ঝাড়খণ্ড থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর অংশুমান মিশ্র যে ভাবে বিজেপির বিভাজনকে আরও প্রকট করে দিলেন, কংগ্রেসও তার সুযোগ নিতে আসরে নেমে পড়ল।
মুরলীমনোহর জোশী অভিযোগ খণ্ডন করার পরেও অংশুমান আজ ফের অভিযোগ করেন, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান থাকার সময়েও টুজি কাণ্ডে অভিযুক্ত বিবেক গোয়েঙ্কা ও শাহিদ বালওয়ার সঙ্গে ‘গোপন’ বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠক অংশুমানের উপস্থিতিতেই হয়েছে। এখানেই থেমে থাকেননি অংশুমান। সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন তিনি। বলেন, জেটলির সঙ্গেও টুজি কাণ্ডে অভিযুক্ত শিল্পপতিদের ‘বন্ধুত্ব’ রয়েছে। এক দশক ধরে এই শিল্পপতিরা বিজেপিকে সাহায্য করে আসছেন। ললিত মোদীর সঙ্গেও জেটলি, সুষমারা সুসম্পর্ক বজায় রেখে এসেছেন। মোদীর আমন্ত্রণে ক্রিকেট ম্যাচও দেখেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করেও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীও যে সাহায্য পেয়েছেন, তারও উল্লেখ করেন অংশুমান।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির কৌশল নিয়ে এমনিতেই দলের আসন্ন জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তার মধ্যেই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই গডকড়ী যে ভাবে অংশুমানকে ঝাড়খণ্ডে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাতে লালকৃষ্ণ আডবাণী সুষমা স্বরাজরা ক্ষুব্ধ।
এমনকী অরুণ জেটলি অন্য অনেক বিষয়ে গডকড়ীর পাশে থাকলেও এই বিষয়ে তিনিও বিরোধিতা করছেন। এই নেতারা এখন বলছেন, অংশুমান আডবাণী-সুষমা-জেটলিদের আক্রমণ করলেও গডকড়ী কিংবা রাজনাথ সিংহের সম্পর্কে টুঁ শব্দটি করছেন না। দলের ভিতরে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কার ইশারায় অংশুমান প্রকাশ্যে এ ভাবে সরব হতে সাহস পাচ্ছেন? |
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা স্বীকার করেন, “বেছে বেছে কয়েক জন নেতাকে আক্রমণ করে অংশুমান কার্যত বিজেপির অন্দরের কোন্দলটিই বাড়িয়ে তুলছেন। কিন্তু সবের মধ্যে যে ভাবে পিএসির চেয়ারম্যান হিসাবে মুরলীমনোহর জোশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে দলের ভাবমূর্তিতে আঁচ ফেলবে।” কংগ্রেস নেতৃত্ব ঠিক এই বিষয়টিরই সুযোগ নিতে চাইছেন। গত কাল পর্যন্ত অংশুমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা সংযত ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু আজ জোশীর বিরুদ্ধে তাঁরা একযোগে তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, মণীশ তিওয়ারি, সঞ্জয় নিরুপমের মতো কংগ্রেসের একগুচ্ছ নেতা আজ সরব হয়ে বলেন, “অংশুমান প্রকাশ্যেই ঘোষণা করছেন, তিনি বিজেপির হয়ে এত বছর ধরে কাজ করে এসেছেন। বিজেপিকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। আর এখন পিএসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ করছেন, তার পর জোশীর এক মুহূর্তও সেই পদে থাকা উচিত নয়।” আজ বারাণসীতে কংগ্রেস সমর্থকরা জোশীর কুশপুতুল পোড়ান। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করা হয়। এর আগে টুজি কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে পিএসি-র বৈঠকে হট্টগোল হয়েছে। জোশীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও এনেছিল কংগ্রেস। এ বার অংশুমানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জোশীর বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র পেয়ে গেল তারা।
বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে অংশুমানকে আমলই দিতে চাইছেন না। তবে জোশীকে বাধ্য হয়ে সাংবাদিক বৈঠক করতে হয়। তিনি বলেন, “এই অভিযোগের ভিত্তি নেই।” কিন্তু ঘরোয়া স্তরে বিজেপি নেতারা মানছেন, কেন্দ্রের সঙ্কট ও একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ থেকে যখন বিজেপি ফসল ঘরে তুলতে পারত, তখন বিজেপির অন্দরে সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। |