ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে স্থানীয় বাধায় ফের আটকে গেল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ।
তবে, বছর পাঁচেক আগে যে তৃণমূল নেতারা বলতেন ‘‘জমি নিতে গেলে আগুন জ্বলবে’’, তাঁরাই এখন বলছেন, “মানুষের স্বার্থে সড়ক সম্প্রসারণ জরুরি।” বাম-আমলে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে জমি অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে ‘প্রতিবাদ’ গড়ে তুলেছিল তৃণমূল।
এখন সরকারে তারাই ক্ষমতাসীন। আর এ বার জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সিপিএমের ‘কলকাঠি নাড়া’ দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব! সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেন হওয়ার কথা। যদিও সড়ক সম্প্রসারণের কাজ বছর পাঁচেক ধরে থমকে আছে। বারাসতের শুড়িপুকুর থেকে আমডাঙা থানার রাজবেড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার অংশে জমি অধিগ্রহণের সমস্যার জেরেই এই পরিস্থিতি। |
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের প্রতিবাদে মিছিল। ছবি-শান্তনু হালদার |
সম্প্রতি অধিগ্রহণের জন্য জমি চিহ্নিত করে ফের একটি নোটিস দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তার পরে সীমানা মেপে খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষ সেই খুঁটি উপড়ে ফেলেছেন। বুধবার জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা ফের জমি মাপতে ফের রাজবেড়িয়ায় গেলে কিছু মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেন। ফিরে আসতে হয় সরকারি কর্মীদের। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি অধিগ্রহণ) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ ভাবে বাধা পড়ায় কাজের ক্ষতি হচ্ছে।” অন্য দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা কী হবে, তা আগাম না জানালে সম্প্রসারণের কাজে জমি দেওয়া হবে না। ‘৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক-সংলগ্ন ভূমি ও ব্যবসা রক্ষা কমিটি’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন এখানকার বাসিন্দারা। এ দিন কমিটির মিছিলে হাজার খানেক মানুষ হাঁটেন। তাঁদের যুক্তি, রাস্তার পাশে একটি পান-বিড়ির দোকানেরও মাসে ছ’হাজার টাকার মতো আয় হয়। সেই হিসেবে অন্তত ২০ বছরের ক্ষতিপুরণ দিতে হবে প্রশাসনকে। কমিটির সম্পাদক প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “আমরাও চাই রাস্তা সম্প্রসারণ হোক। তবে, এখানে কারও দোকান কারও বা বাড়ি-জমি রয়েছে। তার ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসন না দিয়ে রাস্তার কাজে হাত দেওয়া যাবে না।” জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, “জমি অধিগ্রহণ সরকারি সিদ্ধান্ত। আমরা এর পক্ষেই থাকব।” তাঁর আরও অভিযোগ, “সিপিএমের লোকজনই এখন পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে।” কিন্তু বাম সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তো তৃণমূলই আন্দোলন সংগঠিত করেছিল? নির্মলবাবু জবাব, “তখন আমরা বাধা দিয়েছিলাম, কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক বেশি জমি অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল। এখন প্রয়োজনীয় জমিটুকুই নেওয়া হচ্ছে।” নির্মলবাবুর এ কথা বললেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, আগের নোটিস এবং নকশা মতোই জমি অধিগ্রহণ করার কথা। নতুন কোনও নোটিস জারি হয়নি। ফলে জমি বাড়া বা কমার প্রশ্ন উঠছে না। তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দী বলেন, “আগের বার তৃণমূলের লোকজন বাধা দিয়েছিল। এখন এলাকার মানুষই বাধা দিচ্ছে। আমরা উন্নয়নের পক্ষে। তবে মানুষের যেন অসুবিধা না হয়, তা দেখতে হবে।”
অত্যধিক যানজটের জন্য ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক (যশোহর রোড) দিয়ে যাতায়াত এখন ‘দুঃস্বপ্ন’। সে জন্য এর আগে বারাসত থেকে বনগাঁ পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কাজ খানিকটা এগোনোর পরে তৃণমূলের বাধায় তা-ও থমকে রয়েছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়করে প্রসঙ্গ টেনে জেলার এক সিপিএম নেতার তাই কটাক্ষ, “সবই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!” |