|
|
|
|
|
কেয়ার করি না, তবু কেয়ার করি যে |
বোতামটা খোলা, শার্ট ঝুলছে। চুল এলোমেলো। তবুও সে ভীষণ মায়াবি, দামাল সুন্দর।
ও যে ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’! তার ম্যাজিকটা কী? চিরশ্রী মজুমদার |
প্রতি দিন পোশাকটা নতুনের মতো ঝলমল করবে। জামার ভাঁজ এতটুকু টোল খাবে না। এ ধারের একটা চুলও ও পারে যায়নি, ফ্রিঞ্জগুলো ভুরুর ঠিক আধ সেন্টিমিটার ওপরে শেষ। কোনও দিন তার কম বেশি নয়। সব মিলিয়ে পরিপাটি নিখুঁত বেশবাস। রো-জ আয়নায় ঠিক এই চেহারাটাই দেখতে চান? এই রে, এত নিয়ম মেনে হিসেব করে সাজেন নাকি? তা হলে এক দিন মনে হতে বাধ্য আয়নায় এটা কে রে? তাসের দেশের সেপাই দাঁড়িয়ে, নাকি বোরিং কোনও উচ্চমার্গীয় প্রাণী? সব থেকে চিন্তার বিষয়, রোবট রোবট লাগছে না তো? সত্যিই যদি শৌখিন মানুষ হন আর এই সব কথার একটাও মনে হয়, তিষ্ঠ ক্ষণকাল। একটু ভাবনাচিন্তার সময় হয়েছে এ বার। কিন্তু, এই অন্য উপায়টা কি? হয়তো খুঁজলে লুক চেঞ্জ বিষয়ক আরও অনেক সমাধান আছে। তবে, একটা তাৎক্ষণিক বুদ্ধি হল, অত্যন্ত সচেতন ভাবে, ওই সচেতন ভাবটাকেই, সাজ থেকে সরিয়ে ফেলা। ইংরেজিতে অনুবাদ করলে, কেয়ারফুলি কেয়ারলেস লুক।
প্রথমেই বলি, এই লুকটা আনা শক্ত। কেয়ারফুলি কেয়ারলেস থাকার মানে ময়লা, অবিন্যস্ত থাকা নয়। সকলে দেখছে চুলটা একটু উসকোখুসকো, শার্টের কোনাটা ট্রাউজার্স থেকে খানিকটা ঝুলছে, বেল্টটা হয়তো নেই-ই, ভুলে গেছেন (ভাবটা তেমন)। কিন্তু দেখতে মোটেও খারাপ লাগছে না। বরং ভীষণ স্টাইলিশ দেখাচ্ছে। এটা একটা ম্যাজিক। আপনি কিন্তু যথেষ্ট মন দিয়েই পোশাক বেছেছেন, যত্ন করেই চুলটাকে এলোমেলো রেখেছেন, অথচ কেউ ধরতেই পারছে না। যেন উদাস, বেখেয়ালি কবি-মন হাবভাব, বোহেমিয়ান জীবন। অনেকটা একঘেয়েমির ফাঁকে ফাঁকে এক এক টুকরো নিজস্বতা। এটা তো মানেন, আমরা মানুষ হিসাবে যেমনটা, ঠিক যে রকম ভাবে জীবনটা বাঁচি, চেহারায় বা পোশাকে সেটাই অনেকটা ফুটে ওঠে। তাই, আপনার ভেতর দুনিয়াটা ও রকম হালকা মেজাজের, আয়েসি, সৃষ্টিশীল ধরনের হলে, সাজে, চেহারায়, অ্যাটিটিউডে এই বিশেষ ধারটা আনা সহজ হয়ে যায়। মানে, আসলে আনতেই হয় না, এমনি এমনিই থাকে। যেমন ধরুন ‘মিশন ইমপসিবল ট’ুর টম ক্রুজ, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র শাহরুখ খান। ইদানীং রণবীর কপূর, শাহিদ কপূর, প্রিয়ঙ্কা চোপরাও প্রায়ই এই রকম থাকেন। আবার হতেই পারে, আপনি ও রকম স্বভাব ‘কেয়ারফ্রি’ নন। অথচ এ রকম মায়াবি সাজতে শখ জেগেছে। |
|
সে ইচ্ছে পূরণেরও উপায় আছে। তবে একটু সামলে চলতে হবে বই কী। নইলে ফাঙ্কি লুকের সঙ্গে এই লুকটা অনেকেই গুবলেট করে বসেন। আবার অনেককে দেখে মনে হয় জোর করে ও রকম কায়দা করার চেষ্টা করছেন। অথচ এই লুক-এর মূল কথাটাই হল চেষ্টা করে সাজা হয়েছে, একেবারেই যেন বোঝা না যায়। অনায়াস, স্বচ্ছন্দ থাকতেই হবে। নইলে পুরোটাই জলে। অভিষেক বচ্চন ভক্তরা কিছু মনে করবেন না কিন্তু।
গ্রীষ্ম আসন্ন। ‘ইচ্ছে করে উদাসীন’ সাজটা উপভোগ করতে হলে, সময়টা ভাল। কারণ? এত ক্ষণে তো বুঝেই গেছেন, আরাম শব্দটার সঙ্গে এই সাজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। মেয়েরা ডেনিম ট্রাউজার্স কেনার সময়ই অপেক্ষাকৃত নরম আর স্লিম ফিট দেখে কিনুন। তার সঙ্গে একটু ব্যাগি স্টাইলের ফুল-পাতা নকশা করা টপ পরবেন। সঙ্গে দু’তিনটে রঙিন মোটা ব্যাঙ্গলস। যত কম, তত ভাল। না না, তত সুন্দর। পুরনো ডেনিম কেটে শর্টস বানাতে পারেন, ধারগুলো খানিকটা সুতো ওঠা মতো দেখাবে। ব্যস, এই তো, যেটা চাইছিলেন, সেই ‘আমি তো নিজেকে নিয়ে অত ভাবিই না’ জাতীয় হাবভাব। শর্টস কিনতে গেলে ‘হাই ওয়েস্ট’ দেখে কিনুন। এ বার ছোট ঝুলের টপ দিয়ে পরুন। শর্টস-এর বদলে ডেনিমের মিনি স্কার্টও পরা যায়। বেল্ট আর জুতোটা ভাল বাছবেন কিন্তু। এ সব স্টাইল করলে ওগুলোয় ভীষণ চোখ যায়।
আর একটা উপায় হচ্ছে একটু হিপি ধরনের সাজ। তবে তাতেও খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি উগ্র না দেখায়। কারণ কেয়ারফ্রি মানে কিন্তু কেয়ার করি না একেবারেই নয়। যেমন ধরুন ভি কাট গলার ম্যাক্সি ড্রেস, তার সঙ্গে মানিয়ে একটা সরু বেল্ট পরলে কিন্তু খুব কমনীয় দেখায়। ভেস্টের সঙ্গে মেরুন বা মাটি রঙের জোয়াব বা আরব প্যান্টস এখন একটু কমন, তবে বন্ধুদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডা দেওয়ার পক্ষে লা-জবাব।
বিচ পার্টি, সান্ধ্য কোনও অনুষ্ঠান থাকলে ছোট্ট একটা সাদা পোশাক পরুন। সুন্দর ত্বক ছুঁয়ে থাকবে লিটল হোয়াইট ড্রেস বা এল এইচ ডি। এল এস ডি নামের একটি বস্তু আছে জানেন তো? তার প্রভাবের সঙ্গে কিন্তু এই পোশাক থেকে তৈরি মোহের তুলনা টানাই যায়। ফারাক এইটুকু, এ ক্ষেত্রে নেশা লাগে অন্যের চোখে। কথাটা হল, এর সঙ্গে বিন্দুমাত্র না সাজলেও, যে কোনও জমায়েতে আপনাকে সব থেকে বেশি উজ্জ্বল দেখাবেই।
বিশেষত ছেলেদের ক্ষেত্রে, খুব সহজ হল, চেহারা, সাজসজ্জায় এমন একটা আবেশ মাখানো, যাতে দেখলেই মনে হয় এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। স্বপ্নের রেশ চেহারা থেকে এখনও যেন মুছে যায়নি। এই ‘জাস্ট আউট অব দ্য বেড’ লুকটা পেতে সাদা চিনোস, সাদা শার্ট (কয়েকটা বোতাম খোলা অবস্থায়) যথেষ্ট। তবে সেরা বাজি হল ‘শ্যাগ হেয়ারস্টাইল’। সেটা কী? চোখ প্রায় ঢেকে দেওয়া, শাসন না মানা এক মাথা রেশমি চুল। যেন চিরুনির দরকারই নেই। একটু আঙুল চালালেই চলবে। হেয়ার ওয়াক্স নিয়ে একটু কেরামতিতেই এই হেয়ারস্টাইল করা সম্ভব। মেয়েদের ক্ষেত্রে একই ফল দেয় যত্নে লালিত একটা ‘মেসি বান’। রাতে একটা বিনুনি করে শুয়ে পড়ুন, সকালে ওই বিনুনি বাঁধা অবস্থায় স্নান করুন। চুল শুকোলেই ঢেউ খেলানো ‘টাসলড হেয়ার’ হাজির। মসৃণ স্যাটিন ফিতের মতো চুল, ঝরনার মতো উচ্ছল। বাঁধন না মেনে বেরিয়ে আসছে, বিরক্ত করছে। অন্যরা তাতেই মুগ্ধ। একেই তো বলে মায়া, আবেদন!
হুম্ম্ম্, এই ‘কেয়ার তো করি, শুধু তুমি বোঝো না’ বেশ একটু কঠিন ঠিকই। তবুও আদ্যোপান্ত গ্ল্যামার ঢালা, শৌখিন। সত্যিই অসাধারণ। তাই তো স্টাইল আইকনদের ফ্যাশন। এ সব শুনে পিছিয়ে যাবেন না কিন্তু। একটুও যদি ইচ্ছে করে, মনটাকে বরং তৈরি করুন। ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’ হতে। আপনাকে কেমন দেখাবে শেষমেষ সেই সিদ্ধান্তটা তো তারই। |
|
|
|
|
|