খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে নস্যাৎ করে কার্যত একা হাতে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার আগেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার পথে দময়ন্তী সেন। মঙ্গলবার দুপুরে মহাকরণে পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট বোর্ডের (পিইবি) বৈঠকে তাঁকে রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) পদে নিয়োগ করে ব্যারাকপুরে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর। যদিও রাত পর্যন্ত সেই সুপারিশে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের সিলমোহর পড়েনি।
পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসার পরেই মহাকরণে দাঁড়িয়ে ওই ঘটনাকে ‘সাজানো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাও অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যম পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের এহেন সেই বক্তব্যের পরেও ‘কিছু একটা ঘটেছে’ জানিয়ে তদন্তে অটল ছিলেন দময়ন্তী। তাঁর নিরলস চেষ্টাতেই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের উপর থেকে রহস্যের জাল ওঠে। গ্রেফতার হয় তিন অভিযুক্ত। কিন্তু মূল অভিযুক্ত কাদের খান এখনও অধরা। ওই মামলায় চার্জশিট পেশের সময়ও এখনও পার হয়নি। এই অবস্থায় দময়ন্তীকে গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তদন্তের অগ্রগতি ব্যাহত হবে বলে লালবাজারের পুলিশ কর্তাদের বড় অংশের অভিমত।
অবশ্য পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে দময়ন্তীর ‘সাফল্যের’ পর থেকেই তাঁর বদলি নিয়ে পুলিশ মহলে গুঞ্জন ছিল। সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়, যখন নজিরবিহীন ভাবে মহাকরণে এসে তিনি দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। সেই বৈঠকে রঞ্জিত পচনন্দা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরও এক পুলিশ কর্তা, যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম। বৈঠকের পরে দৃশ্যত বিধ্বস্ত দময়ন্তী মহাকরণে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্তের সাফল্য আমার একার নয়। এটা টিমওয়ার্ক। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশেই আমরা কাজ করেছি।” প্রবল চাপের মুখেই সে দিন তিনি এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আর তার পর থেকেই ওই তদন্ত নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ আঁটেন দময়ন্তী।
পুলিশ সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, দময়ন্তীর পাশাপাশি জাভেদ শামিমও সে দিন মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের ‘ভর্ৎসনার’ শিকার হয়েছিলেন। বৈঠকে থেকে বেরিয়ে দময়ন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকেও বলতে হয়, “কলকাতা পুলিশে ‘গ্রুপইজম’-এর কথা উঠেছে। তাতে আমার নামও জড়িয়েছে। কলকাতা পুলিশ একটা পরিবারের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে।”
বস্তুত তখন থেকেই ওই দুই পুলিশ কর্তাকে ‘উপযুক্ত সময় দেখে’ বদলি করার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে যায় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। দময়ন্তীর ক্ষেত্রে সেই সুপারিশ মঙ্গলবার পাঠিয়ে দিল পিইবি। শামিমকেও শীঘ্রই লালবাজার থেকে সরানো হবে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে। ইডেনে আইপিএল-এর পরে তাঁকে বদলির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে বলে ওই সূত্রের খবর।
এ দিন পিইবি-র বৈঠকে দময়ন্তী ছাড়াও ৫০-৬০ জন পুলিশকর্তার বদলি বা পদোন্নতির ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশ পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। তিনি মুখ্যসচিব মারফত তা পাঠিয়ে দেবেন মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য। চলতি সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশ কার্যকর করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। দময়ন্তী বদলি হলে লালবাজারে তাঁর জায়গায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) শ্রী ত্রিপুরারি অথবা যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন) পল্লবকান্তি ঘোষকে নিয়ে আসা হতে পারে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। |