|
|
|
|
১৯০০-১৯২৫, অবিশ্বাস্য একটা সময়! |
|
শতাব্দীর সিকি ভাগ। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা শিখর ছুঁয়েছে।
অতঃপর সাফল্য কিছুটা স্তিমিত, কিন্তু বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে বাঙালির
দখল এখনও দেশে নজিরবিহীন। জয়ন্ত ভট্টাচার্য |
|
কয়েক
বছর আগের ব্যাপার। পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার সম্মেলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্মেলনে যোগদানকারীদের তালিকায় চোখ বুলিয়ে বললেন, যোগদানকারীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বটে, তবে তাঁরা সবাই নানা-রাজ্য-থেকে-আসা বাঙালি।
কাহিনিটি কিঞ্চিৎ অতিকথন, তবে ঘটনা এই যে, ভারতে পদার্থবিদ্যার চর্চায় এখনও বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি হাজির। পিএইচ ডি যদি গোনা হয়, তা হলে তো সংখ্যাটা ভীষণ রকমের বেশি। ভারতে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চা অনেকটাই বাঙালির কুক্ষিগত।
পিছিয়ে যাই একশো পঞ্চাশ বছর। সদ্য জন্মেছেন সেই বাঙালি, যিনি মৌলিক এবং ফলিত রসায়ন চর্চায় এ দেশে বিপ্লব আনবেন। আর এক জন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ, মহেন্দ্রলাল সরকার, স্বপ্ন দেখছেন নতুন দিনের। কী রকম? সরকারের নয়, জনগণের টাকায় বিজ্ঞানের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা হবে। ১৮৭৬ সাল। জন্ম নিল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স। এ দেশ থেকে বিজ্ঞানের কাজে একমাত্র যে নোবেল পুরস্কার, তা কিন্তু ওই গবেষণাগারে অর্জিত। |
পীঠস্থান। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স। |
প্রেসিডেন্সি কলেজ। সেখানে গবেষণা চলেছে জোর কদমে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটে উপাচার্য, মোটা গোঁফওয়ালা একটি মানুষ। বাঙালি তাকিয়ে দেখল অবিশ্বাস্য পঁচিশটা বছর। ১৯০০ থেকে ১৯২৫। জগদীশচন্দ্র বসুর রেডিয়ো ট্রান্সমিটার, রন্টজেন-এর আবিষ্কারের অব্যবহিত পরে নীলরতন সরকারের এক্স-রে মেশিন তৈরি, মেঘনাদ সাহার জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে তাকলাগানো আবিষ্কার, ঘন দ্রবণ বিষয়ে জ্ঞান ঘোষের তত্ত্ব, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘বোস সংখ্যায়ন’। এত ঐশ্বর্য! ইতিহাস সত্যিই বাঙালিকে গর্ব করতে শেখায়।
কিন্তু পরবর্তী অধ্যায়? অগ্রগতির সেই ধারা কিছুটা স্তিমিত। ১৯৩০-এর দশকে কেলাস-এর গঠন আবিষ্কার-কৌশল, চল্লিশের দশকে পাই-মেসন কণা আবিষ্কারজনিত নোবেল পুরস্কার একটুর জন্য হাতছাড়া। পঞ্চাশের দশকে ‘রায়চৌধুরি সমীকরণ’। তারপর নব্বইয়ের দশকে স্ট্রিং থিয়োরি-তে নতুন আশা। অবশ্য এর সঙ্গে বলতেই হবে পঞ্চাশের দশক থেকে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট-এর জগৎজোড়া খ্যাতি। বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চার যে ঐতিহ্যের কথা বললাম, তা বাংলার কলেজগুলোর একটা বিশেষ দিকে প্রতিফলিত। গত কয়েক দশকে লক্ষ করছি ওই দিকটা। সান্ধ্য কলেজের অধ্যাপক দিনের বেলা মগ্ন গবেষণায়। কাজ করছেন পদার্থবিদ্যার একেবারে সামনের সারির বিষয়ে। একটি দৃষ্টান্ত। কাটোয়ায় এক অখ্যাত কলেজের অধ্যাপক আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত পেপার লিখে যাচ্ছেন পদার্থবিদ্যা এবং গণিত বিষয়ে। এটা এ রাজ্যের বিশেষত্ব। বাঙালি বিষয়টা নিয়ে গর্ব করতেই পারে। তবে, বাঙালি খবরটা রাখে কি? |
|
|
|
|
|