|
|
|
|
|
|
ঐতিহ্য |
সং মিলান্তি |
দেবাশিস ঘোষ |
হনুমান গায় শিবের গান। শিব গায় সঙের গান। পাশে খঞ্জনি বাজিয়ে নাচে দুর্গা। শিব সাজেন সনাতন খয়রা, দুর্গা সাজেন ওঁর স্ত্রী শিবানী। আর হনুমান সাজে ছেলে পবন। প্রতি বছর, বছর ফুরনোর দিনে এমনই সং সাজেন তাঁরা। ফল, নীল, চড়ক এই তিন দিন তাঁরা যান আমতার নারিট, রসপুর, সুরিয়ালা গ্রামে।
কেন যান?
‘‘মানত আছে তাই’’, বলছিলেন সনাতন, ‘‘গেল বছর যেতে পারিনি। শরীর বয় না।’’ আমতা স্টেশনের কাছে বাড়ি সনাতনদের। বাতে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শরীরটা কোনও মতে টেনে এনে সকালের রোদে বসিয়ে দেয় বাড়ির লোকেরা। খোড়ো বাড়িতে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ঘরের দেওয়ালে খঞ্জনি ঝুলছে। সনাতনের স্ত্রী শিবানী বলছিলেন, “ওরাই মেকাপ করে সাজে। আমি শুধু খঞ্জনি বাজাই।”
একটি ছেলে শাড়ি পরে গিন্নি সেজেছে। চাষা সেজেছে আর একটি ছেলে। মাঠের আলপথ ধরে তারা গান গাইতে গাইতে সাইকেলে চলেছে। শ্যামপুর থানার কুলটিকরি গ্রামের মুকিবুর রহমান বলছিলেন, “গোটা চৈত্র মাস ধরে গ্রামের ছেলেরা চৈতি সং সাজে। ভাল লাগে বলে মাঝে মাঝে সাইকেল নিয়ে ওদের সঙ্গে গাজনতলায় চলে যাই। এই লোকসংস্কৃতি আমাদের রক্তে মিশে আছে।” |
|
রামরাজাতলা |
এ গ্রামেরই সুবীর প্রামাণিক বলছিলেন, “রামনবমীর দিন এখানে রঘুনাথ জিউর রথ টানা হয়েছিল বাসুল্যা থেকে বেওড়া পর্যন্ত। আগে বড় মেলা হত। এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে। রঘুনাথ জিউর মন্দিরে পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে বসা সং তৈরি হয়। নন্দ উৎসবের দিন মধ্যপাড়ার বড় মন্দিরে আর পূর্বপাড়ার ছোট মন্দিরে সঙের অভিনয় হয়। একে বলা হয় ফার্স।”
বীরশিবপুর হরিসভা প্রাঙ্গণে তখন চৈতি সঙের গান হচ্ছে। চাষের গান গাইছেন উলুবেড়িয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তুলিকা মান্না ও কৃষিজীবী দীপক মণ্ডল। হারমোনিয়ম বাজাচ্ছেন চটিরাম কয়াল। তুলিকা বলছিলেন, “এখানে চৈত্র মাসের শেষ কয়েক দিন সঙের অনুষ্ঠান দেখার জন্য খুব ভিড় হয়। |
|
|
বাজেশিবপুর ম্যাড্রাসি লেন |
|
সঙের প্রতিযোগিতাও হয় অনেক জায়গায়।” লোকসংস্কৃতি গবেষক তপন কর বলেন, “সঙের প্রতিযোগিতার বাহুল্য শুরু আশির দশকের গোড়া থেকে। সত্তরের দশকের শেষ দিকে সরকারি উদ্যোগ ও আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় জেলার লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে বরাদ্দ হয়েছে।”
|
দেউলটি চৈতি সং |
গত বছর এখানকার সঙে বিষ্ণুর নাভিপদ্মের উপর ব্রহ্মা সেজে বসেছিল শেখ রাজা। বিষ্ণু সাজা গপ্পু বর্মা বলছিলেন, “ঠিক যেন টিভি সিরিয়ালের মতো।” আর এই থিম যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছিল, সেই আসপান জানকী রাও বলছিলেন, “চিৎপুর থেকে মেকাপ ম্যান আনা হয়েছিল। এক একটা সঙের থিমের জন্য খরচ পড়েছিল তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।” হায়দরাবাদ থেকে শিবপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা আসপান সোমলতার কথায়, “মেকাপের জাদুতে সত্যি সত্যিই যশোদা
হয়ে গিয়েছিলাম।”
বাজেশিবপুর থেকে জিটি রোডের লাগোয়া ম্যাড্রাসি লেন বস্তি। ক্যারম ছেড়ে উঠে এলেন সুদর্শন যুবক নৌসাদ। বললেন, “অনেক বার সং সেজেছি। এক বার সেজেছিলাম রামায়ণ...লব-কুশের মধ্যে কোনও একটা। ওয়ান্ডারফুল ক্যারেক্টার। কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া থেকে কিনে এনেছিলাম রামায়ণ।”
ফজির বাজারের জেলিয়াপাড়া থেকে এ বারেও রামনবমী উপলক্ষ্যে হনুমান বিসর্জনের সং বের হয়েছিল। ‘‘৮৩ সাল থেকে টানা এখানকার সং বের হচ্ছে।” বলছিলেন প্রকাশকুমার সাউ। এ বার নেহা চৌধুরী, শিবানী চক্রবর্তী, প্রিয়ঙ্কা বেহেরা-রা বৈষ্ণোদেবী, ভারতমাতার সং সাজার আনন্দে মশগুল। |
|
|
|
|
|