|
|
|
|
আয় বাড়েনি, তৃণমূলের পুরসভা ‘চরম’ অর্থসঙ্কটে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
‘চরম’ আর্থিক সঙ্কট চলছে মেদিনীপুর পুরসভায়। মাসে যেখানে আয় হচ্ছে গড়ে ৪১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা, সেখানে ব্যয় হচ্ছে ৪১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা! এখনই পুরসভার কাছ থেকে বিদ্যুৎ দফতরের প্রাপ্য হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) এবং ব্যাঙ্ক-লোনের কিস্তি জমা না-দেওয়া মিলিয়ে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা! ফলে কর্মচারীদের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করার অভিযোগও উঠছে। কেন এই অবস্থা? পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মাসে যে পরিমাণ টাকা আয় হয়, তার অধিকাংশই চলে যায় বিদ্যুৎ-বিল মেটাতে। আগামী দিনে শহরে পানীয়জলের মাস্টার-প্ল্যান চালু হলে বিদ্যুৎ-বিল আরও বাড়বে। তখন সঙ্কট আরও ‘চরমে’ পৌঁছনোর আশঙ্কা।
এই অবস্থায় পরিষেবা ‘ব্যাহত’ হওয়ারও আশঙ্কা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর-শহর মেদিনীপুর। শহরের চেহারা দ্রুত বদলাচ্ছে। আশপাশে গড়ে উঠছে নতুন বসতি। বাড়ছে জনসংখ্যা। পুর-পরিষেবা ঠিক মতো মেলে না বলে এখনই ক্ষোভ বাড়ছে। তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য দাবি, “এই পরিস্থিতি আজকে তৈরি হয়নি। আগে থেকেই রয়েছে।” তাঁর কথায়, “আয়ের বেশিটাই যদি বিদ্যুতের বিল মেটাতে চলে যায়, তা হলে এই অবস্থা হবেই!” এ ক্ষেত্রে পুরপ্রধানের অভাবনীয় আর্জি, “বিদ্যুৎ-বিল যদি রাজ্য সরকার দেয়, তা হলেই আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।” রাজ্যের অন্য কোনও পুরসভা এমন ‘সুবিধা’ পায় না (পুরসভাকেই বিদ্যুৎ-বিল মেটাতে হয়), মেদিনীপুরই বা পাবে কেন? তার উত্তর অবশ্য দিতে পারেননি প্রণববাবু।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্য অবশ্য সঙ্কটের জন্য পুর-কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “সব ক্ষেত্রেই পরিকল্পনার অভাব। পুরসভা যে ভাবে চলা উচিত, এখানে সে ভাবে চলেই না। কর্তৃপক্ষ উদাসীন।” পুরসভার তীব্র আর্থিক-সঙ্কট নিয়ে ক’দিন আগে পুরপ্রধানকে রিপোর্ট দিয়েছিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সেই রিপোর্ট পেয়ে ৩০ মার্চ বিশেষ বোড-মিটিংও ডেকেছিলেন পুরপ্রধান। কিন্ত ওই দিন প্রস্তাবিত মিটিং হয়নি। বোর্ড-মিটিং নিয়েও এ ভাবেই তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট পরিচালিত পুর-কর্তৃপক্ষ ‘খামখেয়ালি’ করে চলেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
পুরপ্রধানকে দেওয়া রিপোর্টে অ্যাকাউন্ট্যান্ট উল্লেখ করেছেন, মাসে পুরসভার গড়ে কত আয় হয় এবং কত ব্যয় হয়। বলা হয়েছে মাসে আয় যেখানে ৪১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা, সেখানে ব্যয় হয় ৪১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ-বিল (আংশিক), ঠিকা শ্রমিকের বেতন, টেলিফোন-সহ বিভিন্ন খাতেই এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। সেই সঙ্গে এও উল্লেখ করা হয়েছে, আর্থিক ঘাটতির জন্য বিদ্যুৎ-বিলের একটা বড় অংশই বকেয়া থেকে যাচ্ছে। পুর-এলাকায় আরও ১০টি অগভীর নলকূপ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। এর ফলে, মাসে আরও প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ-বিল বাড়বে। কয়েকটি খাতের হিসেব তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি যা দাঁড়াতে চলেছে তাতে শুধু বিদ্যুৎ-বিল মেটাতেই পুরসভার নিজস্ব আয়ের টাকা পুরো খরচ হয়ে যাবে। পুরসভা সূত্রে খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুরসভার আয় হয়েছে ৩৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ২৩৯ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে আয় হয়েছে ৫০ লক্ষ ৫ হাজার ৭৭১ টাকা। অর্থাৎ, মাসে গড়ে আয় হচ্ছে ৪১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। এ দিকে, পুরসভার কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ব্যাঙ্ক লোনের কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া হলেও দীর্ঘ দিন তা জমা দেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মচারীদের পিএফ বাবদ কেটে নেওয়া ১ কোটি ১১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৬৬ টাকা জমা দেওয়া হয়নি। একই ভাবে ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০১২ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যাঙ্ক-লোনের কিস্তি বাবদ ৯৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৬ টাকা পুরসভা জমা দেয়নি। বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ২২ টাকা।
এই পরিস্থিতির জন্য পুর-কর্তৃপক্ষের ‘কড়া’ সমালোচনা করেছেন মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদ। তাঁর অভিযোগ, “পুরসভার আয় কী ভাবে বাড়বে, তার কোনও পরিকল্পনাই নেই।” প্রাক্তন পুরপ্রধান বলেন, “বেহিসেবি খরচ বেড়ে চলেছে। কোনও বিধির তোয়াক্কা না করে ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা না করে বেহিসেবি খরচ বাড়ালে এই অবস্থা তো হবেই!” |
|
|
|
|
|