পার্টি কংগ্রেসের আগে ফের ধাক্কা সিপিএমে!
পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরা এই তিন রাজ্যের বাইরে সংগঠন প্রসারের ডাক দিয়ে কোঝিকোড়ে শুরু হতে চলেছে পার্টি কংগ্রেস। কিন্তু প্রসার দূর অস্ত, পার্টি কংগ্রেসের আগে এই তিন রাজ্যের বাইরে সিপিএমের বর্তমান সংগঠনেই ভাঙন বাড়ছে! খোদ সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট নিজে উপস্থিত থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে সদ্য রাজ্য সম্মেলন করিয়ে আসার পরে সেখানে পাল্টা রাজ্য সম্মেলনের ডাক দিয়েছে সিপিএমেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী! রাজ্য সম্মেলনে নবনির্বাচিত রাজ্য কমিটির একাংশই বেরিয়ে এসে পাল্টা সম্মেলন করে ফেলেছে কয়েকটি জেলায়। পার্টি কংগ্রেসে না-গিয়ে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা সমান্তরাল সম্মেলন আয়োজনে ব্যস্ত থাকছেন! সিপিএমের মতো সংগঠন-নির্ভর দলে যে ঘটনা অভাবিত বললেই চলে!
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটে সাম্প্রতিক ভূমিশয্যার পরে কাশ্মীরের ঘটনা স্বভাবতই পার্টি কংগ্রেসে ঝড় তুলতে চলেছে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিতে প্রথম সারির দলগুলির মধ্যে সিপিএম পড়ে না ঠিকই। কিন্তু সেই রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় কমিউনিস্টদের পুরনো ভিত আছে। যার জেরে তারা এক সময় বিধানসভায় প্রতিনিধিও পাঠাতে পেরেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করে সিপিএমের নামেই যাঁরা পাল্টা সম্মেলন করছেন,
তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক খলিল মহম্মদ। যিনি একাধারে কিষাণ সভার রাজ্য সম্পাদকও। সঙ্গে রয়েছেন মহম্মদ আমিন দার, ইয়াকুব ওয়ানি, মহম্মদ মকবুলের মতো নেতারা। কিষাণ সভা, সিটু, ডিওয়াইএফআই-এর মতো গণ সংগঠনের একাংশ ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েছে পাল্টা সম্মেলনে রাজ্যের মোট সদস্যসংখ্যার ৫০%-এর বেশি লোক হাজির করে তারা দেখিয়ে দেবে, কার তাকত বেশি!
গত সপ্তাহেই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে হাজির ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কারাট এবং পশ্চিমবঙ্গের নেতা মহম্মদ সেলিম। সেখানেই দলের একাংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির বিরুদ্ধে। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “রাজ্য সম্পাদক দলের নাম ব্যবহার করে একটা পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করছেন। দুর্নীতি হচ্ছে। নিজের ছেলেকে প্রোমোটারি করার জন্য সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, কমিউনিস্ট-সুলভ জীবনযাত্রা ওঁদের নয়। এঁদের হাতেই সংগঠনে পচন ধরছে। অথচ এত অভিযোগ দেখেও সাধারণ সম্পাদক বসে থেকে একই লোককে (তারিগামি) ফের রাজ্য সম্পাদক করে বসিয়ে দিয়ে গেলেন!” প্রতিবাদে নবনির্বাচিত ১২ সদস্যের রাজ্য কমিটির চার জন আপাতত পাল্টা সম্মেলন করছেন। সম্মেলন হচ্ছে সিপিএমেরই নামে। এই অংশের দাবি, আরও বেশি সদস্য তাদের দিকে সামিল হবে। কিষাণ সভার এক নেতার বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এ বার ঠিক করতে হবে, কারা আসল সিপিএম!” ঠিক যে ভাবে এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করে থাকেন, কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা তৃণমূলই আসল কংগ্রেস!
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা পাল্টা সম্মেলন-পর্ব নিয়ে তারিগামি অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মত, “ওখানে একটা অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়েছে। তবে কিছু এলাকায়, গোটা রাজ্যে নয়।” বিক্ষুব্ধ অংশের এক নেতার আবার পাল্টা বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব কেন ঘটনাপ্রবাহকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না, জানি না! রাজ্যে মোট ১৭০০ সদস্য রয়েছেন সিপিএমের। আগামী ১৪-১৫ এপ্রিল পাল্টা রাজ্য সম্মেলনে অন্তত ১০০০ সদস্যকে এনে আমরা দেখাব, কত বেশি কর্মী-সমর্থক আমাদের দিকে আসছেন।” অভিযোগ কি শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক? ওই নেতার জবাব, “রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রশ্নও তো এর সঙ্গে জড়িত। যে
ভাবে ব্যক্তিতান্ত্রিক ভাবে এ রাজ্যের দলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা সিপিএমের রীতি নয়। সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্যও আমাদের উপরে চাপ আসছে। তবে রাজনীতি তো এত সোজা নয়! দেখা যাক, কী হয়!” বিক্ষুব্ধ অংশের দাবি, পুলওয়ামা জেলায় (যেখানে সিপিএমের সংগঠন তুলনায় উল্লেখযোগ্য) পাল্টা সম্মেলন সব চেয়ে ‘সফল’ হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাবে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে ইতিমধ্যেই দলে প্রশ্ন উঠেছে, সিপিএমের এই অধোগমন বন্ধ করতে কবে শিক্ষা নেবেন নেতারা? গোটা উত্তর ভারতে বিধানসভায় লোক পাঠাতে পারছে না সিপিএম। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় পুরনো সংগঠন ভেঙে ছত্রখান। দক্ষিণ ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে বিধায়কের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। যে যে কারণে এই দশা, তা দূর করতে না-চাইলে আর সংগঠন প্রসারের কথা বলার কী অর্থ এই প্রশ্নই পার্টি কংগ্রেসে তুলতে চান বহু প্রতিনিধি।
একেবারে দক্ষিণে পিনারাই বিজয়নের কেরল থেকে তুঙ্গ উত্তরের কাশ্মীর ‘দুর্নীতি’কে প্রশ্রয় দেওয়ার দায়ে পার্টি কংগ্রেসের কাঠগড়া কি অপেক্ষা করছে কারাটের জন্য? |