মানহানির মামলা ঘুষ-অভিযুক্তের
ব্যবস্থা নিতে চাননি সেনাধ্যক্ষই, দায় এড়িয়ে গেলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সেনাপ্রধানকে ঘুষ দিতে চাওয়ার অভিযোগ নিয়ে দায় এড়ানোর পালা শুরু হয়ে গেল।
ঘুষ-বিতর্কে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ দায় আজ সেনাপ্রধানের উপরেই চাপিয়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। রাজ্যসভায় মন্ত্রীর বক্তব্য, সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিংহ তাঁকে ঘটনাটি জানানোর পরেই তিনি ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু সেনাধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি আর এগোতে চান না। সেনাপ্রধান লিখিত অভিযোগ না করায় তিনিও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলে অ্যান্টনির দাবি।
সেনাপ্রধান সিংহ সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ তুলেছিলেন, অত্যন্ত নিম্ন মানের ট্রাক বিক্রির জন্য এক প্রাক্তন সেনাকর্তা তাঁকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানালে তিনি শুধু বলেন, এ সব লোকের থেকে দূরে থাকতে হবে। ফলে অ্যান্টনির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে যান বিরোধী নেতারা। ‘নিজের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন’ বলে পরিচিত অ্যান্টনি জানান, তিনি ব্যবস্থা নিতে বললেও সেনাপ্রধানই তা চাননি। বিভিন্ন মহলের মতে, অবসরের ঠিক আগে জেনারেল সিংহ এমন অভিযোগ এনে শুধু সেনাবাহিনীতে তাঁর বিরোধীদেরই শিক্ষা দিতে চাননি, বয়স-বিতর্কে সরকারের কাছে পরাজয়ের পরে কেন্দ্রকেও প্যাঁচে ফেলতে চেয়েছিলেন। কারণ এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছিল, অভিযোগ জানার পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেন কোনও ব্যবস্থা নেননি?
যে প্রাক্তন সেনাকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজেন্দ্র সিংহও আজ সেনাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, দিল্লিতে সেনাবাহিনীর তরফে বেআইনি ভাবে মোবাইলে আড়ি পাতার অভিযোগ ইতিমধ্যেই উঠেছে এবং তা থেকে নজর ঘোরাতেই এ সব অভিযোগ এনেছেন সেনাধ্যক্ষ। জেনারেল সিংহ অবশ্য সরাসরি তেজেন্দ্র সিংহের নাম বলেননি। তবে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তেজেন্দ্রর বিরুদ্ধে ঘুষ দিতে চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। আজ অ্যান্টনি রাজ্যসভায় বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজেন্দ্র সিংহ তাঁকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন বলে সেনাধ্যক্ষ আমাকে জানান।” কিন্তু তেজেন্দ্রর দাবি, তিনি তাঁর অবসরের পরে নতুন পদে নিয়োগ নিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেনাপ্রধান তাঁর নাম সুপারিশও করেন।
তেজেন্দ্রর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ওই বিবৃতি নিয়েও কিন্তু নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাদের অনুমতি ছাড়াই ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছিল বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে এখন বলা হচ্ছে। তেজেন্দ্র সিংহ দিল্লি হাইকোর্টে ওই বিবৃতির জন্য চার সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনেছেন। আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন অ্যান্টনি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রককেও। তার পরেই সেনার কাছ থেকে বিবৃতিটির ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
গোটা ঘটনায় গতকালই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন অ্যান্টনি। সিবিআই সূত্রের খবর, এখনও সরকারি ভাবে মামলা নথিভুক্ত করা হয়নি। খুব শীঘ্রই তা করা হবে। সেনাপ্রধানকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার বিবরণ, সম্ভাব্য সাক্ষী তালিকাও চাওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, সেনাপ্রধানকে ঘুষ দিতে চাওয়া সংক্রান্ত কথোপকথনটির একটি টেপ আছে। অডিও টেপটি এখন সিবিআই-এর কাছে। কর্নেল আর এস এন সিংহের দাবি, তিনি শুনেছেন, টেপে শোনা যাচ্ছে এক জন সেনাপ্রধানকে বলছেন, আপনার আগেও সেনাধ্যক্ষরা ঘুষ নিয়েছেন, পরেও নেবেন। আপনার আপত্তি কেন? তার পরেই সেনাধ্যক্ষ তাঁকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন বলেও নাকি টেপে শোনা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, ওই টেপ আসল না নকল, তা এখনও খতিয়ে দেখা হয়নি।
তবে ওই টেপ যদি সত্যি হয়, প্রশ্ন উঠবে, কেন ওই কথোপকথন টেপ করা হয়েছিল এবং কারা তা টেপ করেছিল? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির দফতরের টেলিফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সেনাবাহিনীর তরফে তা অস্বীকার করে বলা হয়েছিল, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি-র প্রাক্তন প্রধান তেজেন্দ্রই এই অপপ্রচার করছেন। সিবিআইকে ঠিক কী কী তদন্ত করতে বলা হচ্ছে, আজ রাজ্যসভায় তা অ্যান্টনির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। অ্যান্টনি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। নিজেকে সব রকম কালিমা থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় তিনি বলেন, “অনামী কোনও চিঠিতে অভিযোগ এলেও আমি ব্যবস্থা নিই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে লিখিত কোনও অভিযোগ সেনাধ্যক্ষ করেননি। আমার বুদ্ধি, বিবেচনা অনুযায়ী যা ভাল বুঝেছি, করেছি। আমার ভুল হলে, আপনারা আমায় শাস্তি দিন।”
এ দিন রাজ্যসভায় নাটকীয় ভাবেই তাঁর বিবৃতি শুরু করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রথমেই বলেন, “যা বলব, সত্য বলব।” তিনি জানান, ঘটনাটি বছর খানেক আগের। তাঁর তারিখটা ঠিক মনে নেই। তবে তাঁর যুক্তি, “সেনাপ্রধানের সঙ্গে কেউ দেখা করলে তা নথিভুক্ত থাকে। ফলে সেনাকর্তারা দিনক্ষণটা বলতে পারবেন।” ঘটনাটি শোনার পরই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন তিনি। সেনাপ্রধানও জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ঠিক এইটাই ছিল। আজ অ্যান্টনি জানান, ধাতস্থ হতে তাঁর দু-মিনিট সময় লাগে। তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম, ব্যবস্থা নিন। কিন্তু উনি বললেন, এ নিয়ে আর এগোতে চান না। আমি জানি না, কেন তিনি তখন বিষয়টি নিয়ে তখন এগোতে চাননি।”
এতেও অবশ্য বিরোধীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেননি অ্যান্টনি। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি প্রশ্ন তুলেছেন, সেনাপ্রধান ব্যবস্থা নিতে না চাইলেও অ্যান্টনি নিজে কেন এগোতে চাইলেন না! একই সঙ্গে দুর্নীতি সম্পর্কে অ্যান্টনি অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বা আধুনিকীকরণের কাজে কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না বলেও কটাক্ষ করেছেন জেটলি। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ‘ভারসাম্য’ রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন অ্যান্টনি। তবে অ্যান্টনির সততা নিয়ে তাঁদের মনে কোনও প্রশ্ন নেই, সে কথা জানিয়ে জেটলি বলেন, “আপনি যদি সেনাবাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান, আমরা আপনার পাশে আছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.