তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। আবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকাও। গত চার বছর ধরে দু’টি পদের ভাতা তুলে আসছিলেন মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের নীলিমা মাণ্ডি। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা হিসেবে নীলিমাদেবীর নেওয়া প্রায় ৬০ হাজার টাকা ফেরত চাইলেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার ভাতা তুলে নীলিমাদেবী ঠিক কাজ করেননি। তাই তাঁকে সহায়িকা হিসেবে নেওয়া ৫৯ হাজার ৭৪৪ টাকা এক মাসের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।”
নীলিমাদেবী পায়রাচালি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে দাতারডি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকা পদে রয়েছেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম টিকিটে তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। দল তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদে বসায়। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার ভাতাও নিতে থাকেন। বস্তুত ২০০৮-এর জুলাই মাস থেকে তিনি দু’টি পদের ভাতা নিয়ে আসছিলেন।
পায়রাচালির বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য শৈলেন মিশ্র জানান, ২৫ বছর ধরে মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য থাকার সুবাদে জানতাম একজন জনপ্রতিনিধি সরকারের দু’টি সংস্থা থেকে সান্মানিক ভাতা তুলতে পারেন না। অথচ, নীলিমাদেবী অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে দু’জায়গা থেকেই ভাতা তুলে আসছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “বাম সরকারের আমলে কয়েকবার এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। নতুন সরকার গঠন হওয়ার পরে এ ভাবে সরকারি টাকা অপচয় আটকানোর জন্য ফের প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাই। অবশেষে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন।” মানবাজারের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক সন্দীপ পরামানিক বলেন, “২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে নীলিমাদেবী অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা পদ থেকে ছুটিতে রয়েছেন। তার আগে সভাপতি থাকাকালীন অবস্থায় তিনি অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা হিসেবে ভাতা নিয়েছেন। সভাপতির পদে থেকে অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা হিসেবে তিনি কত টাকা ভাতা নিয়েছেন তা জেলাশাসকের দফতর থেকে জানতে চাওয়া হয়। তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে।” শিশু বিকাশ প্রকল্পের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকারা আগে মাসে ১৭৫০ টাকা ভাতা পেতেন। এক বছর আগে তা বেড়ে ২১০০ টাকা হয়। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের ওই নির্দেশ এসেছে। সভাপতিও তা পেয়েছেন।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নীলিমা মাণ্ডি বলেন, “এ ধরনের নিয়মের কথা আগে জানতাম না। জানার পরেই সহায়িকা পদ থেকে ছুটি নিয়েছি। আমার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। প্রায় ৬০ হাজার টাকা কী ভাবে ফেরত দেব জানি না।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ চৌধুরী বলেন, “সরকারি নিয়ম মানতে সবাই বাধ্য। নীলিমাদেবীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব।” দল থেকে তাঁকে আগে কেন সতর্ক করা হয়নি, এর সদুত্তর প্রদীপবাবু দিতে পারেননি। |