মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস
জেলা পরিষদের দায়িত্ব ও তৃণমূলের উপেক্ষায় দ্বিমত
প্রধান শাসক দল তৃণমূল এবং পঞ্চায়েত পরিচালনা নিয়ে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের অন্দরেই ভিন্নমত দেখা দিল।
একের পর এক ঘটনায় কংগ্রেস ‘পরিচালিত’ মুর্শিদাবাদকে তৃণমূল ‘উপেক্ষা’ করছে বলে বিধানসভায় অভিযোগ তুলছেন জেলার কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশ। তাঁরাই আবার জেলা পরিষদের হাত থেকে আর্থিক দায়দায়িত্ব জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে ‘সমর্থন’ করছেন। আবার সে বিষয়েই জেলার কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তাঁদের ‘মতানৈক্য’।
তৃণমূল নেতৃত্বকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে অধীরবাবু মঙ্গলবার বলেছেন, “অন্যায়ভাবে পঞ্চায়েতের হাত থেকে জেলা পরিষদ জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উপর আঘাত। তৃণমূল নেত্রী-নেতারা জেনে রাখুন, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে আমরা মুর্শিদাবাদ থেকে মহাকরণ অভিযান করব!” পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বামেরা সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে এবং জেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে ভোটের দাবি জানিয়ে অধীরই তো রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। আর আমরা তো জেলা পরিষদ ভাঙিনি। উন্নয়নের কাজ চালু রাখতেই জেলাশাসকের হাতে আর্থিক দায়িত্ব তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” আবার সুব্রতবাবুর ‘উদ্যোগ’কে স্বাগত জানিয়েছেন দলে ‘অধীর-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মহম্মদ সোহরাব বা আবু তাহের খানের মতো বিধায়করা।
কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা ও জঙ্গিপুরের বিধায়ক সোহরাব এ দিন স্পষ্টই বলেন, “জানি না, অধীরবাবু কী বলেছেন। জেলা পরিষদ একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সেটা অচল হয়ে গেলে কী ভাবে জেলায় উন্নয়ন হবে? পঞ্চায়েত মন্ত্রী জেলাশাসককে দেওয়া নির্দেশ আমরা সমর্থন করি।” তাঁর যুক্তি, “আমাদের বহুদিনের দাবি ছিল, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আমাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হোক। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি।” নওদার বিধায়ক আবু তাহেরেরও বক্তব্য, “জেলায় উন্নয়নের কাজ থমকে গিয়েছিল। জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সংখ্যালঘু। উপনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছিল। জেলাশাসকের হাতে দায়িত্ব দেওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি।” তবে এই মত-বিভাজন নিরসনে সোহরাব অধীরবাবুর সঙ্গে আলোচনা করবেন এ দিন বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চায়েত নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত সমর্থন করলেও মুর্শিদাবাদকে তৃণমূল নানাভাবে ‘উপেক্ষা’ করছে বলে এ দিনই বিধানসভায় অভিযোগ তোলেন তাহের। নওদার বিধায়ক বলেন, “জোট শরিক হওয়ায় কিছু বাধ্যবাধকতা আমাদের আছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদকে উপেক্ষা করা হলে আমরা তার বিরোধিতা করতে বাধ্য হব।” কংগ্রেস-প্রধান জেলায় জোট সরকারের ‘উপেক্ষা’র ব্যাখ্যা দিয়ে তাহের প্রশ্নোত্তর পর্বে জানান, রাজ্যে ৪ হাজার ৬৬০টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মোট ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি এতে উপকৃত হবে। কিন্তু কৃষিপ্রধান এবং পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদে মাত্র ৮০টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। অন্যান্য জেলা অনেক বেশি প্রকল্প পেয়েছে। ব্যতিক্রম কংগ্রেস-প্রভাবিত মুর্শিদাবাদ।
তাহেরের জবাবে জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র সভায় বলেন, “ভূপ্রকৃতি, ভূমধ্যস্থ ও ভূমির উপরে জলস্তর পরিমাপ করে রিপোর্ট দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই কোন জেলায় কত প্রকল্প হবে ঠিক হয়। মুর্শিদাবাদে যতটা প্রয়োজন, তা নিশ্চয়ই দেওয়া হবে।” কিন্তু তাতে ‘সন্তুষ্ট’ হননি তাহের। পরে তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র সেচের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের বহু অধিকৃত চাষের জমিও কোনও কাজে লাগানো হচ্ছে না। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রেজিনগর থেকে মালদহ পর্যন্ত প্রায় ১৮৩ একর কৃষিজমি শিল্পপতিরা দীর্ঘদিন ধরে অধিগ্রহণ করে রেখেছেন। সেগুলিতে না করা যাচ্ছে চাষবাস, না হচ্ছে শিল্প। এখন সেগুলি চড়া দামে বিক্রির চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে জানানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.