শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা কংগ্রেস পার্টি অফিস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার নিন্দা করলেন বহরমপুরের নাগরিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এখনই রাশ না টানলে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বেড়ে যেতে পারে। তার আঁচ এসে পড়বে সাধারণ মানুষেরও গায়ে।
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায়ের সাফ কথা, “বহরমপুর শান্তিপ্রিয় শহর বলে পরিচিত। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিব্রত বোধ করছেন। এর প্রভাব স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও পড়বে ভেবে আতঙ্কিত বোধ করছি।” শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তের কথায়, “সাধারণ মানুষ চান স্বস্তিতে থাকতে। জনতার সমর্থনে বিরোধী দলের বা শাসক দলের ক্ষমতার অংশীদার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের উচিত সেই স্বস্তির পরিস্থিতি বজায় রাখা। তার বদলে মানুষ আতঙ্কিত বোধ করছেন।” ওই ঘটনা স্বাভাবিক চলাফেরা করার ক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটবে বলেই বহরমপুরের নাগরিকদের মত। তাঁদের বক্তব্য, সংঘর্ষ এক বার শুরু হলে তা ক্রমাগত চলতেই থাকে। তাতে সাধারণ জনজীবন বিপন্ন হয়। ব্যবসায়ী নিখিল মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। নাগরিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হবে। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়া থেকে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হবে অভিভাবকদের। এজন্য সব রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই উচিত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আচরণ সংযত করা এবং পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।” |
সন্দীপন মজুমদার বলেন, “যে কোনও নির্বাচন এগিয়ে এলেই এলাকা দখলের একটা চেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু সেই লড়াই যদি উন্নয়ন বা মতাদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ থাকত না। বরং তা গণতান্ত্রিক চেতনাকেই প্রসারিত করত। কিন্তু যে কোনও ভাবে ক্ষমতা দখল যখন লক্ষ হয়ে দাঁড়ায়, তখন নীতি-আদর্শ বিসর্জিত হতে থাকে। তারই একটা রূপ হচ্ছে সন্ত্রাস, যা সকলের কাছে উদ্বেগজনক।” তাঁর কথায়, “সমস্ত রাজনৈতিক দল যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে যথার্থ মর্যাদা দেয়, তাহলে মানুষের প্রাণের মূল্যে ক্ষমতা দখল নিন্দনীয় বলে বিবেচিত হবে। এই অবস্থায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের উচিত, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে একটা সীমারেখা বজায় রাখা এবং তা রাখতে সমর্থকদের অনুপ্রাণিত বা বাধ্য করা।”
সরকারি কর্মী চন্দ্রপ্রকাশ দে’র মত, “শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে ওই জেলা কার্যালয় এবং তার ঢিল ছোড়া দূরত্বে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়-আদালত-জেলা প্রশাসনিক ভবন। এখন ব্যস্ততম ও জনবহুল এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করবেন। ওই অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে পুলিশ-প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গেরও উচিত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সংযত করা।”
নাট্যকার শক্তিনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রকৃত ঘটনা কী আমার জানা নেই। তবু বলছি, পারস্পরিক রাজনৈতিক দলগুলির পার্টি অফিসের আক্রমণের নজির বহরমপুরে নেই। ওই ঘটনা সাধারণ মানুষকে চিন্তায় ফেলছে।” |