|
|
|
|
চারটি তারার তিমির |
|
রবীন্দ্রনাথ। রামকিঙ্কর। বিনোদবিহারী। সঙ্গে আরও একজন।
নন্দলাল বসু। জেগে উঠল ভারতশিল্প। যোগেন চৌধুরী |
|
গত শতকের একেবারে প্রথম ভাগ। ঘটনাস্থল শান্তিনিকেতন। সেখানে সদ্য-গঠিত ‘বিশ্বভারতী’তে গড়ে উঠছে শিল্পচর্চার একটি ধারা। তাকে কি নিছক সমান্তরাল বলব? এক অর্থে সমান্তরাল তো বটেই, কিন্তু ইতিহাসই প্রমাণ যে, ক্রমে সেই ধারাই হয়ে উঠবে ভারতশিল্পের মূল স্রোত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ছবি আঁকছেন। বাক্যের সৃষ্টির ’পরে তাঁর সংশয় জন্মেছে। তাই চিত্রপটের সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস!
ইতিহাস আরও এক জন। বলতে গেলে, সমাজের প্রান্তিক স্তরের প্রতিনিধি। এসেছেন কলাভবনে। পেয়েছেন বরাভয়। চিন্তার স্বাধীনতা। ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা। নিজে পথ কাটার স্বাধীনতা। এই ভাবে দিগন্তে দেখা দিলেন রামকিঙ্কর বেজ।
ছিলেন বিনোদবিহারীও। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি প্রখর। ম্যুরাল-এ তিনি ঘটাচ্ছেন যুগান্তর। এই তিন জনের কথা মনে পড়বেই প্রথমে। সঙ্গে আরও এক জন। নন্দলাল বসু। ঐতিহ্যে প্রোথিত, কিন্তু সেই ঐতিহ্যকে কী ভাবে নিজস্ব শিল্পভাষায় ব্যবহার করা যায়, তা করে দেখাচ্ছেন তিনি। |
নক্ষত্র। রামকিঙ্কর বেজ। |
শিল্পক্ষেত্রে বাঙালির অহঙ্কারের কথা বললে এই চারটি নামই সর্বাগ্রে মনে পড়ে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুবই মান্য শিল্পী। কিন্তু, ভারতশিল্পে আধুনিকতার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ-রামকিঙ্কর-বিনোদবিহারীর যে অবদান, তা আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়নে অতুলনীয়। এক দিকে প্রাচ্যের শিল্পধারা, পাশাপাশি পশ্চিমি প্রভাব। এই দুইয়ের সংমিশ্রণে কলাভবন ভারতশিল্পে একটি অনন্য জায়গা গড়ে তুলল।
মাঝে মাঝে শুনতে পাই, ভারতে শিল্পের আধুনিকতা নাকি ‘বম্বে প্রগ্রেসিভ আর্টিস্টস গ্রুপ’-এর (তখনও ‘মুম্বই’ শব্দটা আসেনি) হাত ধরেই এসেছিল। অর্থাৎ, মকবুল ফিদা হুসেন, এফ এন সুজা, এস এইচ রজা প্রমুখ। সেই দল দীর্ঘজীবী হয়েছিল, সদস্যরা দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে শিল্পে নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছিলেন, কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে, ‘ক্যালকাটা গ্রুপ’-এর প্রদর্শনী মুম্বই যাওয়ার পরে ‘বম্বে প্রগ্রেসিভ আর্টিস্টস গ্রুপ’-এর জন্ম!
ভারতে শিল্পের আধুনিকতার প্রসঙ্গে আরও এক জনের কথা আসবে। অমৃতা শেরগিল। তাঁর অবদানও অসামান্য, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাঁর কাজের বিশেষ ভক্ত নই। সুতরাং, আমার একটি তিমির তো রইলই, তাতে চারটি তারা। |
|
|
|
|
|