলে দল সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে, ২৬টি আসনের মধ্যে ২১টিতে লড়ছে কংগ্রেস। আর তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে সবকটি আসনে। বর্তমানে এই পুরসভায় ক্ষমতাসীন বামেরা লড়ছে ২৬টি আসনে। |