|
|
|
|
ল্যান্ডব্যাঙ্কে বিপত্তি |
খাসজমির ৭৫ শতাংশই বেহাত পশ্চিমে |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
অব্যবহৃত খাস জমি পড়ে থাকার কথা ৩৯ হাজার ৬১৮ একর। অথচ ব্যবহার-উপযোগী খাস জমি রয়েছে মাত্রই ১ হাজার ৭৬৩.৫৫ একর! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্পের জন্য ‘ল্যান্ড-ব্যাঙ্ক’ তৈরি করতে গিয়ে এমনই সঙ্কটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
খাতায়-কলমে যে পরিমাণ খাস জমি পড়ে থাকার কথা, তার ৭৫ শতাংশই চলে গিয়েছে বেআইনি দখলদারদের হাতে। কিছু জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আর বাকি জমিতে রয়েছে খাল-বিল-ঝিল। শিল্পের জন্য বস্তুত জমিই নেই জেলায়! যদিও এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-র মন্তব্য, “ল্যান্ড-ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য ব্যবহার-উপযোগী কত পরিমাণ জমি জেলায় রয়েছে, রাজ্য সরকার তা জানতে চেয়েছিল। আমরা সেই তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি।”
নথিপত্র ঘেঁটে প্রথামিক ভাবে প্রশাসন দেখেছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরে খাস জমি পড়ে থাকার কথা ৩৯ হাজার ৬১৮ একর। রাজ্য সরকারের কাছে সেই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়াও হয়েছিল। পরে রাজ্য সরকার জমির চরিত্র জানতে চায়। কারণ, জমি থাকলেই তো হবে না, তা ব্যবহার-উপযোগী হতে হবে। সেই জমিতে শিল্পই হোক বা পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু জমি যদি বেদখলই হয়ে যায় বা জলা থাকে, তা হলে আর ব্যবহারযোগ্য বলা যায় না। তাই প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাঁরা যেন সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন জমির প্রকৃত চরিত্র।
ওই নির্দেশের পরেই জেলা ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা জমি পরিদর্শন করে রিপোর্ট তৈরি করেন। আর তাতেই দেখা যায়, ব্যবহার-উপযোগী জমির পরিমাণ মাত্রই ১ হাজার ৭৬৩.৫৫ একর! মোট প্রায় সাড়ে ৩৯ হাজার একর খাস জমির মধ্যে ২৪ হাজার ৫৮৩ একরই বেদখল হয়ে রয়েছে। কোথাও গরিব মানুষের বসতি তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও প্রভাবশালী লোকজন জমি দখল করেছেন। তৈরি হয়ে গিয়েছে বাড়ি। কেউ আবার পাথর-খাদান তৈরি করে ব্যবসাও ফেঁদেছেন। আরও ৩ হাজার ৯৮২ একর জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সে জমি খাস না রায়তি, সে নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ৯ হাজার একরেরও বেশি জমিতে রয়েছে খাল-বিল-ঝিল।
এই অবস্থায় শিল্প গড়ার জন্য কোনও সংস্থাকে খাস জমি দেওয়াই অসম্ভব। একে তো প্রশাসনের হাতে ব্যবহার-উপযোগী জমি অত্যন্ত কম, তার উপর সেই সামান্য জমিও রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কোথাও ৫ একর তো কোথাও ১০ একর, আবার কোথাও এক একরেরও কম। অথচ, শিল্পের জন্য এক-লপ্তে অন্তত ১০০ একর জমি জরুরি। কিন্তু প্রশাসনিক হিসাবই বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়বেতা ১, ২, দাঁতন ১, ২, মোহনপুর ও পিংলা--এই ৬টি ব্লকে ব্যবহার-উপযোগী এক ছটাকও খাস-জমি নেই। ব্যবহার-উপযোগী খাস-জমি সব থেকে বেশি রয়েছে জামবনি ব্লকে। পরিমাণ ৪৩০.৭২ একর। বিনপুর-১ ব্লকে রয়েছে ৪২১.৯৯ একর, শালবনিতে ৩০৮.০৫ একর। তা-ও এক-লপ্তে নয়। জামবনি, বিনপুর, শালবনি ছাড়া জেলার ২৯টি ব্লকের কোনওটিতেও আর একশো একরের বেশি ব্যবহার-উপযোগী খাস-জমি নেই। ১০০ একরের কাছাকাছি জমি রয়েছে খড়্গপুর-১ (৮৫.৬৪ একর), কেশপুর (৮৭.৭৪ একর), ঝাড়গ্রাম (৮৭.৮৭ একর), চন্দ্রকোনা-২ (৮০.৭২ একর) ব্লকে। এই অবস্থায় আগে সরকারের কাছ থেকে খাস-জমি নিয়ে ফেলে রাখা সংস্থার জমি ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই জমিগুলি ধাপে ধাপে ফেরৎ নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তারই বক্তব্য, “এ ভাবে কতটা জমি উদ্ধার হবে, সংশয় রয়েছে। বড় কোনও শিল্প করার মতো জমি এ ভাবে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।”
তাই কোনও উদ্যোগপতি এলে তাঁদের সরাসরি জমি কিনতে বলাই ‘পথ’ বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
কিন্তু দখল হয়ে যাওয়া খাস জমি উদ্ধারে কী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? জেলা প্রশাসনের কেউ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এক পদস্থ কর্তার কথায়, “রাজ্য সরকারকেই এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন নির্দেশ হবে, তেমন ব্যবস্থাই করা হবে।” রাজ্যে জমি-রাজনীতির স্পর্শকাতরতার মধ্যে দখলদারদের কাছ থেকে খাস-জমি উদ্ধারে সরকার কতটা উদ্যোগী হবে, সে নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তার মধ্যেও। জমি নিয়ে নয়া-জটে সরকারও বিড়ম্বনায়। কয়েক দিন আগে তাই ফের জমির চরিত্র নিয়ে আরও নির্দিষ্ট তথ্য পাঠাতে বলেছে রাজ্য। আর তাতেই জেলা প্রশাসন ফের আতান্তরে। |
|
|
|
|
|