শুরুতেই হোঁচট!
রবিবার নতুন প্রযুক্তির সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে সোমবার রাতেই তাতে বিভ্রাট ঘটে ব্যাহত হল মেট্রো পরিষেবা। রাত আটটা থেকে দীর্ঘক্ষণ কার্যত বন্ধ রইল মেট্রো চলাচল। যার জেরে নাকাল হলেন অগণিত যাত্রী।
কালীঘাট ও রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের মাঝে টানেলেও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে ট্রেন। সে সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন যাত্রী। অভিযোগ, তখন ট্রেনের অ্যালার্মও বাজানো যায়নি। পরে যাত্রীরা রবীন্দ্র সরোবরে স্টেশন মাস্টারের ঘরে বিক্ষোভ দেখান। মেট্রো সূত্রের খবর, রাত পৌনে আটটা নাগাদ কালীঘাট স্টেশনের কাছে একটি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপ হয়ে যায়। তাতেই পরপর অনেকগুলি ট্রেন আটকে যায়। চালকদের মধ্যে কোড নম্বর বিনিময় করে ট্রেন চালানোর চেষ্টা হয়। তাতেও হয় দীর্ঘ দেরি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য টানেলে ট্রেন দাঁড়ানোর কথা স্বীকার করেননি।
তবে মেট্রোর এই দুর্ভোগে তাঁদের উপরে ‘ভরসা’ করে যাত্রীরা যে আর অপেক্ষা করে নেই, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বলেন, “এক-একটি স্টেশনে বহুক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় কোনও যাত্রী আর নেই।” এমনিতেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু হওয়ায় মেট্রো-কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, এই ব্যবস্থায় দু’টি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমলে, আচমকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হলে বা সিগন্যাল খারাপ হলে বিপত্তি ঘটবে। যার জেরে টানেলেও আটকে পড়তে পারে ট্রেন।
মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “এই ব্যবস্থায় তিন মিনিট বা তার কম ব্যবধানে ট্রেন চালালে অসুবিধা হতে পারে। এখন আমরা পাঁচ মিনিট ব্যবধানে ট্রেন চালাচ্ছি। তাই যাত্রীদের অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই।” এ দিন যে ট্রেনটি টানেলের মধ্যে আটকে গিয়েছিল, তার এক যাত্রী পুলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় পনেরো মিনিট টানেলের মধ্যে আটকে ছিলাম। প্রায় দমবন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা অ্যালার্ম বাজানোর চেষ্টা করলাম। সেটাও বাজল না। পরে যখন স্টেশনে ট্রেনটি এল, আমরা চিৎকার করতেই আরপিএফ আমাদের সরিয়ে দিয়ে এসি ট্রেনটিকে বার করে দিল।” এসপ্ল্যানেডে ট্রেন না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন টালিগঞ্জের কর্ণ সিংহ। তিনি বলেন, “অনেক ক্ষণ ট্রেন নেই, ট্যাক্সিও পাচ্ছি না। কী ভাবে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।” একই দশা সব স্টেশনের সামনের রাস্তাতেই। মহিলাদেরও রাস্তায় বাস, ট্যাক্সির জন্য দৌড়োদৌড়ি করতে দেখা গিয়েছে। এ দিনই দুপুরে এক মহিলা যাত্রীর সঙ্গে এক পুরুষ যাত্রীর বিরোধের জেরে ব্যাহত হয় মেট্রো চলাচল। যাত্রী থেকে শুরু করে মোটরম্যান সকলেই প্ল্যাটফর্মে নেমে আসেন। ফলে ট্রেনটি ছাড়তে দেরি হয়। পরে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে ওই দুই যাত্রীকেই স্টেশন মাস্টারের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবার মিটমাটও হয়ে যায়। এই ঘটনার জেরে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে পরবর্তী মেট্রোগুলি দেরিতে চলে।
মেট্রোর মুখপাত্র বলেন, “গোলমালের পরে ওই মহিলা অভিযোগ তুলে নেওয়ায় পুরুষ যাত্রীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এই ঘটনার জেরে ওই ট্রেনটি দেরি করায় পরের অনেক ট্রেন আজ তিন-চার মিনিট করে দেরিতে চলেছে।” |