|
|
|
|
সে বড় সুখের সময় |
|
অতীতবিলাসী নই, কিন্তু সেই পুরনো সময়টার কথাই মনে পড়ে।
যখন জ্ঞান ছিল মুক্ত। বুদ্ধিটি উজ্জ্বল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় |
|
কবিমাত্রেরই
উচিত পাঁচ বছর মেয়াদে কবিত্ব করা। বলেছিলেন সেই বাকচতুর অমিত রায়। পরে, নির্জন সময়ে, ভেবে দেখেছি। তা হলে কি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বদলে যায় দেখার চোখ? প্রকাশভঙ্গি? মনের আদল? আজ যা গর্বের বলে মনে হল, তা কি পাঁচ বছর পরে ফেলে দিতে হবে?
অমিতকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কিন্তু, নিজের স্মৃতির মুখোমুখি দাঁড়ালে বুঝতে পারি, কিছু জিনিস থেকে যায়, পাঁচ বছরেরও পরে, আরও বহু দিন। বহু কাল। এমনিতে আমি মোটেই তেমন মানুষ নই যে ‘তে হি নো দিবসাঃ গতাঃ’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশপানে চেয়ে থাকব। কিন্তু, বয়স বাড়ার একটা মস্ত সুবিধা এই যে আকাশটা আরও অনেক বড় হয়ে যায়। হতেই থাকে। স্মৃতির আকাশ। সে দিকে তাকালে কিছু কথা তো মনে ভাসেই। তারই দু-একটা এই সূত্রে একটু বলি।
কথা মানে গল্প। ব্যক্তির গল্প। আবার, শুধু ব্যক্তির গল্প বললেও ঠিক বলা হবে না। আসলে, সময়ের গল্প। একটা বড় সময়ের গল্প। যে সময়টা আমার কাছে আজও গর্বের বস্তু হয়ে আছে। দু’টো গল্পের সঙ্গেই আমি জড়িয়ে। দু’ভাবে। |
|
মুক্ত বুদ্ধি। ছবি বিশ্বাস (বাঁ দিকে) এবং শিশিরকুমার ভাদুড়ি। |
প্রথম গল্পটি আমার নাট্যগুরু শিশিরকুমার ভাদুড়ির। এটাকে ঠিক গল্প বলা যায় কি না, জানি না। শিশিরকুমারের একটা মন্তব্য। আলো-ফেলা মন্তব্য। একদিন বরানগরে শিশিরকুমারের বাড়িতে গিয়েছি। তখন প্রায়ই যেতাম। সিনেমায় আসিনি তখনও। অর্থাৎ, অপুর সংসার-এর আগে। একটা বই আমার হাতে দিলেন শিশিরকুমার। একটি নাটক। দেখলাম, নাট্যকার বিদেশি। নাম বের্টোল্ট ব্রেশট। বইটি আমার হাতে দিয়ে শিশিরকুমার বললেন, পড়ো, পড়ো। ইনি হচ্ছেন এ কালের শেক্সপিয়র। পড়ো।
পরে যখন ব্রেশটের নাটকের সঙ্গে, তাঁর নাট্যধারার সঙ্গে পরিচয় বেড়েছে, তখন বারবার মনে পড়েছে, শিশিরকুমারের মুখ। তাঁর নাট্যচিন্তার সঙ্গে, নাট্য-রীতির সঙ্গে ব্রেশটীয় ভঙ্গির প্রচুর ফারাক। অথচ, তিনি সেই ‘অন্য’ ধারার নাট্যকারকেই বরণ করে নিচ্ছেন, সমকালের ‘শেক্সপিয়র’ বলে। চিত্ত কতটা উদার হলে এবং বুদ্ধি কতটা উজ্জ্বল থাকলে এমন কাজ সম্ভব!
পরের গল্পটি কাকে নিয়ে, এবং কী ভাবে, তা ক্রমশ প্রকাশ্য, তবে তার আগে ছোট্ট একটু গৌরচন্দ্রিকা জরুরি। বহুকাল আগে, আমি ব্রেশট অনুবাদ করেছিলাম। তারপর, সিনেমায় আসার পরে, এক দিন বন্ধু পীযূষ বসুর অনুরোধে টালিগঞ্জের কাছে একটি ঘরোয়া আসরে সেই নাটক পাঠের আসর। আমি পড়ব। ওদের একটি নাটকের দল ছিল, তাদেরই আমন্ত্রণ। আমি যথাসময়ে হাজির, অথচ পাঠ শুরু করা যাচ্ছে না, কারণ বন্ধুটি বারবার বলেছে, দলের সভাপতিমশাই আসবেন, তারপর শুরু।
একটু পরে সিঁড়িতে জুতোর শব্দ। সঙ্গে আর একটা আওয়াজ। লাঠি।
তিনি উঠছেন। উঠলেনও। আমার পূর্ব-পরিচিত। আমাকে দেখে স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীর গলায় বললেন, তুমি আমার এখানে আসবে, কী করে ভাবলে যে আমি থাকব না?
ছবি বিশ্বাস। ব্রেশট শুনতে এসেছেন। |
|
|
|
|
|