‘অপারেশন’ সারতে নিজের দুই ছেলেকেই পাঠিয়েছিল প্রৌঢ় মানিক চক্রবর্তী ওরফে লক্ষ্মীকান্ত। সঙ্গে ছেলেদের দুই বন্ধু। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের জালে ধরা পড়ল সকলেই।
পুলিশের দাবি, মানিকের দুই ছেলে ও তাদের সঙ্গীরাই পোলবার পাটনা গ্রামের কৃষক কৃষ্ণচন্দ্র মালকে খুনের ঘটনায় জড়িত। লুঠপাটও চালিয়ে দেওয়ার আগে নিহতের স্ত্রীকে ধর্ষণও করে তারা। চার জনকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রাজা দাসকে ধরা হয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে। অন্য জন বাবু কর্মকার ধরা পড়েছে হুগলির ব্যান্ডেল থেকে। গ্রেফতার হয়েছে মানিককেও। পাঁচ জনকেই শুক্রবার চুঁচুড়া আদালতে তোলা হয়। বিচারক মানিককে ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অশেষ বিশ্বাস বলেন, “ধৃতেরা সকলেই অপরাধের কথা কবুল করেছে। পুলিশের বিশেষ একটি দল গড়ে দুষ্কৃতীদের ধরা হয়েছে। লুঠ হওয়া গয়না এবং কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে। চারটি মোবাইলও উদ্ধার করা হয়েছে। |
গত ২৭ মার্চ ঘটনাটি ঘটে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিহতের স্ত্রী এবং তাঁর ‘প্রেমিক’ জিকো পাল কৃষ্ণচন্দ্রবাবুকে খুনের পরিকল্পনা করে। বলাগড়ের বাসিন্দা জিকো এবং নিহতের স্ত্রী দু’জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কৃষ্ণচন্দ্রবাবুকে খুনের জন্য মানিক চক্রবর্তীকে ‘সুপারি’ দেয় জিকো। ৩ লক্ষ টাকায় রফা হয়। মানিক নিজের দুই ছেলে বিশ্বজিৎ ও অভিজিৎ এবং তাদের দুই বন্ধু রাজা ও বাবুকে খুনের কাজে লাগায়। তবে ঘটনার রাতে মানিক কৃষ্ণচন্দ্রবাবুদের বাড়িতে যায়নি। জিকোর সঙ্গে বাকি চার জন সেখানে গিয়ে ‘অপারেশন’ সারে। ওই বাড়ি থেকে সোনা-রূপোর গয়না এবং নগদ টাকাও লুঠ করে তারা। তবে, পালানোর আগে জিকোর গলায় অস্ত্র ধরে তার ‘প্রেমিকা’ অর্থাৎ নিহতের স্ত্রীকে পর পর ধর্ষণ করে ওই দুষ্কৃতীরা। কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর স্কুল-পড়ুয়া ছেলেকে ঠাকুর ঘরে আটকে রাখে ‘অপারেশন’ চলাকালীন।
ঘটনার পরের দিন বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায়। খুন, ডাকাতি এবং ধর্ষণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কয়েক দিন পরেই জিকো এবং নিহতের স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে, বাকিরা এত দিন অধরা ছিল। সূত্র মারফত খবর পেয়ে সিআই (সদর) সুবীর রায় এবং পোলবা থানার ওসি অতীশ দাসের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের ৮ সদস্যের একটি দল মুর্শিদাবাদে যায়। ‘ছদ্মবেশ’ ধরে সেখানকার বড়ঞা থেকে প্রথমে মানিক এবং তার ছোট ছেলে বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরে স্থানীয় খড়গ্রাম বাজারের একটি মিষ্টির দোকান থেকে গ্রেফতার করা হয় মানিকের বড় ছেলে অভিজিৎ এবং তার এক বন্ধু রাজাকে। ব্যান্ডেলের নেতাজিনগর কলোনি থেকে আর এক জন ভাড়াটে দুষ্কৃতী বাবুকে ধরা হয়।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, ধৃত ৫ জনই দাগি দুষ্কৃতী। এদের বিরুদ্ধে ডাকাতি-রাহাজানির অভিযোগ রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। পুলিশের কাছে মানিক জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদে তাদের আসল বাড়ি। এক সময়ে তারা উত্তর ২৪ পরগনার বরাহনগরে থাকত। রাজা এবং বাবুর বাড়িও মুর্শিদাবাদে। বাবু ব্যান্ডেলের নেতাজিনগরে ভাড়া থাকত। মানিক ব্যান্ডেলে মদ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। গাড়িও চালাত। ব্যান্ডেলেই কোনও ভাবে জিকোর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। |