এ যেন মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে এক ধরনের উলট-পুরাণ।
সপ্তাহে অন্তত একটি সন্ধে যদি নিত্যসঙ্গী মোবাইল ফোনটা বন্ধ রাখা যায়, তা হলে নাকি কর্মজীবনে উন্নতির সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। এবং শুধু তা-ই নয়, এতে নাকি লুকিয়ে রয়েছে ‘সুখী’ জীবনের চাবিকাঠি। অন্তত এই রকমই দাবি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক দল গবেষকের। কিন্তু তা কী করে সম্ভব?
সম্ভব। অন্তত একটি ব্রিটিশ দৈনিকে প্রকাশিত ওই সমীক্ষার রিপোর্টে সে রকম ছবিই উঠে এসেছে। তিন বছর ধরে চলা ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন বস্টনের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রায় ১৪০০ কর্মী। তাঁদেরকে সপ্তাহে একটি দিন সন্ধে ছ’টার পর সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন গবেষকেরা। এমনকী সেই সময় কাজের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগই যাতে না থাকে, তার জন্য তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।
তাতে দেখা যায়, যে সব কর্মী সপ্তাহে একটি সন্ধে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছিলেন, তাঁরা নিজেদের কাজ নিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। শুধু তা-ই নয়, এই নতুন নিয়মে তাঁরা আগের তুলনায় অনেক ভাল কাজও করতে পারছেন বলে মত ওই কর্মীদের। কিন্তু এতে কর্মজীবনে উন্নতি না হয় হল, তাতে আখেরে লাভটা কী?
লাভ রয়েছে। ওই গবেষকদলের মূল কাণ্ডারী, অধ্যাপক লেসলি হারলো জানালেন, এই কর্মীরা সমীক্ষা চলাকালীন পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটিয়েছেন। এমনকী, সেই সময়, তাঁদের সামাজিক মেলামেশা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও বেড়ে যায়। এবং অধ্যাপক হারলোর মতে, এ সবই সম্ভব হয়েছে মোবাইল ফোনের সঙ্গে অন্তত একটি সন্ধে সমস্ত ‘সখ্যতা’ ত্যাগ করার দৌলতে।
তিনি আরও জানান, অফিসের ধরাবাঁধা সময়টুকু ছাড়াও কাজের জগতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে মোবাইল ফোনের জুড়ি মেলা ভার। এমনকী, রাতে ঘুমোনোর সময়ও মোবাইল কাছছাড়া করেন না অনেকেই।
কিন্তু, তাতে কাজের দুনিয়া ছাড়া বাকি সব কিছু থেকেই ধীরে ধীরে দূরে চলে যান তাঁরা।
তাই সপ্তাহে একটি সন্ধে মোবাইল ব্যবহার না করলে কর্ম-জীবনের ‘চক্রব্যূহ’ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাতে আখেরে উপকৃত হবে মানুষের পারিবারিক এবং পেশাদার দুই জীবনই।
তবে কি ‘একটি দিন, মোবাইলবিহীন’,এই মন্ত্রেই লুকিয়ে রয়েছে সুখী জীবনের চাবিকাঠি? |