দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান
কাল সূচনা কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হচ্ছে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কারের কাজ। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী সংস্কার প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে কাল, শুক্রবার ভগবানপুরের কাঁটাখালিতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রায় সাড়ে ছ’শো কোটি টাকার এই নদী সংস্কার প্রকল্প ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছেন দুই মেদিনীপুরের বন্যাপ্রবণ সবং, পটাশপুর, ময়না, পিংলা, ভগবানপুর, নারায়ণগড়, খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। দুই মেদিনীপুরের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে এই নদী সংস্কার-কাজে উদ্যোগী হয়েছিলেন সবংয়ের বিধায়ক তথা বর্তমানে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। নদী সংস্কার-প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকার ৭৫ শতাংশ ও রাজ্য সরকার ২৫ শতাংশ ব্যয়-ভার বহন করবে। প্রথম পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। রাজ্য সরকারও সেই অনুপাতে অর্থ বরাদ্দ করবে।
চাষজমি নয়, নদীখাত। পটাশপুরের সেলমাবাদে কেলেঘাইয়ের হাল। ফাইল চিত্র
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার প্রকল্পের কাজের জন্য ইতিমধ্যে সবংয়ে চালু হয়েছে সেচ দফতরের নতুন একটি এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র অফিস (কেকেবি ডিভিশন)। পরিকল্পনা অনুযায়ী কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদীর পলি তোলার কাজ হবে। নদীবাঁধের ভিতরে যে-সব রায়তি জমি রয়েছে, তা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এই অধিগ্রহণে বাধা আসবে না বলেই আশা সেচ দফতরের। সরকারি নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প রূপায়ণে পটাশপুর ও ময়নায় প্রশাসন, সেচ দফতর ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কেরাও উপস্থিত ছিলেন। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেলেঘাই, বাগুই, চণ্ডীয়া ও কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কেলেঘাই নদীর ঢেউভাঙা থেকে লাঙলকাটা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে সংস্কারের কাজ হবে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী-সংস্কার প্রকল্পে কেলেঘাই নদীর ৬৩ কিলোমিটার, কপালেশ্বরীর ২১ কিলোমিটার, বাগুই নদীর ২৪ কিলোমিটার, চণ্ডীয়ার ২৪ কিলোমিটার ও দেউলি নদীর ৯ কিলোমিটার মিলিয়ে মোট ১৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের সংস্কার-পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা।
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার প্রকল্পে নদীর স্রোতে জমা পলি ও চর কেটে মাটি তোলার কাজ করা হবে। এ ছাড়া, প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত নদীগুলির সঙ্গে যুক্ত মোট ২০টি খালের প্রায় ৯০.৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশেও সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ও খালের উপর পাকা সেতু ও স্লুইস নির্মাণ বা সংস্কারের কাজও রয়েছে এই প্রকল্পের পরিকল্পনায়। তিন বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০১৪-র মধ্যে কাজ শেষের লক্ষ্য নির্দিষ্ট হয়েছে। নদী সংস্কার-কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করতে ইতিমধ্যেই সেচ দফতর ও ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের যৌথ দল জরিপের কাজ শেষ করেছে। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার দিগন্ত মাইতি জানান, “প্রথম পর্যায়ে নদী সংস্কারের কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। শুক্রবার প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার প্রকল্প ঘিরে রাজনৈতিক ‘সুবিধা’ পাওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব মরিয়া। পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল-শিবিরের দুই প্রধান সেনাপতি শিশির অধিকারী ও শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যে পটাশপুর ও ময়নায় প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রকল্প রূপায়ণে তাঁদের উদ্যোগের ‘বাতার্’ দিয়েছেন। এমনকী এই নদী সংস্কার প্রকল্পে কেলেঘাই নদীর সঙ্গে হলদি নদীর ঢেউভাঙা থেকে নরঘাট মাতঙ্গিনী সেতু পর্যন্ত অংশ সংস্কারও যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। দীর্ঘ দিন এই প্রকল্পের রূপায়ণ নিয়ে লেগে-পড়ে থেকে কংগ্রেস নেতা তথা সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও এখন নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করার লক্ষ্যের কাছাকাছি। ফলে, শুক্রবার একই মঞ্চে মমতা-প্রণব-মানসের উপস্থিতিতে প্রকল্পের উদ্বোধন ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। শুক্রবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই মেদিনীপুরের বিপুল-সংখ্যক মানুষ সামিল হবেন বলেই আশা প্রশাসনিক কর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.