কাজের নিরিখেই জয় বিপক্ষের
‘মিনি-কলকাতা’য় হার বাঙালি প্রার্থীরই
পুরভোটে গোটা দিল্লি জুড়ে যখন কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া বয়ে গেল, সেই সময় রাজধানীর ‘মিনি-কলকাতা’ চিত্তরঞ্জন পার্কেই পরাস্ত হলেন বিজেপির বাঙালি প্রার্থী আনন্দ মুখোপাধ্যায়। জিতলেন কংগ্রেসের প্রার্থী বীরেন্দ্র কাসানা।
পুরভোটে গোটা দিল্লিতে সম্ভবত আনন্দবাবুই ছিলেন একমাত্র বাঙালি প্রার্থী। দশ বছর আগে তিনি চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকেই পুরভোটে জিতেছিলেন। তারপর কংগ্রেসের বীরেন্দ্র কাসানাই সেই আসনটি ছিনিয়ে নেন। পরের ভোটে বীরেন্দ্রর ভাই ধীরসিংহ কাসানাও আসনটি দখলে রেখেছিলেন। ভোটের আগে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী দিল্লি জুড়ে যে সমীক্ষা করিয়েছিলেন, তাতেও আনন্দবাবুর জেতার সম্ভাবনা দেখা যায়। সে জন্য এ বারেও তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালির সিংহভাগ ভোট যে কার্যত এক অবাঙালি কংগ্রেস প্রার্থীর ঝুলিতেই গিয়েছে, ফলাফলে তা স্পষ্ট।
প্রশ্ন হল, পুরভোটে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ার সময়েও কেন রাজধানীর এক টুকরো বাঙালি পাড়ায় বাঙালি প্রার্থীর পক্ষে শিকে ছিঁড়ল না কেন?
আনন্দ মুখোপাধ্যায়
নিজস্ব চিত্র
আনন্দবাবু মনে করছেন, কিছু এলাকায় তিনি ভাল ফল করেছেন। কিন্তু চিত্তরঞ্জন পার্কের কেন্দ্রটি বাঙালি পাড়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আশপাশের কালকাজি, অলকনন্দার মতো এলাকাগুলিও এই কেন্দ্রে সামিল হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে হার স্বীকার করে নিতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীর বক্তব্য, বাঙালি-অবাঙালি ভেদাভেদ নয়, চিত্তরঞ্জন পার্কের কেন্দ্রের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন কাজের বিচার করে। গত দশ বছর ধরে কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। ফলে এই এলাকায় কাজও হয়েছে অনেক। বস্তির পুনর্বাসন, রাস্তাঘাট মেরামত, রাস্তার টিউব লাইট বদলে সোডিয়াম আলো, নতুন পার্ক, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, চিত্তরঞ্জন পার্কের দু’টি জনপ্রিয় বাজারের আধুনিকীকরণ। এখানেই শেষ নয়, কাসানা ক্ষুদিরাম বসু ও নেতাজির নামে দু’টি পার্ক-ও করেছেন।
চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা উৎপল ঘোষের বক্তব্য, “কলকাতার মানুষ যেমন রাজনীতি সচেতন, চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালিরাও একই ভাবে মননশীল। গোটা দিল্লিতে বিজেপি শীলা দীক্ষিত ও মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রচার করেছে। ভোটে তার ফলও পেয়েছে তারা। কিন্তু চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালিরা পুরভোটে স্থানীয় স্তরে কাজের মূল্যায়ন করেই ভোট দিয়েছেন।” বিভিন্ন স্তরের ভোটে ভিন্ন ভিন্ন এই বিচারের জন্যই এই এলাকার বিধায়ক বিজেপির বিজয় কুমার মালহোত্র, কিন্তু লোকসভায় এই আসনটি কংগ্রেসের অজয় মাকেনের দখলে। চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালির মন জয় করতে কংগ্রেসের প্রার্থী অধীর চৌধুরি, দেবপ্রসাদ রায়ের মতো পশ্চিমবঙ্গের নেতাদেরও আনা হয়েছে। ভোটের ফল বলছে, চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালিরা গত বারের তুলনায় অনেক বেশি ভোট দিয়েছেন। এবং তার একটি বড় অংশ গিয়েছে কংগ্রেসের অবাঙালি প্রার্থীর ঝুলিতেই।
বিজেপিতে স্থানীয় স্তরে যেমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, দিল্লিতে কংগ্রেসেরও তেমনই দশা। শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে অজয় মাকেনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও কারও অজানা নয়। কিন্তু বীরেন্দ্র মাকেন-ঘনিষ্ঠ। গত পুরভোটে তাঁকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করানোর জন্য তাঁর ভাইকে পুরভোটে লড়ানো হয়। কিন্তু শীলা-মাকেন দ্বন্দ্বে বিধানসভায় টিকিট পাননি কাসানা। কিন্তু সেই সময় দিল্লি উন্নয়ন নিগমের সদস্য হিসাবেও লাগাতার এলাকার উন্নয়ন করে গিয়েছেন তিনি। আনন্দবাবুর তুলনায় বয়সও কম বীরেন্দ্র কাসানার। এলাকায় সক্রিয়ও। ভোটযুদ্ধে তাই বাঙালি পাড়ায় অবাঙালি প্রার্থীকেই পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন প্রবাসীরা। আনন্দবাবুর আক্ষেপ, “এই শেষ বার। আর বোধহয় আমার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে দিল্লিতে আর কবে কোন বাঙালির ভাগ্যে এই সুযোগ জুটবে, কে জানে?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.