সড়ক নির্মাণের কাজে দুর্নীতি চলে দেশ জুড়েই। তবে বিহারে এই চক্রটি রীতিমতো দৃঢ়মূল। স্বার্থসন্ধিৎসু বিভিন্ন মহল ও মাফিয়ার দাপটে প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের একটা বড় অংশ চলে যায় অসাধু চক্রের হাতে। ফলে কাজের মানও হয় খারাপ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে ২০০৩ সালে ‘সোনালি চতুর্ভুজ’ যোজনায় এই দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন আদ্যন্ত সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার সত্যেন্দ্র দুবে। সেই ‘অপরাধে’ জাতীয় সড়ক প্রকল্পের অন্যতম পদস্থ ওই তরুণ অধিকর্তাকে গয়ায় খুন হতে হয়। দুর্নীতি বজায় রাখতে মাঝেমধ্যেই খুনের ঘটনা এই রাজ্যে আকছারই ঘটে থাকে। এ সব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নীতীশ সরকার এ বার এই দুর্নীতি রোধে নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে।
কী সেই প্রযুক্তি? সড়ক নির্মাণ দফতরের কর্তাব্যক্তিরা জানান, জিনিসটি হল ‘ইলেকট্রনিক মেজারমেন্ট বুক’ (ইএমবি)। এই ইলেকট্রনিক খাতায় সড়ক নির্মাণের কাজ কতটা হল, তার গুণমান কেমন, এ সব হিসাব নিখুঁত ভাবে তুলে রাখা হবে। এই সঙ্গেই দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা কাজের জায়গায় আছেন কিনা, তারও নজরদারি চলবে ‘ট্র্যাকার মোবাইল’-এর সাহায্যে। অর্থাৎ প্রয়োজনে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কাজের জায়গায় থাকা অবস্থাতেই কথা বলে নিতে পারবেন। ফলে ফাঁকির সুযোগ নেই ইঞ্জিনিয়ারদেরও। এই উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি, কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ৪৫ জন ঠিকাদারকে। তাঁদের কাজের মান যথাযথ না হওয়ার কারণেই এই কড়া ব্যবস্থা। সোজা কথায়, নীতীশ সরকার জানিয়ে দিতে চায়, এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা হবে না।
দফতরের সচিব প্রত্যয় অমৃত বলেন, “আগে রাস্তার কাজের মাপ করা হত হাতে-কলমে। এই পদ্ধতিতে দূরবর্তী জেলার কাজের হিসাব দফতরে পৌঁছতে অনেক সময় লাগত। প্রতিদিন কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতেও সমস্যা হত। এখন ‘ইএমবি’-র মাধ্যমে সরকার সহজেই বুঝে নিতে পারবে সত্যি কতটা কাজ হল এবং তার গুণমানই বা কেমন। পটনায় বসেই প্রতিদিনের কাজের হিসাব জানা যাবে। এবং এই হিসেব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তো বটেই, জানতে পারবেন সাধারণ মানুষও।”
দুর্নীতির প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে এই সচিব বলেন, “কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং তা ঠিকমতো দেখভালের বিষয়টিই এখানে সবিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি, প্রতিটি ইএমবি-র দাম পড়বে এক লক্ষ টাকা করে। কতগুলি কেনা হবে, এখনও তার হিসেব করা হয়নি।”
বিহারে দুর্নীতি প্রশাসনের কাছে একটা বড় সমস্যা। নীতীশ সরকার চেষ্টা করছে রাজ্যের এই দুর্নাম ঘোচাতে। যেমন, ‘বালিকা সাইকেল যোজনা’য় স্কুলের মেয়েদের সাইকেল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে বিহার সরকার ওই কিশোরীদের জন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা জমা করেছেন। মাঝে কোনও তৃতীয় পক্ষ নেই। কেবল সাইকেল কেনার পরে রসিদটি সরকারের ঘরে জমা করতে বলা হয়েছে। |