পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর সংখ্যালঘু ভোট -ব্যাঙ্ক ‘অক্ষুন্ন’ রাখতে আরও একবার সংখ্যালঘু -উন্নয়নে জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনার সংখ্যালঘু -অধ্যূষিত বসিরহাটে বৃহস্পতিবার এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, “এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়ে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের নতুন বিল আনবে। শুধু চাকরিই নয়, সংরক্ষণ হবে উচ্চশিক্ষাতেও।”
সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের রাজত্বে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে ‘কোনও কাজই হয়নি’ বলে ফের অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখন থেকে আর সংখ্যালঘু ভাইবোনদের বিভিন্ন দফতরে ঘুরে বেড়াতে হবে না। প্রতিটি জেলায় একটি করে সংখ্যালঘু দফতর তৈরি করা হবে। সেখান থেকে তাঁরা সমস্ত তথ্য পাবেন।” সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের উন্নতির জন্যও যে তাঁর সরকার কাজ করছে, তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের ঘরের মেয়ে। মাটির মেয়ে। গরিব মানুষের ক্ষতি করে কোনও কাজ করিনি। করবও না।”
কলকাতার টাউন হলে বুধবারই তাঁর সরকারের ‘মূল্যায়ন’ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “নির্বাচনের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার ৯০ % কাজ করে ফেলেছি আমরা।” এ দিন বসিরহাটে আরও একধাপ এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১০ মাসে ১০ বছরের কাজ করেছি ! |
পাঁচ বছরে এমন উন্নতি করব, যাতে বাংলা ভারতের গর্ব হবে।” বসিরহাটের গোপালপুর মোড়ে ব্রহ্মানন্দ হাইস্কুল মাঠে জনসভায় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়, স্থানীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম ও বিধায়ক এটিএম আবদুল্লার (রনি ) উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়,“ওরা কোনও কাজই করেনি। শুধু মিথ্যে কথা বলেছে আর মাটিতে কঙ্কাল পুঁতে গিয়েছে। আমরা উন্নয়ন করছি দেখে ওরা জ্বলছে। ওরা বাংলার উন্নয়নের গতিকে স্তব্ধ করতে গেলে মানুষই ওদের দেখে নেবে। মনে রাখবেন, আমার কেউ নেই। বাংলার মানুষই আমার সব।” তিনি আরও বলেন, “৩৪ বছর রাজত্ব করার পর যে ভাবে ওরা ফাইলপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে, লোপাট করে দিয়েছে, তা ঠিক করতেই পাঁচ মাস সময় লেগে গেল ! ধৈর্য ধরুন। ওদের মিথ্যা প্রচারে কান দেবেন না। কাজ করে দেখিয়ে দেব। আমায় একটু সময় দিন।”
এ দিন বারাসত ও সণ্ডালিয়ার মধ্যে ডবল লাইনের উদ্বোধন এবং কচুয়ায় রেলের একটি কম্পিউটার চালিত বুকিং কাউন্টারের উদ্বোধন করে মমতা বলেন, “স্কুল, কলেজ, রাস্তার সংস্কার এবং ১০ হাজার মৎস্যজীবীদের বাড়ি খুব শীঘ্রই তৈরি করে দেওয়া হবে।” ছাত্র -যুবদের ধৈর্য না -হারানোর পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হতাশ হবেন না। ভাল করে লেখাপড়া করুন। চাকরির সুযোগ আসবেই। এ জন্য প্রতিটি জেলায় এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে আপনাদের কার কী যোগ্যতা সব দেওয়া থাকবে। প্রয়োজনে সেখান থেকে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ইতিমধ্যেই রাজ্যে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার চাকরির পদ তৈরি করা হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে আরও আড়াই লক্ষ বেকারের চাকরি হবে। বিভিন্ন শিল্পসংস্থা ইতিমধ্যেই রাজ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে কথা দিয়েছে। মঞ্চ থেকে রিমোট কন্ট্রোলে জেলায় ১৮টি রাস্তার সংস্কারের কাজ, হাড়োয়ায় পলিটেকনিক কলেজ, জেলার ৩৪১টি ব্লকে হিমঘর -সহ ব্যারাকপুর, মিনাখাঁ, হাবরা ও বনগাঁয় চারটি কৃষি বাজার -সহ একগুচ্ছে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে কৃষকের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের হাতে আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন। |