ওরা কেউই মার্ক জুকারবার্গ নয়। সকলেই ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’দেখেছে। ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিতও হয়েছে। ওদের কেউ পিএইচডি করে। কেউ তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করে। কেউ স্কুলে পড়ায়। ওদের মধ্যে যেমন মিলও রয়েছে বিস্তর। তেমনই ঝগড়া-ঝাটিও হয় প্রায়ই। ঠিক যেমন ভাবে আর পাঁচটা মেস-হস্টেলের ছেলে মেয়েরা শহর কলকাতাকে জড়িয়ে ধরে বেড়ে ওঠে, বড় হয়ে ওঠে, ওরাও ঠিক তেমন ভাবেই প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পেরিয়ে এখন নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
কাজের ফাঁকে ওরা সকলেই লিখতে ভালবাসে। পড়তে ভালবাসে। এই লেখা-পড়ার পরিসর আরও কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যই ওরা নিজেদের ব্লগ খুলেছিল। নাম দিয়েছিল, ‘কথা তো বলার জন্যই’। সুনন্দ, শুভদীপ, নির্মাল্য, সুমিত, সংহিতা বা সুরশ্রী-র ব্লগের এইটেই নাম। ওরা কখনওই ভাবেনি যে ওদের এই ব্লগ কখনও কোনও স্বীকৃতি পেতে পারে। হোক না তা নিতান্তই প্রাথমিক। সম্প্রতি, সুনন্দরা দেখতে পায় একটা বিশেষ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনেকে ওদের ব্লগ পড়ছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ওরা জানতে পারে, জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সংস্থা ডয়চে ভেলের ‘সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায়’ মনোনয়ন পেয়েছে তাদের ব্লগ। |
১১টি ভাষায় ১৭টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য ১৮৭টি ব্লগ ও ওয়েবসাইট মনোনীত করেছে ডয়চে ভেলে। এই পুরস্কারের নাম ‘বব্স ২০১২’। জার্মান ওই সম্প্রচার সংস্থা নিযুক্ত আন্তর্জাতিক জুরি প্রতিযোগীদের মনোনয়ন করেছে। এ বার পাঠকরা ১ মে অবধি ভোট দিতে পারবেন। ইন্টারনেটে অনলাইন ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত পুরস্কারকে বলা হয় ‘ইউজার প্রাইজ’। ‘ইউজার প্রাইজ’ এবং ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ দু’টি আলাদা সম্মাননা। এই দুই পুরস্কারের তাৎপর্যও আলাদা। ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, কিছু দিন ধরে ৩,২০০টি প্রস্তাব বিবেচনা করে ১৮৭টি ব্লগ ও ওয়েবসাইট মনোনীত করেছেন জুরির সদস্যরা। ১ মে বার্লিনে একটি অধিবেশনে ছ’টি বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ী নির্ধারণ করবেন জুরি সদস্যরা। প্রধানত ব্লগ, সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলিতে আন্দোলন, ভিডিও চ্যানেল ও অভিনব শিক্ষামূলক প্রকল্প সংক্রান্ত ছ’টি মূল বিভাগে ১১টি ভাষার সব ক’টি থেকেই প্রতিযোগীদের বিচার করা হবে। বব্স ২০১২-র সব বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২ মে। শুধু তা-ই নয়, ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীদের জার্মানি আসার আমন্ত্রণও জানানো হবে। ২৬শে জুন বন-এ ডয়চে ভেলের ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’-এ সরাসরি পুরস্কার নিতে পারবেন তাঁরা।
স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রতিযোগিতায় সামিল হতে পেরে বেশ খুশি ‘কথা’র সদস্যরা। ব্লগটির এক সদস্যের কথায়, “এই মনোনয়ন আমাদের আরও এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেবে। কোনও রকম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এই ব্লগ আমরা শুরু করিনি। সত্যি কথা বলতে, অনেক দিন পর্যন্ত আমরা জানতাম না, যে আমাদের ব্লগ ‘কথা...’ মনোনয়ন পেয়েছে।” ‘কথা’র সদস্যদের দাবি, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেবল তাদের ব্লগই মনোনীত হয়েছে। |
বাংলায় এখন ব্লগের সংখ্যা নিতান্তই কম না। কিন্তু সুনন্দ, সংহিতাদের এই ব্লগ অন্য ব্লগের থেকে কোথায় আলাদা?
কথার এক সদস্য বলল, “ব্লগ নিয়ে বাংলা দেশে যত উৎসাহ দেখা যায়, এখনও আমাদের রাজ্যে ততটা নেই। কিন্তু এত ব্লগের ভিড়ে আমরা একটু আলাদা হতে চেয়েছি।” কী ভাবে? ‘কথা’-র সদস্যরা জানাল, বাংলায় মোটামুটি দু’ধরনের ব্লগের চল রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্লগ এবং কমিউনিটি ব্লগ। ‘কথা’ এদের কোনও গোত্রেই পড়ে না। ‘কথা’ কোনও ব্যক্তির ব্লগ নয়। আবার কমিউনিটি ব্লগের মতো একটা প্রধান ব্লগের ভেতর কোনও সদস্যের ব্যক্তিগত পাতাও এখানে নেই। ই-ম্যাগাজিন এবং ব্লগের মিশেল ঘটানো হয়েছে এই ব্লগে। নিজেদের মধ্যে থেকে পালা করে কনভেনরের দায়িত্ব সামলায় ‘কথা’-র সদস্যরা। বহু স্বরে কথা বলার রীতিই এই ব্লগের একমাত্র নীতি। পাঠকের কাছ থেকেও প্রচুর পোস্ট জমা পড়ে ‘কথা’-র পাতায়। লেখা ছাড়াও গান-বাজনা নিয়েও আলাদা বিভাগ রয়েছে। অচেনা শিল্পীদের গান-বাজনাও শুনতে পাওয়া যায়। এই ধরনের ব্লগ বাংলায় একেবারে নতুন।
সুনন্দ, সংহিতাদের কেউই মার্ক জুকারবার্গ নয়। তাই ওরা নতুন কিছু হয়তো উদ্ভাবনের দাবি করতে পারে না। কিন্তু ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ দেখে নতুন করে ভাবতে শিখেছিল। ডয়চে ভেলের ‘সেরা ব্লগ অনসন্ধান’প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন ওঁদের সেই ভাবনাকেই কুর্নিশ করল। |