হরিপুরেও মিলল নিরাপদ আস্তানা
অ্যাবটাবাদের আগে থেকেই পাকিস্তানে থাকতেন ওসামা
খুব একটা দূরে নয় বাড়িটা। মার্কিন হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া অ্যাবটাবাদের সেই ‘দুর্গ’ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার। পাকিস্তানের সীমান্ত শহর হরিপুরে। কাদায় ভরা ছোট গলি পেরিয়ে একটা ঝকঝকে দোতলা বাড়ি। ২০১০ সালে অ্যাবটাবাদে ‘গৃহপ্রবেশের’ আগে স্ত্রী-পুত্রদের সঙ্গে ওখানেই বছরখানেক নিশ্চিন্তে কাটিয়ে গিয়েছিলেন দাড়িওয়ালা, পাগড়ি পরা এক ভাড়াটে। বাড়িওয়ালা জানতেন, দুই পাখতুন ভাই ঘর ভাড়া নিয়েছেন।
কিন্তু ভাড়াটের আসল নাম? ওসামা বিন লাদেন!
শুধু অ্যাবটাবাদ নয়, পাকিস্তানের আরও একটি সীমান্ত শহরে ওসামার নিশ্ছিদ্র ডেরার কোনও হদিসই করতে পারেনি আইএসআই। এমনকী, ২০১১-এর মে মাসে মার্কিন হামলায় ওসামা নিহত হওয়ার পরেও নয়! বরং পাক প্রশাসন, সেনা, আইএসআই-এর তরফে বহু বার জোরের সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাস ছড়ানো আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন কোনও ভাবেই পাকিস্তানে দীর্ঘ আত্মগোপন করেননি। কিন্তু সেই তথ্য যে নিতান্তই ভিত্তিহীন, অ্যাবটাবাদের মতোই তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল হরিপুর। এ বার অবশ্য মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা নয়, সত্যিটা সামনে এল পাক গোয়েন্দাদের হাত ধরেই।
অ্যাবটাবাদে ওসামার ডেরায় ‘অপারেশন জেরোনিমো’-র পরেই মার্কিন সেনাদের হাতে ধরা পড়েন ওসামার চার স্ত্রী। তাঁদের পরে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয় মার্কিন সেনারা। পাক গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, ওসামার কনিষ্ঠ স্ত্রীকে জেরা করে জানা গিয়েছে, আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন হরিপুরের নাসিম এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে ২০০৯-এর মাঝামাঝি থেকে বাস করছিলেন ওসামা। শুধু তাই-ই নয়, পাক গোয়েন্দাদের রীতিমতো বিস্মিত করে ওসামা-পত্মী জানান, আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা পাকিস্তানে পাঁচ-পাঁচটি ‘নিরাপদ’ আশ্রয় ছিল আল কায়দা প্রধানের।
এই সেই বাড়ি যেখানে বিন লাদেন লুকিয়ে ছিলেন। ছবি: এ এফ পি
ওসামা নিহত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, পাক সেনা ও প্রশাসনের মদতেই এ দেশে আত্মগোপন করেন তিনি। এর পরেই পাক গোয়েন্দারা খোঁজ করতে শুরু করেন, ওসামা অ্যাবটাবাদে পৌঁছলেন কী করে! তাতেই উঠে আসতে থাকে একটার পর একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এই সংক্রান্ত বিশেষ তদন্ত কমিটির সদস্য প্রাক্তন পাক সেনাকর্তা শওকত কাদির আট মাস ধরে ওসামার অতীত ঘেঁটেছেন। সম্প্রতি কাদির জানান, গত নভেম্বরে তাঁকে হরিপুরে একটি ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়িতে নিয়ে যান গোয়েন্দারা। বাড়িতে পালিশ করা কাঠের রেলিং লাগানো সিঁড়ি, জাফরি করা বারান্দা, বাহারি জানলা, বিশাল ঘর। গোয়েন্দারা কাদিরকে জানান, উঁচু দেওয়াল ও কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ওই বাড়িতেই ওসামা থাকতেন বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমল আহমেদ আবদেল-ফতাহ অল-সাদা। ওসামা নিহত হওয়ার দিনেই ধরা পড়ে ইয়েমেনি ওই নাগরিক। জানা যায়, ২০০৫ সালেই অ্যাবটাবাদে পাক সেনা ছাউনির কাছে দুর্গের মতো বাড়িটিতে এসেছিল অল-সাদা। ২০০১ সালে তোরাবোরা থেকে শুরু করে ওসামার আত্মগোপনের যাবতীয় পরিকল্পনার শরিকও সে। পাক গোয়েন্দারা তাই অল-সাদার সূত্র ধরেই ওসামার আস্তানা খুঁজছিল। কিন্তু অল-সাদা বা ওসামা-পত্মীকেউই হরিপুরের বাড়ির নির্দিষ্ট ঠিকানা দেয়নি। অনেক বার অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার পর বাড়িটির খোঁজ পান পাক গোয়েন্দারা।
অল-সাদাকে জেরা করে যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে এবং ওসামা সংক্রান্ত যা নথি আগে থেকেই ছিল, সেখান থেকে জানা যায়, মার্কিন গোয়েন্দাদের মতো পাক গোয়েন্দারাও ওসামার দুই স্থানীয় ‘সহযোগী’দুই পাখতুন ভাইয়ের গতিবিধি বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা যায়, অ্যাবটাবাদের মতোই হরিপুরের একটি বাড়িও দুই ভাই মাসিক দেড়শো ডলারে ভাড়া নিয়েছিল। সেটা ২০০৯ সাল। বাড়ির দালালকে তারা নিজেদের চারসাদ্দা প্রদেশের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেয়। কিন্তু সেই বাড়িতে কারা থাকত, সেটা কেউ জানতেন না। হরিপুর এমনই এক সীমান্ত শহর যেখানে ব্যবসার কাজে বহু আফগান এসে কিছু দিন থাকে। ফলে কারও গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ করার মতো স্থানীয় লোকও সেখানে কম।
হরিপুরের সেই বাড়ির দালাল পীর মহম্মদের কথায়, “ওরা নিজেদের নাম বলেছিল সেলিম ও জাভেদ খান। ওদের সঙ্গে তিন বার দেখা হয়েছিল। যখন ওরা ভাড়া নেওয়ার চুক্তি করে, যখন বাড়িতে থাকতে আসে আর ১১ মাস পরে যখন বাড়িটা ছেড়ে দেয়।” বাড়ির মালিক কাসি আনিস রহমান জানান, গত জানুয়ারিতে আইএসআই কর্তারা এসে ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ২০০০ সাল থেকে বাড়ির সব কাগজ ও ভাড়াটের তথ্য চান। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বিভিন্ন তথ্য মিলিয়েই ওসামার ওই বাড়িতে বাস করার বিষয়ে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, সোমবারই আদালতে ওসামা-পত্নীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বেআইনি ভাবে বসবাসের মামলা দায়ের হওয়ার কথা।
৯/১১ থেকে ২০১১দশ বছর ছায়াযুদ্ধের মধ্যে অন্তত দু’বছর তবে পাকিস্তানেই কাটিয়েছিলেন ওসামা!
ভাড়াটে চিনতে ভুল করেছিলেন পীর মহম্মদ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.