প্রেক্ষাগৃহে দর্শকেরা সমাগত। বলতে প্রস্তুত বিশিষ্ট বক্তারা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মরণে সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যানারও জ্বলজ্বল করছে মঞ্চে। কিন্তু ব্যানারের ছবিতে চোখ পড়তেই সংস্কৃতি দফতরের এক কর্মী অস্ফুটে বলে উঠলেন, ‘সর্বনাশ’। মধু-কবির অনুষ্ঠানের ব্যানারে এ যে রবীন্দ্রনাথের মুখ। বুধবার সন্ধ্যায় অভাবনীয় এই দৃশ্য দেখা গেল ঢাকুরিয়ার মধুসূদন মঞ্চে।
ওই অবস্থাতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠান। ব্যানারের ছবিটি রবীন্দ্রনাথের মধ্যবয়সের। সেই ছবি দেখে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে তখন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মাইকেলের চেহারার সাদৃশ্য খুঁজতে চাপা গুঞ্জন। অনেকের মনেই প্রশ্ন, মাইকেল আবার এমন দেখতে ছিলেন কবে? এই পরিস্থিতিটা অবশ্য খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ‘মধুসূদন এবং মহাকাব্যিক পরম্পরা’ নিয়ে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর বক্তৃতা চলতে চলতেই ‘ভুল শুধরে’ নেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। নিঃশব্দে মঞ্চ থেকে সরিয়ে ফেলা হয় ‘গোলমেলে’ সেই ব্যানার। |
সংস্কৃতি দফতরের কর্তারা অবশ্য রাত পর্যন্ত এই ‘রাবীন্দ্রিক অনুপ্রবেশ’-এর বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বলেই দাবি করেছেন। সংস্কৃতি-অধিকর্তা নবগোপাল হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি তো ওই অনুষ্ঠানে যাইনি।” তবে রবীন্দ্রনাথ ও মধুসূদনের মধ্যে এই ‘বিভ্রান্তি’ অভিপ্রেত নয় কবুল করে তাঁর আশ্বাস, “আমি অবশ্যই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
মধুসূদন মঞ্চের সংস্কার চলছিল বলে নির্দিষ্ট তারিখে (২৫ জানুয়ারি) এ বছর মধুসূদনের জন্মদিন পালন করা যায়নি। দেরিতে জন্মদিন পালন করতে গিয়ে ঘটল ছবি-বিভ্রাট। মধুসূদন মঞ্চের প্রশাসনিক অধিকর্তা সুকান্ত রায় অবশ্য এই ‘বিভ্রাট’-এও তাঁর নিজের মতো করে ‘সান্ত্বনা’ খুঁজেছেন। তাঁর কথায়, “ছবিটা মাইকেলের না তরুণ রবীন্দ্রনাথের, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় ছিল। আর রবীন্দ্রনাথের ছবিই বা মধুসূদনের স্মরণ-অনুষ্ঠানে কেন অচ্ছুৎ হবে? মাইকেলের প্রতি বিদ্যাসাগরের দরদ বা মধুসূদনের সাহিত্য নিয়ে রাবীন্দ্রিক ভাবনা এ সবই তো আমাদের মধুসূদন-চেতনায় মিশে।” মঞ্চের এক কোণে মধুসূদনের নিজের ছবিতে মালা পরানোতেও ত্রুটি হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবু এত বড় ভুল সবার নজর এড়িয়ে ঘটল কী ভাবে? মধুসূদন মঞ্চ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘ব্যানার’ যাঁরা প্রস্তুত করেন, তাঁদের শেষ মুহূর্তের ভুলেই এই অবস্থা। অবস্থাটা বোঝাতে সুকান্তবাবু সেই রবীন্দ্রনাথকেই ঢাল করছেন, “কী আর বলি, বোঝেনই তো, শঙ্কা যেথায় করে না কেউ, সেইখানে হয় জাহাজডুবি।” |