|
|
|
|
ভাবনার এই বিশ্বপটের তুলনা নেই |
|
আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব। মূল জার্মান থেকে ইংরেজিতে। বিশ্বে প্রথম।
কলকাতার দুই নবীন বঙ্গসন্তানের কীর্তি। আন্দ্রে বেতেই |
|
আলবার্ট
আইনস্টাইন তাঁর জগদ্বিখ্যাত আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব লিখলেন জার্মান ভাষায়। বিজ্ঞানে যুগান্তকারী সেই তত্ত্ব মূল জার্মান রচনা থেকে প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ হল কোথায়?
‘প্রথম’ মানে কিন্তু গোটা দুনিয়ায় ‘প্রথম’।
ভারতে। আরও একটু স্পষ্ট করে বললে, কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হল সেই গ্রন্থ। অনুবাদ করলেন দুই বাঙালি তরুণ। সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা। এটা আজ ইতিহাস, এবং খুব জরুরি ইতিহাস। শিক্ষাক্ষেত্রে বাঙালির গর্ব করার মতো ঘটনা যা যা আছে, তার তালিকা বানাতে বসলে প্রথমেই এই বিশেষ অনুবাদটির কথা মনে পড়ে। |
সহযোগী। সত্যেন্দ্রনাথ বসু (বাঁ দিকে) এবং মেঘনাদ সাহা। |
যে দুই নবীন বঙ্গসন্তান এই দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করলেন, স্বক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের জন্য বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁরা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমি শুধু এই ঘটনাটির তাৎপর্যের কথা ভাবতে চাইছি। তখন পদার্থবিদ্যার কেন্দ্র বলতে বোঝায় কোপেনহেগেন, বোঝায় কেমব্রিজ বা জার্মানির গ্যোয়টিংগেন। তাদের থেকে কত দূরে কলকাতা! অথচ, সেখানে বসে বিজ্ঞানের একেবারে আধুনিকতম তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রয়োজন অসম্ভব দূরসঞ্চারী দৃষ্টি, ভাবনার অসামান্য বিস্তার।
তখন বিশ্বযুদ্ধের বাজার। কোথা থেকে পাওয়া যাবে নানাবিধ বিদেশি বই? সত্যেন্দ্রনাথ এবং মেঘনাদ আরও একজনের সন্ধান পেলেন। তিনি অবশ্য প্রকৃতই জার্মান ভদ্রলোক। পি জে ব্রুল। ডক্টরেট ছিল বটানিতে, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য পদার্থবিদ্যায় চলে আসেন। ভারতে আগমনও শরীরের কারণে, নিরক্ষীয় দেশের উজ্জ্বল সূর্যালোকিত আবহাওয়া তাঁর প্রয়োজন ছিল। ভদ্রলোক পড়াতেন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-এ, অধুনা যার নাম বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, সংক্ষেপে ‘বেসু’। ব্রুল-এর কাছেই পাওয়া গেল জার্মান ভাষায় লেখা বেশ কিছু বিজ্ঞানগ্রন্থ। দুই জ্ঞানপিপাসু বন্ধুর আগ্রহ দেখে তিনিও সাহায্য করলেন উদার ভাবে। আজকাল এই রকম কথাবার্তা চট করে নিছক গল্প বলে মনে হতেই পারে, কিন্তু ঘটনাটি ইতিহাস!
পুনশ্চ: ১৯২৪-এ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক-এর কোয়ান্টাম বিকিরণ তত্ত্ব নিয়ে লেখা সত্যেন্দ্রনাথের একটি পেপার বিদেশে বিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত জার্নাল-এ ছাপার অযোগ্য বিবেচিত হল। সত্যেন্দ্রনাথ আত্মবিশ্বাসী। হার মানতে নারাজ। সটান সেটিকে এক বিশ্রুত বিজ্ঞানীর কাছে পাঠালেন। ভদ্রলোক পত্রপাঠ বুঝলেন বিষয়টির সম্যক গুরুত্ব। রচনাটি নিজেই অনুবাদ করলেন জার্মান ভাষায়। সত্যেন্দ্রনাথের সেই পেপার ছাপাও হল অতঃপর।
বিজ্ঞানীর নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। |
|
|
|
|
|