|
|
|
|
|
|
|
আলোকচিত্রের আদি পর্বে |
রাজমালা |
রাজ-ত্ব গত হয়েছে, কিন্তু রয়ে গিয়েছে রাজকাহিনি। কিন্তু কাহিনি কি শুধু শব্দে, কথামালায়? না, রাজকাহিনির অনেকটাই ছড়িয়ে আছে রাজত্বের চিহ্নমাখা উপকরণে। আর আলোকচিত্রে। ইতিহাস বলছে, সেই মহারাজাদের যুগও যখন অস্তমিতপ্রায়, তখনই ভারতে ছবি তোলা ও ফোটোগ্রাফিচর্চার শুরু। ১৮৩৯-এ ইংল্যান্ডে পেপার নেগেটিভ উদ্ভাবন করেছিলেন ফক্স ট্যালবট। তার কিছু দিনের মধ্যেই এ দেশে ফোটোগ্রাফির আগমন। তার পরে ‘রাজ’ আমলে নিজের পথ করে নিয়েছিল শিল্পের এই নতুন মাধ্যমটি। তখন ফোটোগ্রাফি চর্চা ছিল নেহাতই শখের, এবং বড় বিলাসিতাময় সেই শখ। চেহারা যাঁরা উঠাইতেন এবং চেহারা যাঁরা তুলিতেন দু পক্ষকেই রীতিমতো রইস হতে হত। আর সেই ফোটোগ্রাফিক ‘বিলাসিতা’য় নেমেছিলেন ভারতের প্রায় সব অস্তোন্মুখ মহারাজাই। তাঁদের বহু আলোকচিত্র আজও সংরক্ষিত হয়ে রয়েছে নানা সংগ্রহ ও সংগ্রহালয়ে। তা থেকেই কয়েকটি নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী এখন এ শহরে, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ‘আ জার্নি ইনটু দ্য টাইম অব মহারাজাস’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি চলছে সিগাল আর্টস অ্যান্ড মিডিয়া রিসোর্স সেন্টারে (২-৮টা)। ‘তসবির’ ও ‘এনআইডি’ আয়োজিত প্রদর্শনীতে অবশ্য রাজকাহিনির কালে যাত্রার চেয়ে দারুণ এক দৃষ্টিযাত্রা ঘটে ভারতে ফোটোগ্রাফির সেই আদি যুগে। ডকুমেন্টেশন হিসেবে পেন্টিংকে বিদায় জানিয়ে যখন ফোটোগ্রাফিকে পরীক্ষা করছেন মহারাজারা। আর সেই সন্ধিক্ষণের ছাপ আছে প্রদর্শনীর বেশ কয়েকটি আলোকচিত্রে। যেমন অজ্ঞাত আলোকচিত্রীর তোলা উদয়পুরের মহারানা ফতে সিংহের ছবিটি তোলার পরে হাতে রঙ করা হয়েছে। পোরবন্দর, পালিতানা, প্রতাপগড়, বারাণসী, নওনগর, ইনদউর, কোটা ইত্যাদির মহারাজাদের ছবিগুলির বেশির ভাগই অজ্ঞাত আলোকচিত্রীর তোলা, কয়েকটি তুলেছিলেন কে এল সয়ীদ, কয়েকটি ভারত ও লন্ডনের স্টুডিয়োয় তোলা। সঙ্গে জাহাঙ্গির সোরাবজির ক্যামেরায় হায়দরাবাদের নিজাম (বাঁ দিকে) এবং অজ্ঞাত শিল্পীর তোলা কোটার মহারাজা (ডান দিকে)।
|
স্মৃতিধর |
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, অনন্তলাল ঠাকুর, গৌরীনাথ শাস্ত্রী, ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী, বিমলকৃষ্ণ মতিলাল থেকে তরুণতম সংস্কৃত গবেষক পর্যন্ত তাঁর কাছে পুঁথি বা বই-এর খোঁজ করেননি বা আলোচনা করেননি, এমনটা বোধ হয় বিরল। সদাচারী এই ব্রাহ্মণ পণ্ডিত পৃথিবীর সমস্ত কিছু ছেড়ে শাস্ত্রচর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। যজন-যাজন, অধ্যয়ন-অধ্যাপনা ছিল জীবনের মূল মন্ত্র। সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে ষাট বছর সেবা করে অবসর নিয়েছিলেন গ্রন্থাগারিক হিসেবে। পুঁথি এবং বই, যা সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদে ছিল, প্রায় সবটাই ছিল ঠোঁটস্থ। করেছেন সাংবাদিকতা, সেখানেও সঙ্গ পেয়েছেন যুগান্তরের বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, দৈনিক বসুমতীর হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, অমৃতবাজার পত্রিকার ধীরেন্দ্রনাথ সেন এবং আনন্দবাজার পত্রিকার চপলাকান্ত ভট্টাচার্যের। মধুসূদন সরস্বতীর বংশধর। সম্পাদনা করেছেন চন্দ্রদূতম্, সংকলন করেছেন সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদ পত্রিকার পঞ্চাশ বছরের বিষয়ভিত্তিক সূচি (সহযোগিতা করেছেন করুণাসিন্ধু দাস), পুঁথিশালার সংগ্রহের উপর চারটি গ্রন্থপঞ্জি রচনা করেছেন। রবীন্দ্রভারতী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘বঙ্গদেশে পাশ্চাত্য ও দাক্ষিণাত্য ব্রাহ্মণ’। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন অসাধারণ স্মৃতিধর মহামহোপাধ্যায় মধুসূদন বেদান্তশাস্ত্রী।
|
তারকোভস্কি |
‘যাঁরা ভাবেন যে রাশিয়া নামক দেশটি না-থাকলেই ভালো হত, আর যাঁরা চান রাশিয়ার ছাঁচে নিজের রাজনৈতিক জীবনকে ঢেলে সাজাতে তাঁরা দুই দলই বেদম ভুল করেন।’ তারকোভস্কি তাঁর শেষ ছবি ‘দ্য স্যাক্রিফাইস’ তৈরির সময় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়নি। এর কিছু কালের মধ্যেই ক্যানসারে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর ছবিতে রুশ দেশের যে-চেহারা ফুটেছিল তা নিয়ে এতাবৎ কম হইচই হয়নি। কলকাতাবাসী গোর্কি সদনে ফিরে দেখবে তাঁর সমস্ত ছবি ২-১২ এপ্রিল প্রতি দিন সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, চলবে একটি প্রদর্শনীও (সঙ্গে তারকোভস্কি-র আঁকা আত্মপ্রতিকৃতিটি সেখান থেকেই), আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে। আর নন্দন স্মরণ করবে তাঁকে ২৪ এপ্রিল, ছবি দেখানোর সঙ্গে গৌতম ঘোষ বলবেনও তাঁর সম্পর্কে। উপলক্ষ তারকোভস্কি-র ৮০, জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৩২।
|
ছক-ভাঙা |
এই প্রদর্শনী, আক্ষরিকই, পাঁচটির মধ্যে পঞ্চম। যদি দেখতে এসে কেউ ঈষৎ অবাক হয়ে ভাবেন, কোথায় দেখেছি যেন আগে, নিছকই ‘দেজা ভ্যু’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। চার শিল্পী, অতনু, কাঞ্চন, সঞ্চিতা এবং জগন্নাথ গত বছর কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে একটি দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজিয়েছিলেন। পুজো ফুরোলে মনে হল, মণ্ডপসজ্জার বস্তুগুলি দিয়ে যদি একটি প্রদর্শনী করা যায়! ভাবনাটি সঙ্গত, কারণ সজ্জাবস্তুগুলির দৃশ্যকল্পে স্বাধীন শিল্পসত্তার আভাস ছিল। সূত্রপাত সেখানেই। উৎসাহ দিলেন হিরণ মিত্র। প্রদর্শনীর শিরোনামটিও তাঁরই দেওয়া, থার্ড অক্টোবরসিক্সথ অক্টোবর, ইলেভেন। অর্থাৎ গত বছর দুর্গাপুজোর চারটি দিন। ইনস্টলেশন-এর এই ছক-ভাঙা প্রদর্শনীটি কাল শুরু হল গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
|
আয়তক্ষেত্র |
৫৫বি মির্জা গালিব স্ট্রিট। পচাদা, বাচ্চা দিলীপ। কিংবা বাপি, সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু-র জ্যান্ত সংস্করণ! ক্ল্যারিয়ন-এ তাঁর দেখা মানুষগুলির কথা লিখেছেন সুজিত সান্যাল, লাইফ ইন আ রেক্ট্যাঙ্গল-এ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট!, ৩৯৫.০০)। শুক্রবার সন্ধেয় এলগিন রোডের ক্রসওয়ার্ড বুকস্টোরে উঠে এল সেই ঝকঝকে আয়তাকার জীবন। আয়তাকার কেন? বিজ্ঞাপন আমরা দেখি একটা আয়তক্ষেত্রের মধ্যে, খবরের কাগজ থেকে টিভি এমনকী মোবাইলেও! সেই আয়তক্ষেত্রের জীবনের চেনা মুখ অচেনা মানুষ বা অচেনা মানুষের চেনার মতো মুখগুলি ঝরঝরে ইংরেজিতে স্মৃতিময় করে লিখেছেন বিজ্ঞাপন দুনিয়ার এই উজ্জ্বল চরিত্র। ডি জে কিমার থেকে ক্ল্যারিয়ন প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত যেমন সেখানে আছে, তেমনই আছে এক অসাধারণ সমীক্ষার ইতিবৃত্তও। সিএমডিএ-র এক বিজ্ঞাপনের জন্য খোঁড়া রাস্তা নিয়ে জীবনের প্রথম জনসমীক্ষা করেন সুজিত। কেন এত রাস্তা খোঁড়া হয়েছে তা নিয়ে সেই সমীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্যেন সেন বলেছিলেন তার সমাজতাত্ত্বিক দিকটার কথা। আর এক ট্যাক্সিচালক বলেছিলেন, ‘রাস্তা খোঁড়া থাকলে টায়ার খারাপ হবে, সেটা হলেই ডানলপের লাভ। ফলে এর পিছনে নিশ্চয়ই ডানলপের কালো হাত আছে!’
|
কবিকে নিয়ে ছবি |
চার বছর বয়সে ‘প্রশ্ন’ আবৃত্তি করেছিলেন, সেই প্রথম রবীন্দ্র-কবিতা আবৃত্তি মুজিবর রহমান-এর, তার পর রবীন্দ্রনাথের গল্পের নাট্যরূপ ‘ছুটি’তে প্রথম অভিনয় ফটিকের ভূমিকায়। যত দিন গিয়েছে তত কবির সৃষ্টির প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে মুজিবরের, সে আকর্ষণ থেকে সখ্য, আর তা থেকেই তাঁর হাতে তৈরি হল কবিকে নিয়ে ছবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/ জীবন ও সময়’। পরিচালনার সঙ্গে চিত্রনাট্য-গবেষণাও তাঁর, নিছক জীবনী নয়, কবিপ্রতিভার রূপরেখাই তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে যাঁরা জানেন না, বা অল্প জানেন, বিশেষত নবীন প্রজন্মকে সমগ্র কবিজীবন এবং কবির কীর্তি ও কৃতি নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা ছবিটিতে। শঙ্খ ঘোষ এ-ছবির উপদেষ্টা। ৬-১২ এপ্রিল প্রতি দিন সন্ধে সাড়ে ছ’টায় নন্দন-এ। আবার নন্দন-এই শুরু হল ‘বেঙ্গলি প্যানোরামা’, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত, নন্দন আর বেঙ্গলি ফিল্ম লাভার্স সোসাইটির উদ্যোগে। একুশ শতকের প্রথম দশকে নবাগত দশজন প্রতিভাবান বাঙালি পরিচালকের ছবি, ৩-৬টায়। প্রতিটি শো শুরুর আগে উপস্থিত থাকছেন ছবির পরিচালক।
|
স্মরণ |
কলকাতার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম ঘরানা বলতেই উস্তাদ বদল খানের রঙ্গিলা ঘরানার কথা এসে পড়ে। বদল খানের সুযোগ্য শিষ্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের বড় কাছের মানুষ ছিলেন তাঁর ছাত্র ও ছায়াসঙ্গী কৃষ্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীতরসিক মহলে তিনি ‘কেষ্টবাবু’ বা ‘কেষ্টদা’ বলেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর সার্কাস অ্যাভিনিউ-এর বাড়িতে বসত সঙ্গীত শিক্ষার আসর। আসতেন সলামৎ খাঁ থেকে শুরু করে সলিল চৌধুরী। বহু ঘরানার শৈল্পিক বৈচিত্র দিয়ে তৈরি এক অপূর্ব উত্তর-আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি ছিল তাঁর। এ ধরনের শিক্ষক যে কোনও যুগেই বিরল। এই মহান শিক্ষকের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘সঙ্গীত দরবার’, শিশির মঞ্চে ৭ এপ্রিল, শনিবার সন্ধেবেলা। গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন কেষ্টবাবুর বহু দিনের শিষ্য অর্থনীতিবিদ ও সঙ্গীতশিল্পী সুগত মারজিৎ। সেতারে সপ্তর্ষি হাজরা, তবলায় অরবিন্দ ভট্টাচার্য।
|
বালি-ছবি |
আঙুলের টানে বালির উপর আঁকা হচ্ছে একটার পর একটা ছবি। দেওয়ালে ঝোলানো প্রজেক্টারের পর্দায় সেই ছবি থেকেই তৈরি হচ্ছে ছায়াছবি। রুশ উপকথা থেকে অপু-দুর্গা, ঈশপের গল্প, কার্টুনের চরিত্রগুলো যেন জীবন্ত বালির উপর আঙুলের আঁচড়ে। ছোটবেলায় শিলঙের বাড়িতে কাচের জানলায় জলছবি আঁকতে আঁকতে ছবি আঁকায় হাতেখড়ি বরাহনগরের স্যান্ড অ্যানিমেশন শিল্পী কৌশিক বসুর। বালির উপর আঁকার কারণ? কৌশিক বলেন, ‘একটু বড় হওয়া পর্যন্ত কেটেছে রিফিউজি ক্যাম্পে। রান্নাঘরে ডাল, চিনি যা থাকত সেগুলো কোথাও মেলে তার উপরেই ছবি আঁকতাম মুছে ফেলতাম, ফের আঁকতাম। মা উৎসাহ দিতেন। বালির উপর আঁকার ইচ্ছেটা তৈরি হল একটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে ওড়িশার এক বালি শিল্পীর অনুষ্ঠান দেখে।’ কৌশিক তাঁর বালি-ছবিতে অভিনবত্ব এনেছেন আবহ, হরবোলা আর ভাষ্যপাঠ দিয়ে, সবটাই লাইভ। ইতিমধ্যেই এই রাজ্যে ও ভিন রাজ্যে স্যান্ড অ্যানিমেশনের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছেন।
|
মুক্তির স্বাদ |
ছড়ানো অঙ্গনের একপাশে কালো মিহি মাটির তাল থেকে নিয়ে পুতুল গড়ছে এক দঙ্গল কুচোকাঁচা, আর এক পাশে সুপুরি গাছের শুকনো পাতার চওড়া দিকটার ওপর চেপে বসেছে দুই বাচ্চা। অন্যরা তাদের-সুদ্ধ পাতাটা টেনে নিয়ে ঘুরছে। হাসি-হইচই। দেওয়ালে আঁটা বড় বড় ক্যানভাসে ইচ্ছেমত রং চাপাচ্ছে ক’জন, আর কয়জনা একপাশে রাখা হাত ধোওয়ার বালতিতে হাত চুবিয়ে দস্তুর মতো খলর-বলর করছে। মায়েরা আশপাশেই আছে, কিন্তু কেউ কিচ্ছু বারণ করছে না। না, কোনও গ্রামে নয়। খোদ গড়িয়াহাটে ‘সাউথ ইন্ডিয়া ক্লাব’-এর উঠোনে ছিল উৎসব ‘চিলড্রেন আনবাউন্ড’। চার দিনে অন্তত দেড়শো বাচ্চা, তাদের মা-বাবারাও পেলেন অসামান্য এক মুক্তির স্বাদ। যাঁর আগ্রহ ও সাহসে এর সূত্রপাত, সেই ঊর্মি হাজরাকে এত দিন অনেকে চিনতেন দারুণ ড্রেস ডিজাইনার বলে। ঊর্মি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মনে হয় শহরের এই সব বাচ্চার কোনও ছোটবেলা নেই। ঘড়ির কাঁটা ধরে একটা কাজ থেকে আর একটা কাজের মধ্যে ঢুকে পড়া। রুটিনের বাইরে যে এত বড় পৃথিবী পড়ে আছে, তার গাছপালা, পাখি, পোকা, আকাশ কিছু না চিনে ওরা বড় হয়ে যায়। তাই এই উৎসব। এগজিবিশন নয়, কম্পিটিশন নয়, কেবল সহজ আনন্দ।’ আবার কবে হবে? এই জিজ্ঞাসা বাড়ি যেতে না-চাওয়া ছোটদের। বড়দেরও। অনেকেই ডাকছেন ‘এর পর আমাদের পাড়ায় কোরো’।
|
ফিরে পড়া |
‘সাহিত্যসমাজে যেসব বই কালজয়ী বলে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলি নিজস্ব বইয়ের সংগ্রহে বা বুকর্যাকে সাজিয়ে রাখার মধ্যে কোনো আত্মতৃপ্তির কারণ নেই। এগুলির প্রতি মর্যাদা দেবার যথার্থ উপায় হল এগুলি ফিরে ফিরে পড়া... ।’ লিখেছেন সুধীর চক্রবর্তী, তাঁতঘর একুশ শতক-এর (সম্পা: অরূপ আস) ‘ফিরে পড়ার বই’ সংখ্যার নান্দীপাঠে। শশিভূষণ দাশগুপ্তের ‘শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ: দর্শনে ও সাহিত্যে’ বা অক্ষয়কুমার দত্তের ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ থেকে নরেন্দ্র দেবের ‘সিনেমা’ অবধি নানাবিধ ‘কালজয়ী’ বই ফিরে পড়েছেন বিশিষ্ট বাঙালিরা। আর-একটি পত্রিকা পূর্ব-র (সম্পা: রণজিৎ অধিকারী) এ বারের সংখ্যাটিও ‘সেই সব বইপত্র’ নিয়ে। তাতে বহুবিধ আলোচনার মধ্যে যেমন রয়েছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বা ‘খোয়াবনামা’, তেমনই ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’।
|
সথ্যুকে নিয়ে |
এ শহরটায় আমার হেঁটে বেড়াতে বেশ লাগে বলেছিলেন সথ্যু। বছর কয়েক আগে এসেছিলেন কলকাতায়, থিয়েটারের কাজে। এ জে সি বোস রোডের যে হোটেলটায় থাকতেন, চট করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়তেন, কাঁধে একটা ঝোলা, তাতে থাকত আঁকার সরঞ্জাম। পছন্দের কিছু পেলেই স্কেচ করতে বসে যেতেন, এ শহরের নানা মুখ বা স্থাপত্য। কয়েক দশক আগেও এসেছিলেন একবার, ‘কাঁহা কাঁহা সে গুজর গ্যায়া’ ছবির শুটিং করতে। সথ্যু-র এই নিজস্ব কলকাতারই কিছু মুহূর্ত মাসুদ আখতার-এর ছবিতে ‘কাঁহা কাঁহা সে গুজরে/আ ম্যান ট্র্যাভেলিং থ্রু টাইম’। মাসুদ জবরদস্ত অভিনেতা, আবার ছবিও বানান, তথ্যচিত্র। এম এস সথ্যু-কে নিয়ে তাঁর এই তথ্যচিত্রে কলকাতা-পর্বের পাশাপাশি রয়েছে সথ্যু-র ছেলেবেলার স্মৃতি থেকে আজকের কর্মময় জীবন সবটাই। কর্নাটকের ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম, মুম্বই এসে নাটকের পাশাপাশি ফিল্মে পা ফেলা। ‘পথের পাঁচালী’র মতোই প্রথম ছবি ‘গরম হাওয়া’ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি ভারতীয় সিনেমার রুপোলি পর্দায়। সত্তর দশকে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সত্যজিৎ লিখেছিলেন ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রের ষাট বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মুসলমান সমাজের প্রতি সংবেদক দৃষ্টিক্ষেপ হিসাবে গরম হাওয়া-র মূল্য অপরিসীম।’ পরাধীন দেশে লড়াই, স্বাধীন দেশে সরকারি ব্যবস্থার ক্ষয়, খরা-দারিদ্র, দেবদাসী নিয়েও ছবি করেছেন সথ্যু। তাঁকে নিয়ে মাসুদের তথ্যচিত্রটি দেখানো হল ২৭ মার্চ গোর্কি সদনে, আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে।
|
জীবনটাই থিম |
দীর্ঘ কাল প্যারিস-প্রবাসী তিনি। কিন্তু তাঁর শিকড় হারাননি কোনও দিন। তেলরঙের কাজ হোক বা জলরং, লিথো কিংবা নিছক ড্রয়িং যে স্বপ্নের জগতে বিচরণ করেন শক্তি বর্মন তার রূপায়ণে মিশে থাকে ভারতীয় মিথ, লোককল্পনা। শিল্পী হিসেবে তাঁর বিবর্তনের প্রেরণা এসেছে ফরাসিসঙ্গে এবং ইতালি-ভ্রমণের অনুষঙ্গে ফ্রেস্কো পেন্টিংয়ের সাহচর্যে। তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে অজিণ্ঠার গুহাচিত্রের স্মৃতি। এ হেন ‘অ্যালকেমিস্ট অব ড্রিমস’ এখন এই শহরে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে তাঁর পূর্বাপর সমগ্র থেকে নির্বাচিত ষাটটি পেন্টিংয়ের প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আজ। সূচনা করবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। শিল্পী ও তাঁর কাজ নিয়ে বলবেন মনসিজ মজুমদার। প্রদর্শনী চলবে ২৯ তারিখ পর্যন্ত (১০-৫টা)। প্রদর্শনীর নাম ‘দি ওয়ন্ডার অব ইট অল’। প্রদর্শনীর কি কোনও থিম আছে? “না, এটা আমার রেট্রোস্পেকটিভ, বলতে পারেন জীবনটাই একটা থিম। থাকছে আমার তরুণ বয়সের কিছু কাজ, জলরংও,” বললেন শিল্পী। আর এত বিচিত্র অভিজ্ঞতাময় জীবনের আত্মজীবনী লেখেন না কেন, প্রশ্ন করতেই স্মিত হেসে শিল্পীর উত্তর, “শিল্পীর জীবনে এমন কি আর আছে লেখার মতো, তবু লিখব এ বার।” পাশাপাশি আকার প্রকার আর্ট গ্যালারিতেও ৫-২৪ এপ্রিল (২-৭টা) তাঁর আরও একটি প্রদর্শনী, এটি অবশ্য ড্রয়িংয়ের, নাম ‘লিনিয়ার এক্সটেনশনস’। |
|
|
|
|
|