নববর্ষের পুণেতে আজ দাদা বনাম ধোনি
কাল পয়লা বৈশাখ না?
পুণের ম্যারিয়ট হোটেলে নিজের ঘরে বসে যখন বলছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, কে বলবে বছর চারেক হয়ে গেল তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসৃত!
মনে হবে এইমাত্র তিনি ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে হোটেলে চেক-ইন করলেন। মনে হবে তিনি সেই ব্যস্ত ক্রিকেট ব্যাপারী যিনি বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে আজ এই বন্দর, কাল সেই বন্দর ঘুরে বেড়ান। এইমাত্র দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল পেরিয়ে হোটেলে ঢুকে স্নান-টান সারলেন। চুল পাতিয়ে আছড়ানো। একটু আগে ঘরভর্তি করে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ টিমের বোলিং কোচ। কেউ ব্যাটিং কোচ। কেউ টিমের সহকারি কোচ। কেউ মনোবিদ। কাল যে আবার আইপিএলের ডার্বি ম্যাচ এখানে-- দাদা বনাম ধোনি!
টিমের সব মস্তিষ্করা জড়ো হয়েছিলেন যুদ্ধের নকশা তৈরি করতে। মিটিং হয়ে যাওয়ার পর সবাই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সৌরভ তাঁদের আবার ডেকে আনলেন। অ্যালান ডোনাল্ড প্রায় নিজের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। লম্বা করিডোরে সৌরভের ঘর এ মুড়োয় তো তাঁর ও মুড়োয়। ছুটতে ছুটতে আবার এলেন। হয়তো নতুন কোনও ক্রিকেটীয় পোকা নড়ে উঠেছে পুণে অধিনায়কের মাথায়। সে সব দেখতে দেখতে মনে হবে ইনি সেই পুরনো সৌরভ। যাঁর জীবনে কোনও অষ্টমী নেই। দশমীর প্রতিমা বিসর্জন যাত্রায় পাঞ্জাবী পরে নাচ নেই। মেয়ে সানার সঙ্গে হোলি খেলা নেই। কমেন্ট্রি বক্সে কোট-টাই পরে ঢোকা নেই। দাদাগিরির সেটে রাণি মুখোপাধ্যায়কে হট সিটে বসিয়ে গুগলি রাউন্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ানোর চিত্রনাট্য নেই। আছে শুধু রোদ-জল-ঝড়ের মধ্যে নিংড়ে নেওয়া ক্রিকেটীয় নিষ্ঠা আর আত্মত্যাগ।
এমনিতে নববর্ষের একটা আমেজ পুণেতে বসেও টের পাওয়া যাচ্ছে। আরও বেশি করে পাওয়া গেল ম্যারিয়ট হোটেলে। ধোনির বউ সাক্ষী এসেছেন। পরিষ্কার বাংলায় কথা বলতে থাকলেন বাঙালি সহারা কর্তার সঙ্গে। সৌরভের ঘরে এক হোটেল কর্মী দু’টো পোঁটলা নিয়ে এলেন। একটার মধ্যে এ বারের আইপিএলে আলোচনা ফেলে দেওয়া লাল জুতো। সৌরভ পরিষ্কার বাংলায় তাঁকে বললেন, “ভাই, আবার জুতো!”
কিন্তু সাক্ষীর স্বামী কোথায়? সন্ধ্যায় দেখা গেল স্থানীয় এক বন্ধুর অনুরোধে একটি অনুষ্ঠানে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন। সেই ক্যাপ্টেন কুল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচ ২০৫ তাড়া করে জিতে এসেছেন। জিনসের পকেট দেখিয়ে বললেন, “মোবাইল রাখা বন্ধ করে দিয়েছি।” তিনি যখন বেরোচ্ছেন, পুণে ওয়ারিয়র্স ঢুকছে। প্যাডি আপটনকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন ধোনি। তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সারথি। সৌরভের পুণেতে এ বারের অন্যতম প্রধান অস্ত্র মার্লন স্যামুয়েলস এর পর টেনে নিয়ে গেলেন ধোনিকে। দেখে মনেই হবে না কোনও যুদ্ধের আঁচ আছে বলে। মনে হবে গেরস্থ আর অতিথিদের মিলনস্থল। সহারা ভারতীয় টিমের স্পনসর। এই ধোনি, রায়না-রা সহারা পরিবারের সদস্যের মতো। পুণে কর্তাদের তাই দেখা গেল আতিথেয়তা নিয়ে একই রকম সজাগ।
সৌরভ তেমনই ক্রিকেটীয় যুদ্ধ নিয়ে সজাগ। চেন্নাই সুপার কিংস এমন একটা স্টেশন যা তাঁর ক্রিকেটজীবনে কাঁটার মতোই বিঁধে আছে। কেকেআর অধিনায়ক থাকার সময় চেন্নাইকে হারাতে পারেননি। যেমন পারেননি সচিনের মুম্বইকে মুম্বইতে হারাতে। এ বার পুণে অধিনায়ক হিসেবে মুম্বই-বধ সম্পন্ন করেছেন। ধোনির চেন্নাইকে হারাতে পারেন কি না তা নিয়ে ক্রিকেটমহল প্রবল কৌতূহলী। দাদা বনাম ধোনি? সৌরভ বললেন, “কী হচ্ছে বলুন তো? যেখানেই যাচ্ছি একটা এ বনাম সে করে দেওয়া হচ্ছে। মুম্বইতে দেখলাম গাঙ্গুলি ভার্সেস তেন্ডুলকর। ও দিকে কবে থেকে শুনছি দাদা ভার্সেস খান। এখানে এখন আবার দাদা ভার্সেস ধোনি। এর পর দিল্লিতে গেলে বলা হবে সৌরভ ভাসের্স সহবাগ।” একটু পরে বলতে বাধ্য হলেন, “আইপিএলের ধারণাটাই তো এটা। শহর বনাম শহর। তাতে এ বনাম সে এসে যাচ্ছে।”
টিভি-তে আবার কেকেআর-এর ম্যাচ চলছে! সব রং মিলেমিশে একাকার যেন। সৌরভ ম্যাচ দেখতে দেখতে এক বার মন্তব্য করলেন, “বল তো বাঁই বাঁই করে ঘুরছে।” তাঁর দলে স্পিনার বেশি এটা তক্ষুনি মনে পড়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু ইডেনের দাদা বনাম খান ৫ মে। আপাতত নববর্ষে দাদা বনাম ধোনি। ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম দুই অধিনায়ক। ধোনির আমলে সৌরভের ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে ছিটকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ভক্তকূলের মধ্যে একটা বিভাজনই যেন হয়ে গিয়েছে। দাদার ভক্ত মানে অবধারিত ভাবে সে ধোনিকে সহ্য করতে পারবে না। এ দিন পুণের হোটেলে দাঁড়িয়ে এক সৌরভ-ভক্ত যেমন বলছিলেন, “গত এক বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেট এমন ম্যালেরিয়া উপহার দিয়েছে যে, পুণে ওয়ারিয়র্সের হয়ে দাদার ক্যাপ্টেন্সি দেখাটা হচ্ছে কুইনাইন। ভীষণ ফুরফুরে করে দেওয়া একটা ব্যাপার।”
আর অধিনায়ক সৌরভ আগেকার সেই ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলির মতো টিভি-র রিমোট ঘোরাতে ঘোরাতে দু’টো মন্তব্য করলেন। প্রথমটা মোহালিতে তাঁদের হার নিয়ে। “ভিজে পিচে টস হেরে মোহালিতে ব্যাট করতে হল। ওরা টস হারলে ওদেরও একই অবস্থা হত।” দ্বিতীয়টা ধোনিদের ২০৫ তাড়া করে জেতা নিয়ে। “চেন্নাই কাল খুব ভাল জিতেছে। ওরা ভাল টিম। কিন্তু উনিশতম ওভারটা কে করেছে আর সেটাতে কত রান হয়েছে খেয়াল আছে? বিরাট কোহলি ২৮ রান!”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.