সম্পাদকীয় ১...
বিধির বিধেয়তা
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও তাহার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষোভ গত কয়েক দিন ধরিয়া যে নাটক সৃষ্টি করিয়াছিল, আপাতত তাহার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে খুরশিদ অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য কোটা সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়া বিতর্ক রচনা করেন। গত পাঁচ বছর ধরিয়া এ ব্যাপারে খুরশিদ, তাঁহার দল কংগ্রেস কিংবা সেই দলের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করেন নাই। হঠাৎ প্রায় কুড়ি শতাংশ মুসলিম ভোটারের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ভোট আসন্ন হইতেই যদি তাঁহাদের অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ করার কথা মনে পড়ে, তবে সেটা যে স্পষ্টতই সংখ্যালঘু ভোটকে নিজের অনুকূলে প্রভাবিত করার অশোভন প্রয়াস, তাহাতে সংশয় নাই। নিজে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী হইয়া সলমন খুরশিদের মতো এক জন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞের এমন আচরণ করা উচিত হয় নাই। উপরন্তু তিনি যে নাটক করিয়াছেন, ‘কমিশন তাঁহাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলাইলেও তিনি মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের দাবি হইতে সরিবেন না’ ইত্যাদি অবান্তর প্রগল্ভতায় ভোটের বাজার গরম করিতে চাহিয়াছেন, সেটাও তাঁহার মর্যাদা বৃদ্ধি করে নাই।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের যে প্রতিক্রিয়া এতদুপলক্ষে প্রত্যক্ষ করা গেল, তাহাও কি খুব সঙ্গত? সলমন খুরশিদ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করিয়া থাকেন, তবে সে জন্য তাঁহাকে তিরস্কার ও সতর্ক করা যাইতেই পারে। কিন্তু তাঁহার বিরুদ্ধে একেবারে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়া নালিশ করা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি। যদি খুরশিদের মন্তব্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হইয়া দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হইত, শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হইয়া আইনের শাসন বিপন্ন হইত, তাহা হইলেও কথা ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল তাঁহার প্রতিশ্রুতিতে আপত্তি জানাইলেও উত্তরপ্রদেশের জনমানসে খুরশিদের বক্তব্যের কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় নাই। তাই তাঁহার সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন ও তাহার মুখ্য আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া কিঞ্চিৎ বিষম ঠেকিতে পারে। মনে হইতে পারে, কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার প্রশ্নে অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা দেখাইতেছে। এই অতি-স্পর্শকাতরতা অস্বস্তিকর, কেননা ইহা প্রায়শ অতি-সক্রিয়তারও জন্ম দিতে পারে।
নির্বাচনী আচরণবিধি নিশ্চয় একটি অবশ্যপালনীয় বিধি। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষিত হইয়া গেলেই এই বিধি চালু হইয়া যায়। ইহা যে সকলের মানিয়া চলা উচিত, কেহই তাহা অস্বীকার করিবেন না। যে-সব রাজনীতিক কেন্দ্রে বা রাজ্যে দায়িত্বশীল মন্ত্রক সামলান, তাঁহাদের কাছে কমিশন প্রত্যাশা করিতেই পারে যে, বিধি পালনে তাঁহারা অন্যদের তুলনায় অধিকতর নিষ্ঠাবান হইবেন। কিন্তু প্রায়শ নির্বাচনী বিধি চালু হইয়া গেলে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নীতি ঘোষণা বা প্রণয়নও স্থগিত রাখিতে হয়, মাঝপথে বন্ধ পড়িয়া থাকে বহু জরুরি, সময়-বাঁধা কর্মসূচি। এই সব ক্ষেত্রে বোধহয় কমিশনের আরও নমনীয় হওয়ার অবকাশ আছে। নির্বাচন যেমন একটি অবশ্যপালনীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপ্রণালীও তেমনই একটি নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক কৃত্য, নির্বাচন ঘোষিত হইয়াছে বলিয়াই যাহা শিকেয় তুলিয়া রাখা যায় না। বিধির খুঁটিনাটি লইয়া কচকচি যদি গণতন্ত্রের মূল ভাবনা, রাষ্ট্রের কল্যাণকামী রূপ ও প্রতিনিধিত্বমূলক পরিষদীয় শাসনপ্রণালীর সঙ্গেই সংঘাতে অবতীর্ণ হয়, তবে সেটা অভিপ্রেত নয়। কমিশনের মনে রাখা উচিত, আচরণবিধির কোনও আইনগত স্বীকৃতি নাই। ভোটের আগে সব দল মিলিয়া কমিশনের সহিত বৈঠকে এই বিধি মানিয়া চলার আশ্বাস দেয় মাত্র। বিধি-লঙ্ঘন সেই আশ্বাসভঙ্গের নামান্তর হইতে পারে। কিন্তু তাহা বেআইনি কিছু নয়। আর দলীয় নীতি বা কর্মসূচির পুনরুচ্চারণকে বিধিভঙ্গ বলিয়া শনাক্ত করাও যায় না। সর্বোপরি, অতি-সক্রিয়তা কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কাম্য নয়। কী বিচারবিভাগ, কী নির্বাচন কমিশন, সকলেরই উচিত আপন এক্তিয়ারের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.