স্কুল চলছিল পুরোদমে। হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ল ঝাঁঝালো গ্যাসের তীব্র গন্ধ। প্রথমে অস্বস্তি। তার পরে শুরু হল বমি। পেটে যন্ত্রণা। অসুস্থ হয়ে পড়ল অন্তত ৪০ জন ছাত্রী। কয়েক জন শিক্ষিকাও। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটে মধ্য হাওড়ায় বনবিহারী বোস রোডের শ্রী জৈন বিদ্যালয়ে। অসুস্থ ছাত্রীদের এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
গ্যাসটা কী? হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার অমিতকুমার রাঠোর জানান, প্রাথমিক ভাবে গ্যাসটি অ্যামোনিয়া বলেই মনে হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাকা হচ্ছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।
গ্যাস ছড়াল কোথা থেকে?
সন্ধ্যাবাজারের কাছে ওই স্কুলের সামনেই একটি শ্মশান আছে। সেই শ্মশান বা এলাকার কোনও কারখানাই গ্যাসের উৎস বলে প্রথমে মনে করা হচ্ছিল। পরে জানা যায়, ওই দু’টি জায়গা থেকে গ্যাস ছড়ায়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, ওই স্কুলেরই ল্যাবরেটরি থেকে কোনও ভাবে গ্যাস বেরিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। |
শ্রী জৈন বিদ্যালয়ের বাইরে এক অসুস্থ ছাত্রী। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র। |
ঠিক কী ঘটেছিল? এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চত্বর জুড়ে গ্যাসের ঝাঁঝালো কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রী ঝাঁঝালো গন্ধের চোটে বমি করতে থাকে। তারা তো বটেই, অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন শিক্ষিকাও। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঝাঁঝালো গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা স্কুলে। আরও কিছু ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। ঋদ্ধি শর্মা নামে এক ছাত্রী নার্সিংহোমে শুয়ে বলল, “প্রথমে ঝাঁঝালো গন্ধ। তার পরে পেটে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হল। বারবার গা গুলিয়ে উঠছিল।” জেলার পুলিশকর্তা এবং হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল ঘটনাস্থলে আসেন।
স্কুল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্কুলের পাশেই বাঁশতলা শ্মশানঘাটের বেওয়ারিশ লাশ পোড়ালে প্রায়ই এই ধরনের গন্ধ বেরোয়। এ দিনের ঝাঁঝালো গন্ধ সেখান থেকেও আসতে পারে। কিন্তু মেয়র ও পুলিশকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেন, এ দিন সকালে ওই শ্মশানে কোনও বেওয়ারিশ লাশ পোড়ানো হয়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ওলগা ঘোষ বলেন, “এলাকার কয়েকটি কারখানা থেকে মাঝেমধ্যেই কটু গন্ধ ছড়ায়। আমরা বারবার পুরসভাকে জানিয়েছি। স্থানীয় বিধায়ককেও জানানো হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি।” স্কুলের কাছাকাছি কারখানায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস মজুত থাকে ঠিকই। তবে সেখান থেকে গ্যাস লিক করার কথা অস্বীকার করেন কারখানা-কর্তৃপক্ষ।
শেষে পুলিশের সন্দেহ হয়, ওই স্কুলেরই ল্যাবরেটরি থেকে গ্যাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। সকালে ছাত্রীদের। দিবা বিভাগে ছাত্রদের। পাঁচতলায় বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে দেখা যায়, ঝাঁঝালো গন্ধের তীব্রতা সব থেকে বেশি সেখানেই। একটি ভাঙা গ্যাসের জারও পড়ে থাকতে দেখা যায় ল্যাবরেটরিতে। পুলিশের অনুমান, ওই ল্যাবরেটরিতেই কোনও ভাবে জার ভেঙে গ্যাস বেরিয়েছে।
এসিপি রাঠোর বলেন, “তখন ল্যাবরেটরিতে সাফাইয়ের কাজ চলছিল। সেই সময়েই কোনও ভাবে গ্যাসের জার ভেঙে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ওই সময় ল্যাবরেটরিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” মেয়র মমতা জয়সোয়াল জানান, প্রথমে শ্মশানকে দোষারোপ করা হলেও পরে প্রমাণিত হয়েছে, সেটা সত্যি নয়। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনা ঘটেছে স্কুল-কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই। নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে তাঁরা পুরসভার ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছেন। |